somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার কাছে চিঠি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় আব্বু,
চলে গেল আরও একটি দিন, সেইসাথে আরও একটি বছর। কত বছর হল আব্বু? চার কিংবা পাঁচ? এমনতো হওয়ার কথা ছিল না। তুমি তো এতটা বছর দূরে থাকবে বলে চলে যাওনি। তাহলে? এক এক করে আজ পনেরটি বছর চলে গেল। তুমি কি ভেবেছ সময় আস্তে আস্তে সব মুছে দিবে? Time is the best healer কথা টি আমার জন্যে নয় বাবা। এখনও প্রায় রাতেই ঘুমের ঘোরে ঢুকরে কেঁদে উঠি। কাঁদতে কাঁদতেই কখন যেন আবার ঘুমিয়ে পরি। কই তখন তো তুমি সেই ছোট্ট বেলার মত বুকের মধ্যে পেঁচিয়ে “কি হয়েছে আব্বু” বলে আর জিজ্ঞেস কর না?
জানো আব্বু মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখি তুমি খুব অসুস্থ, তোমার আশেপাশে অনেক মানুষ, সেই ঘুমের মাঝেই ক্ষীণ একটু আশা জেগে উঠে হয়ত এ যাত্রায় তুমি সেরে উঠবে। হয়ত আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। ঘুম ভাঙলেই মনে হয়- এইতো একটু আগেই তো তুমি ছিলে! কিন্তু তোমাকে আর ফিরে পাওয়া হয়না।
কেন যেন তোমার উপর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। তুমি খুব স্বার্থপর ছিলে। তা না হলে তুমি আমাদের ছেড়ে এতটা দূরে এত বছর কি করে থাকলে? তোমার ব্যবসা, পুরো পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, সমস্ত ভাইবোনদের দেখাশোনার দায়িত্ব, ওদের যথাযোগ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার অলঙ্ঘনীয় কর্তব্যবোধ তোমাকে ভাবতে দেয়নি দ্বিতীয় কোনও কথা। কিন্তু আমরা এখন কোথায় দাড়িয়ে আছি দেখেছ একবার? কখনও ভেবেছ তুমি পুরো পরিবারের জন্যে করতে গিয়ে আমাদের থেকে দূরে থেকেছো কারন তাদের জন্যে তুমি ছিলে কিন্তু প্রতিনিয়ত যেই বাবা কে আমরা মিস করতাম তাকে আমরা কোথায় পাবো? কেও কি সেই অভাব পুরন করতে পারে? নাকি সেটা কখনও সম্ভব? জানি তোমার কাছে কোনও জবাব নেই। কর্তব্যবোধ তোমার কাছে পিতৃত্বের কাছে কিছুনা। তুমি ভেবেছো তুমি তোমার ভাইদের জন্যে করেছো অতএব তোমার হাসান এর জন্যে ওরা তো আছেই। ভুল বাবা। ভুল। সেই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এখন আমাদেরকে।
অল্প কয়েকটা দিন মাত্র পেয়েছি তোমাকে। বছরের পর বছর তুমি সেই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছ। তোমার সাথে বসে কখনও গল্প করা হয়নি। বলা হয়নি আমি সেদিন বঁড়শীতে কতগুলা মাছ ধরছিলাম। বলা হয়নি গুলতি দিয়ে গাছের সেই উচু ডালের উপরে বসে থাকা টিয়ে পাখিটাকে আমি প্রায় ফেলেই দিয়েছিলাম, অল্পের জন্যে ডানায় লেগে পাখিটা পালিয়ে গেল, যেই আম গাছের উচু ডালে কেও উঠতে সাহস পেত না সেখান থেকে কি করে আমি পাকা আমটি পেরে আনতাম, স্কুল থেকে এসেই সারাদিন পেয়ারা গেছে পরে থাকার গল্পও তোমার সাথে করা হয়নি। কিংবা কখনও শোনা হয়নি তোমার গল্পগুলাও। তোমার বীরোচিত মিশন গুলোর কথা। যেগুলো আজও লোকমুখে শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠে। নিজেকে মনে হয় গর্বিত দেশের গর্বিত সন্তান। কিন্তু তোমার মুখে শোনা হল না।
আজ এতোটা বছর পরেও তোমাকে একচুল ভুলিনি আব্বু। তোমার সেই শেষ দিনগুলোর কথা। এখনও ছবির মত স্পষ্ট। তোমার হাঁটতে কষ্ট হত, আমার সেই ছোট্ট কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে। নিজেকে তখন মনে হত দুনিয়ার সবচাইতে সুখি মানুষ। আমার বাবা আমার সাথে হাঁটছে! এর চাইতে খুশির আর কি থাকতে পারে! কথা বলতে কষ্ট হত তারপরেও আস্তে আস্তে কত কিছুই বলতে চাইতে। তোমার সেই ব্যাকুলতা, অপরিসীম আদর....মনে হচ্ছিলো সারাজীবন যা পাইনি তা বুঝি এক নিমিষেই পেয়ে যাবো। কিন্তু ............হল না আব্বু। মন ভরে তোমার আদর পাওয়ার আগেই চলে গেলে। চলে গেল আরো একটি ৩রা এপ্রিল। ভাল থেক আব্বু। যেখানেই থাক ভাল থেক।

ইতি
তোমার হাসান।



সতর্কতাঃ লিখাটা আমি কাউকে পড়ার জন্যে বলছিনা বিরক্ত হবেন সেটা জেনেই। কথাগুলো বলার মত আর কাউকে না পাওয়াতে এক ছোট বোনের খোঁচাখুঁচির কারনে ব্লগের সাথেই নিঃসঙ্কোচে বলে ফেললাম অনেক কিছুই। বিরক্ত হলে নিজ গুনে ক্ষমা করবেন আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×