ফিলিপ কোটলারের কূটনৈতিক সব দুর্বোধ্য সংজ্ঞার কারনে মার্কেটিং বিষয়টা বরাবরি আমার কাছে একটু ‘তিতা’ স্বাদের ! মার্কেটিং পরীক্ষা ছিল আজ । তবে এবার ২৬ দিন সময় পেয়েছিলাম এই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। ফিলিপ কোটলার সাহেবকে মোকাবেলা করার জন্য গ্রহন করেছিলাম মহাকরিল্পনা । আমার সেই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের রুপগুলো দেখে নিতে পারেন একটু কষ্ট করে...
প্রাথমিক পরিকল্পনাঃ হাতে সময় ২৬ দিন । অধ্যায় ১৩ টা (টীকা সহ) । এর মানে প্রতি ২ দিনে একটা করে অধ্যায় শেষ করতে হবে । প্রতিদিন দুই-আড়াই ঘন্টা পড়লেই চলবে । মনে মনে ঠিক করলাম ৮০ এর উপরে মার্কস রাখতেই হবে... যে করেই হোক ।
বাস্তবে যা ঘটলোঃ অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম টানা ২৬ দিন পড়ালেখা করলে মানসিক ভাবে অনেক চাপ পরবে । তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পড়াশোনা শুরু করার আগে ‘পরীক্ষা কালীন অবকাশ’ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিলাম । পকেটে টাকা মোটেও নেই , তাই অবকাশযাপন কেন্দ্র আপাতত নিজের ঘর !! প্রথম দিকে এই অবকাশের সময় ৩ দিন ধার্য থাকলেও পরে নিজের মনের জোরাজুরিতে সেটা ৫ দিন পর্যন্ত বারিয়ে নিলাম । অবকাশ শেষ হওয়ার পর একদিন সম্পূর্ণরূপে বেডরেস্টও নিলাম । চলে গেল ৬ টা মূল্যবান দিন...
-------------------------------------------------------------------
পুনঃপরিকল্পনাঃ সময় বাকী আছে ২০ দিন । প্রতিদিন ৩ ঘন্টা পড়তে হবে। ৮০ তুলতে না পারলেও ৭০-৭৫ মার্কস তো তুলতে পারব ? সেইটাই বা খারাপ কি ??
বাস্তবে যা ঘটলোঃ বর্তমানে আর্থিক অবস্থা দারিদ্র সীমার অনেক নিচে থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করব না । তবে বিশ্ব জুরে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও হটাৎ করেই কিছু টাকা হাতে চলে এল ।
বহির্বিশ্বের সাথে নতুন করে যোগাযোগ পুনস্থাপনের স্বার্থে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করে ফেললাম । হাতের কাছে ইন্টারনেট থাকলে কি আর কম্পিউটার থেকে উঠতে ইচ্ছা করে ? ফেসবুকে টুকটাক গল্প স্বল্প , দু একটা ব্লগ লেখা , কমেন্টের উত্তর দেওয়া , সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আলোচিতো ভিডিও গুলো দেখা , কোন হট টপিক নিয়ে লেখা নোটে কমেন্ট করে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা না । চলে গেল আরও ৫ টা দিন । ভাবলাম, অনেক হয়েছে... এবার পরীক্ষার দিকে মনযোগী হতে হবে...
-------------------------------------------------------------------
চূড়ান্ত পরিকল্পনাঃ ফাইজলামি করে অনেক সময় নস্ট করেছি। হাতে এখনো সময় আছে ১৪-১৫ দিন । ভাল রেজাল্ট করতে হলে এই মুহূর্তে দৈনিক ৩/৪ ঘন্টা পড়ার বিকল্প নেই । ৭০-৭৫ না উঠুক ৬০ এর উপরে মার্কস থাকলেই তো ফার্স্ট ক্লাস । কয়জনে পায় ফার্স্ট ক্লাসের মার্ক ??
বাস্তবে যা ঘটলোঃ দেখতে দেখতে ঈদ চলে এল । কোরবানির ঈদ । এবার ঈদে গরুর দাম কেমন , কোন হাটে বেশি ভাল গরু পাওয়া যাচ্ছে । প্রতিবেশীদের কে কত টাকা দিয়ে গরু কিনেছে , সেই গরুর সাইজ কেমন , চোখ কেমন , হাটে কেমন , ডাকে কেমন । এই কয়টা দিনে এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । যাই হোক আমি সেই দায়িত্ব বেশ ভাল ভাবেই পালন করলাম ।
ঈদ সংখ্যার রস+আলোতে একটা লেখাও এল । শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভ কামনা ও সমালোচকদের সমালোচনার জবাব দিতে দিতেও সময়টা পার হয়ে গেল (সমালোচকদের সংখ্যাই অবশ্য বেশি ছিল) । এত কিছুর মধ্যে পড়ালেখা করার সময় বের করা কঠিন । তবে ... ভুলে গেলে চলবে না পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই... ভাল রেজাল্ট আমাকে করতেই হবে ।
--------------------------------------------------------------------
সংশোধিত পরিকল্পনাঃ হাতে ১০ দিনের মত সময় আছে । ও... সামনে তো আবার ঈদ । এর মধ্যে পড়ালেখা করাটা কি ঠিক হবে ? মনে হয় ঠিক হবেনা । এর চেয়ে ঈদের পড়ে ৬-৭ দিন সময় পাওয়া যাবে । প্রতিদিন ৫ ঘন্টা করে পড়লে এই সময়টাই যথেষ্ট । কোন ভাবে ৬০ মার্কস তুলতে পারলেই আমার হয় !
