somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মান্ধতা ও বাঙ্গালী মুসলমান মনস্তত্ত্ব....

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে মুসলমানরা জন্মের পর থেকেই ধর্মান্ধতা আয়ত্ব করতে শেখে। কেউ যদি বলে বাংলাদেশের বেশীরভাগ মুসলমান উদার মুসলিম সামাজিক সাংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে সে কথার সাথে আমি মোটেও একমত পোষন করবো না। এদেশের মুসলমানরা অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি কতটা অসহিষ্ণু তা আমি আমার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার দেখেছি আর বড় হয়ে একে নিকৃষ্ট বর্ণবাদী ধর্মান্ধ এক সমাজ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিনি। অন্তত আমি ছেলেবেলা যে সমাজে বেড়ে উঠেছি সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে আমি এমন ধারনাই পোষন করি। বর্ণবাদী সমাজ একারনেই বললাম যে বর্ণবাদ যেমন নিজ বর্ণ বা জাত ছাড়া অন্য কাউকে পূর্নাঙ্গ মানুষ বলে মনে না করে কেবল ঘৃনা পোষন করে, এদেশের মুসলমানদের বড় একটা অংশই অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃনা পোষন করে।
আমি ছেলেবেলাতেই দেখেছি এই মুসলমান সমাজ কিভাবে ভীন্ন ধর্মাবলম্বীকে জোর-জবস্তি করে মুসলমান বানাতে চায়। এসমাজ প্রকাশ্যে অমুসলিমদের বিষদগার করে। যেকোন স্থানেই তারা ভীন্ন ধর্মাবলম্বীদের মালাউন বলে গালমন্দ করতে দ্বিধাবোধ করে না। এমনকি সেখানে ভীন্ন ধর্মাবলম্বী কোন মানুষ আছে বুঝতে পারার পরও এই মুসলমানরা লজ্জিত হয় না, বরং ভীন্ন ধর্মাবলম্বীরা বিপথে আছে বলে তাকে ধর্মন্তরিত হবার পারমর্শ দেয়, আর তারা নিজ ধর্মকে সমর্থনমূলক কথা বললে তাদের পেতে হয় ভৎসনা। মুসলমান ভীন্ন অন্য সবার ধর্মকেই এখানে অবমাননা করা হয়। এখানে ভীন্ন ধর্মাবলম্বী সবাই হিন্দু হিসেবে পরিগনিত হয়। একজন বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট্রান বা আদিবাসী হলেও সাধারন সমাজ মনস্বত্ত্ব হল ‘সে হিন্দুই’। এমনকি একজন নাস্তিকও ওই সমাজে হিন্দু হিসেবেই পরিগনিত। মানুষ কতটা গন্ড মূর্খ এমনটা ভাবতে পারে তা বলাই বাহুল্য!

যাহোক, এসব আমি জেনেছি আমার জীবন থেকে, মানে দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে জেনেছি। এখানে হিন্দু ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ শৈশবের প্রারম্ভ থেকে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত। হিন্দু বিদ্বেষ এ দেশের মুসলিম সমাজে একজন শিশু তার সামাজিকিকরন প্রকৃয়ার মধ্য থেকেই শেখে। আমি শৈশবে আমার খেলার সাথীদের কাছ থেকে শিখেছিলাম লাল রংয়ের পিপড়াঁ হিন্দু তাই কামড় দেয় এবং এর কামড়ে বিষ থাকে! আমি আমার পারিপার্শ্বিকতা থেকে শিখেছিলাম হিন্দুরা মারা গেলে ভুত হয় কেননা হিন্দুরা খারাপ মানুষ! আমার সব সহপাঠিই মনে করত ভুতেরা হিন্দু! সে সমাজে শিশুদের শেখানো হয়েছিল কবরস্থান পবিত্র জায়গা আর শ্বশান অপবিত্র জায়গা, তাই শ্বশানে ভুতের আঁখড়া! তাই শশ্বানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় সুরা পড়তে পড়তে যেতে হত সবাইকে পাছে যদি আবার ভুতে ধরে! আমার ছেলে বেলায় মক্তবে গিয়ে শিখেছিলাম মুসলমান মারা গেলে সাথে সাথে বলতে হবে ‘ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন’ (মৃত ব্যক্তি জান্নাতবাসী হোক) কিন্তু হিন্দু মরলে বলতে হবে ‘ফী নারি জাহান্নাম খালিদীনা ফীহা’ (মৃত ব্যাক্তি চিরকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়ুক)! আমার কৈশোরে যখন যৌনতার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছিলাম তখন আমার এক সহপাঠির কাছ থেকে শুনেছিলাম যে কুমারী হিন্দু নারীর সাথে যৌন ক্রিয়া করলে নাকি বাতের ব্যাথা ভাল হয়ে যায়!

এ মুসলমান সমাজে একটি শিশু এসব শুনতে শুনতেই হিন্দুদের শত্রু হিসেবে নিজের অজান্তে দাঁড় করায়। ফলে এমন মনস্বত্ত্ব তৈরী হয় যে বড় হয়ে এসব মুসলমানের কাছে হিন্দু নারী ধর্ষন, মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর, ধর্মন্তারকরন এক একটা একটা পূন্য কাজ বলে মনে হয়। আমার ছেলেবেলায় দেখছি ভারত পাকিস্থানের ম্যাচে ভারত জিতুক বা হারুক যাই হোক আমার হিন্দু বন্ধুদের বাড়ীর চালে ডিল পড়েছে। খুব ছোট থেকেই দেখেছি মানুষ অনায়াসে হিন্দুদের ডান্ডি, ডেডা ইত্যাদি নামে ডাকছে। আমার এক বন্ধুর নাম ছিল সঞ্জিব, ওকে আমিসহ আমার বন্ধুরা অবলিলায় বলে দিতাম ‘কিরে হিন্দু তুই কালকে কই ছিলি’ এ জাতিয় কথা । মাঝে মাঝে ডান্ডিও বলতাম সামনা সামনি। সেও এধরনের সম্বোধন শুনে অভ্যস্ত ছিল। পরে বুঝেছি কিভাবে এই ধরনের সম্বোধন একজন মানুষের মাঝে ভয়ংকর ভাবে আদারনেস তৈরী করে।

