আঠারো হাজার আশরাফুল মাখলুকাত এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। আর সব চাইতে নিকৃষ্ট ধরা হয় স্থানভেদে কুকুর/শুয়োর ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো এই সমস্ত নিকৃষ্ট প্রাণীর হিংস্রতায় বছরে কয়জন “আশরাফুল মাখলুকাত” নির্যাতিত হয়?
কোন মানুষ যদি এমন হয় যে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাখলুক হওয়ার গুণ নেই, পশুর মতো নির্বোধ, তাহলে পশুর উপর তার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। এদের ব্যাপারে কোরআন শরীফের মধ্যে এসেছে,
لقد ذرانا لجهنم كثيرا من الجن والانس لهم قلوب لا يفقهون بها ولهم اعين لايبصرون بها ولهم اذان لا يسمعون بها اولئك كالانعام بل هم اضل اولئك هم الغفلون.
“আমি অবশ্যই বহু মানুষ ও জিনকে দোযখের জন্যে নির্ধারিত করেছি; কারণ তাদের অন্তর আছে, তা দ্বারা কিছুই বুঝে না এবং তাদের চোখ আছে, তা দ্বারা কিছুই দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা কিছুই শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তারা সেগুলোর চেয়েও অধিক বিপথগামী। তারাই পরিপূর্ণ গাফেল।”
মানুষ ই মানুষের সব চেয়ে বড় শত্রু, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। মানুষ যতটা হিংস্র হতে পারে তা কোন পশুর সাধ্য নাই। মানুষ যতটা নিচে নামতে পারে তা কোন পশুর পক্ষেও সম্ভব নয়। কেন বলছি এসব কথা? তাকিয়ে দেখুন আপনার চারপাশেই।
মনে আছে বিশ্বজিৎ এর কথা? দিনে দুপুরে দাঁ, চাঁপাটি দিয়ে খুঁচিয়ে কেটে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা সেই যুবকের কথা এত দ্রুত ভুলে যাওয়ার তো কথা না। মানুষ কতটা হিংস্র আর নিকৃষ্ট হলে এ কাজ করতে পারে?
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ধর্ষণের হাজারও ঘটনা। অথচ একটুও মাথায় আসেনা যে নিজের ঘরেই অই মেয়েটার বয়েসি একটা বোন আছে কিংবা না থাকুক একদিন তো অই ছেলেটা বিয়ে করবে। তখন তার বউটা যে অন্য কারো লালসার শিকার হবে না তা কে বলতে পারে!
বলা হয় সবার মাঝেই একটা পশু ঘুমিয়ে আছে। মানুষের এই পশুবৃত্তি মানুষকে কোথায় টেনে নামিয়ে নিতে পারে তার সহস্র উদাহরণ আমাদের চারিপাশেই ছড়িয়ে আছে। একটু খেয়াল করে দেখুন এই সকল মানুষরূপী পশুগুলোই কারো ভাই, কারো বাবা।
তবে কি পশুত্বের এই মিছিলে শুধুই পুরুষদের পদচারনা? না, এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। বরং এই মিছিলে সগৌরবে সমান অংশিদারিত্ত নিয়ে নারীও সমান তালে এগিয়ে চলেছে।
বাংলার প্রতিটা পরিবারে জত পারিবারিক কলহ তার অধিকাংশ ঘটনাই বউ-শাশুরি-ননদ কেন্দ্রিক। এদের কাউকে প্রশ্ন করলে জবাব পাবেন- “সহিষ্ণুতা! সে আবার কি!!” পারিবারিক নির্যাতনের চিত্র বাংলাদেশে যে কতটা ভয়াবহ তা চিন্তাও করতে পারবেন না।
গতকাল একটা নিউজ দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বিয়ের চারদিনের মাথায় শশুর বাড়িতে উঠতেই শাশুড়ি, ননদ, দেবর, ভগ্নীপতির নির্মম প্রহারে স্বামীর সামনেই প্রান হারালেন নববধূ কলেজ ছাত্রী মনিরা আক্তার (২০)। ঘটনাস্থল খিলখেত। হতভাগা স্বামী নাসির চেষ্টা করেও নিজের মা, ভাই-বোনদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি মনিরা কে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে পুলিশ স্বামী নাসির এবং তার চাচা কে গ্রেফতার করতে পেরেছে। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
খবরের লিঙ্ক
এভাবে আর কত মনিরার প্রান যাবে? আর কত বনি আদম অপরের হিংস্রতার বলি হবে? কবে দেখব ত্বরিত সিধান্তে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি?
ভাবছেন বিশ্বজিতের সাথে মনিরার ঘটনার সংশ্লিষ্টতা কোথায়? দুটোই দিনে দুপুরে সঙ্ঘটিত জঘন্য হিংস্র অপরাধ। এইভাবে দা/চাপাটি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা অথবা নববধূকে ডেকে এনে পিটিয়ে মেরে ফেলার মধ্যে কোনও তফাত আছে?
এই সকল মনুষ্যত্বহীন মানুষরূপী পশুদের হাতে আমাদের পরিবার-পরিজন আজ জিম্মি। সব সময় উৎকণ্ঠায় কাটাতে হয়। আজ যাকে ভাল মনে করে বিশ্বাস করছি হয়ত কালই তার নির্মমতার শিকার হবে কেও। শেয়াল কুকুর ও এখন মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। আমাদের অধঃপতন, জানিনা কোথায় এর শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৭