বাস্তবে যা ঘটলোঃ ব্যাপক উতসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ঈদ উদযাপন করলাম এবং পরবর্তী সময়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও টেলিভিশনের বিরক্তিকর সব অনুস্থান দেখে দেখে ব্যাস্ত কয়েকটা দিন পার করলাম । তবে এত কিছুর মাঝে আমি ভুলে যাইনি পড়ালেখার কোন বিকল্প...
--------------------------------------------------------------------
পুনঃসংশোধিত পরিকল্পনাঃ হাতে সময় কম । মাত্র ৪ দিন । প্রতিদিন ৬ ঘন্টা পড়তেই হবে । এইগুলা ব্যাপারই না... ভাল ফলাফলের জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হয় । সবচেয়ে বড় কথা ৫০ এর উপরে মার্কস রাখাটা আবশ্যকর্তব্য ।
বাস্তবে যা ঘটলোঃ রসালো তে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ এসেছে । ফেসবুকে সেই আনন্দ প্রকাশ করতে হল । পাঠকদের শুভ কামনা গ্রহন করতে হল । যারা এখনো বিষয়টা জানেনা তাদেরকে বিষয়টা জানাতে হল (চান্সে একটু আপনাদেরও জানিয়ে দিলাম আরকি ) । এক কথায় ব্যাস্ত সময় । এত কিছুর ধকল কি একদিনে কাটিয়ে উঠা যায় ? তাই পরের দিন বিশ্রাম নিলাম । সামনে পরীক্ষা , মানসিক ও শারীরিকভাবে ভাবে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে হবে । ভুলে গেলে চলবে না পড়ালেখার কোন বিকল্প...
-------------------------------------------------------------------
চূড়ান্ত সংশোধিত পরিকল্পনাঃ ইয়াল্লা ! হাতে সময় ২ দিন , এখনও বই হাতেই নেই নাই !! েই মুহূর্তে দিনে ৮ ঘন্টা পড়া ছাড়া কোন উপায় নাই । সকালে ২ ঘণ্টা...দুপুরে ২ ঘন্টা ...আর সন্ধ্যার পড়ে ৪ ঘন্ট...। ৪৫ এর উপরে মার্কস না পেলে ইজ্জত থাকবে ???
বাস্তবে যা ঘটলোঃ ইদানীং শীতের খুব আমেজ । সকাল বেলা এই আরামের ঘুম ভাঙ্গানোটা খুব কস্টের । একটু বেলা করে উঠার পর আবার দুপুরের দিকে পড়ালেখা করতে ভাল লাগে না । তবে সন্ধ্যার পড়ে ঠিকি প্রথমবারের মত বই খুলে ১ টা অধ্যায় পড়ে শেষ করে ফেললাম । লক্ষ্য করলাম বাসার সবাই আমার দিকে একটু অন্যরকম করে তাকাচ্ছে । একটু একটু লজ্জা লাগছিল অবশ্য ! প্রচণ্ড ঘুমের কারনে বেশিক্ষন পড়তে পারলাম না...
-------------------------------------------------------------------
পুনঃসংশোধিত চূড়ান্ত মহা-পরিকল্পনাঃ আজকে শেষ দিন । আজকে সারাদিন পড়তে হবে । একবারো টেলিভিশন ছাড়ব না । কম্পিউটার ও না... আজকে শুধুই পড়ালেখা। যে ভাবেই হোক ৪০ এর উপরে মার্কস রাখতে হবে ... যে ভাবেই হোক ।
বাস্তবে যা ঘটলোঃ আজকেও ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেল । দুপুরে ডিসকভারিতে একটা ভুতের প্রোগ্রাম না দেখে পারলাম না । একটু ফেসবুকে ঢুকে সবার খবর নিলাম । দু তিনটা ব্লগ পরলাম আর বিকালের দিকে একটু বিশ্রাম নিলাম । কালকে আবার পরীক্ষা তো... অনেক পড়ালেখা করতে হবে ।
আর মাথার মধ্যে ঘুরছিল রবি ঠাকুরের লেখা দু লাইন -
‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি
সর্বনাশের আশায়’ !!!
--------------------------------------------------------------------
পরীক্ষা দেওয়ার পরের অংশ
হুম ! পরীক্ষা ভাল হয়েছে ( যদিও বেশির ভাগ প্রশ্নগুলো কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছিল) ।এতদিনের পরিশ্রম সম্পূর্ণ সার্থক । এই কয়দিনে শরীরে উপর দিয়ে অনেক ধকল গেল , এবার সময় একটা দীর্ঘ বিশ্রামের...