আমি যখন খুব ছোট তখন আমাদের পাশের হিন্দু পাড়ার দিলিপ একদিন মুসলমান হল। সে বয়সে ঘটনার সারমর্ম যা বুঝেছিলাম আর যতটুকু মনে আছে সে অনুসারে বলা যায় দিলিপ অভাবের তাড়নায় এক রেলওয়ে কর্মকর্তা দেয়া চাকরির প্রলোভনে মুসলমান হয়েছিল। দিলিপের নতুন নাম হয়েছিল রুস্তম। পাড়ায় রুস্তমকে নিয়ে একটা উৎসব আমেজ তৈরী হল। রুস্তমকে সবাই দাওয়াত করে খাওয়ায়। অল্পদিনেই রুস্তম বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠল কিন্তু শুকিয়ে গেল রুস্তমের দুই মেয়ে আর বউ, ওরা মুসলমান না হওয়ায় মুসলমানরা ওদের ডেকে খাওয়ায় না আর অন্যদিকে নিন্মবর্ণের হিন্দু প্রতিবেশীরাও রুস্তমের পরিবারের বোঝা বইতে পারে না। একদিন দেখি পাড়ায় রুস্তমের সালিশ বসেছে কেননা তাকে হিন্দু পাড়ায় তার ঘরে বউ-বাচ্চা সাথে সাথে রাত কাটাতে দেখা গেছে। সালিশে কি বিচার হয়েছিল মনে নাই। তবে মনে আছে, রুস্তমের পরিবারের উপর নেমে এসেছিল এক সংকট। একদিকে পরিবার মুসলমান না হওয়ায় রুস্তম পরিবারের কাছে যেতে পারে না। অন্যদিকে পরিবারের নেই কোন খোরাকি। এভাবে একদিন রুস্তমের বউ দুই মেয়েকে নিয়ে মুসলমান হতে হল। তাদের জন্য পাড়ায় নতুন খুপড়ি ঘর বানান হল। একদিন রুস্তমের চাকরিও হল। কিন্তু আবার বিপত্তি দেখা দিল কেননা রুস্তমের বউকে নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেল সে লুকিয়ে মন্দিরে যায়। এরপর আরো অনেক সালিশই হতে দেখেছি রুস্তমের বউয়ের মন্দিরে যাওয়া নিয়ে। কি বিচার হয়েছিল তাও ভুলে গেছি। অনেক ছোট ছিলাম সবকিছু মনে নেই ঠিকঠাক। তবে সমাজটা যে নিষ্ঠুর ছিল এটা বুঝেছিলাম। তাই ভুলে যেতে পারিনি এঘটনা কোনদিনই। বড় হয়ে বুঝেছিলাম এটা ছিল একটি জোর-জবস্তির ধর্মান্তরকরন। এরকম আরো হাজার হাজার ঘটনা আজো ঘটে চলেছে এদেশের আনাচ কানাচে।

আমার ছোটবেলার সেই পাড়া থেকে বেড়িয়ে এসে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম। এখানে এসে দেখলাম ভীন্ন ধর্মাবলম্বীদের আদারনেস প্রব্লেম আরো বড়। তাদের জন্য একেবারে আলাদা হলই। ৮৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি, নাম, যশ বেশ বেড়েছে কিন্তু ধর্মকেন্দ্রীক পৃথকীকরন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বের হতে পারেনি। তাই আজো অমুসলিম ছাত্রদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা এদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে। কয়েকদিন আগে শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ নতুন একটি হল সব শিক্ষার্থীর উম্মুক্ত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে মুসলমান শিক্ষার্থীরা। যেদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ধর্মন্ধতা অস্তিত্বশীল সেদেশে সাধারন মানুষের মনস্তত্ত্ব কেমন তা সহজেই অনমেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এসেছি বছর দশেক চলছে এখনও আশপাশ থেকে কানে ভেসে আসে ‘মালউনের বাচ্চাদের একপা ভারতে’ এজাতিয় কথা। এইতো সেদিন অফিসের এক প্রকল্প পরিচালক সম্পর্কে এক কলিগ অভিযোগ করল তিনি নাকি বলেছেন, তার প্রজেক্টে কোন মালাউন রাখা হবে না। সেদিন বাংলাদেশ-ভারতের খেলায় লিটন দাস ভাল পারফর্মেন্স না দেখানোয় পরিচিত একজন মন্তব্য করে বসল, নামের শেষে দাস আছে সে জন্যই দলে চান্স পেয়েছে। সেদিন তো একজন তর্কই জুড়ে দিল বাংলাদেশ নাকি ইসলামিক দেশ। তাকে কোনভাবে বোঝানো গেল না এদেশে প্রায় ১৫ ভাগ অন্য ধর্মের মানুষ বাস করে। বোঝানো যাবেই বা কিভাবে? সংবিধানে একদিকে লেখা আছে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম আর অন্যদিকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আর এ কারনেই পাশ থেকে একজন টিপ্পনি কেটে উঠল, ভাই কি ধর্ম নিরপেক্ষ নাকি?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×