" যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, কেষ্টা ব্যাটাই চোর।”
এভাবে কেষ্টা ব্যাটাকে প্রতিবার চুরির দায় দেয়ার ফলাফল কল্পনাতীত সুদূরপ্রসারী! মুহাম্মদ কি কখনো ভেবেছিলেন যে দেড়শো কোটি লোক তার দেখানো পথে চলবে? অন্তত একশো কোটি লোক তার নামে নির্দ্বিধায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেবে? কিংবা শুধুমাত্র তাকে কটাক্ষ করা হয়েছে বলে নিতান্ত সাধারণ লোকটি রক্তপিপাসু হয়ে উঠবে?
আসলে একই ধরনের চর্চা বারবার করতে থাকলে কিংবা একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলে সেটাকে সত্য বলে মেনে নেয়া ব্যতীত গত্যন্তর থাকে না; একে বইয়ের ভাষায় “অভ্যাসগত সত্য” বলা হয়। এসব চর্চা/ ঘটনা ব্যক্তির ইচ্ছায় হচ্ছে নাকি অনিচ্ছায় সেটা এখানে ধর্তব্য নয়। উদাহরণস্বরূপ “সব ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র” কিংবা “ইহা সহিহ ইসলাম নহে” বাক্যদ্বয় বহুল প্রচলিত। মোল্লারা ওয়াজ (ইসলামি জলসা) করবেন আর ইহুদি-নাসারাদের দুচারটে গালি দেবেন না তেমনটা সচরাচর ঘটে না। আবার এত এত ফেরকার কোনো একটার ভুলের দায়ও অন্য পক্ষ নেয় না ওটা সহিহ ইসলাম নয় বলে। সমস্যা হলো সুশিক্ষার অভাবে আমাদের দেশে মোল্লারা ধর্মের নামে যা বলে অধিকাংশ লোকেই তা বিশ্বাস করে চোখমুখ বন্ধ করে। কারো নিজ চোখে দেখে নেয়ার ইচ্ছাও জাগে না। কার খেয়েদেয়ে অত সময় আছে যে, সাড়ে ছয় হাজারেরও অধিক আয়াত ও তিরিশ হাজার হাদিস ঘেঁটে সত্যাসত্য নিরূপণ করবে? আর এসব কারণে কুরান-হাদিসে না থাকলেও কুরান-হাদিসের নামে মোল্লারা অনেক কথা বলতে পারেন এবং বলে পারও পেয়ে যান। আমাদের দেশে এ ধরনের ইসলামি জলসা আগে কোনো একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে বছরে একবার হতো। এখন মাদ্রাসা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে এসব জলসার পরিমাণও বাড়ছে। সবচাইতে বড়ব্যাপার হলো এসব জলসার বাইরেও সমাজের বৃহৎ অংশ জুড়ে ধর্ম শিক্ষা দেয়া চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। আর সেটা হলো মানুষের প্রথম শিক্ষালয় তথা পরিবার।
মানবশিশু জন্মগ্রহণ করে ধর্মহীন হিসেবে। তার প্রমাণ হলো কোনো শিশুকে ছোটবেলা থেকে যদি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের আচার-আচরণ না শিখিয়ে কেবল দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য অবশ্যপালনীয় নিয়ম-কানুন শেখানো হয় তাহলে সে কখনো কোনো অলীক ঈশ্বরের কাছে মাথা নত করবে তো নাই বরং সে এসব কল্পকথা বলে হেসে উড়িয়ে দিবে। একটা বাচ্চা যখন বড় হতে থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মনে নতুন কিছু সম্পর্কে জানার স্পৃহা তৈরি হয়| এই স্পৃহা কিন্তু কাউকে তৈরি করে দিতে হয়না; জৈবিকভাবেই তার ডি.এন.এ. তে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা সেট করা থাকে| আর এটা থাকে বেঁচে থাকার তাগিদেই। মানবশিশু প্রথম যে অঙ্গকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগায় তা হলো মুখ। সে যাই তার সামনে পায় মুখ দিয়ে তার গুণাগুণ বিচার করতে শেখে। এটা প্রাকৃতিক। বিভিন্ন জন্তুকে মায়ের স্তনের অবস্থান চিনিয়ে দিতে হয়না। তারাও কোড কর্তৃক তাড়িত হয়। এখানে এসে হয়তো প্রাচীন মানুষ কাউকে এসব তাড়নার “সেট আপ কারী” হিসেবে ভেবে নিয়ে ধর্মের উৎপত্তি ঘটাতে পারে। করতে পারে কোনো অলীক অবতারের অবতারণা ! কিন্তু আমরা এখন জানি মানুষ যখন সভ্য হতে শুরু করেছে তখন থেকেই ধীরে ধীরে তার জিনের মধ্যে টিকে থাকার স্বার্থে বিশেষ কিছু নির্দেশ ঢুকে গিয়েছে| আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন গুলোও একভাবে বিবর্তিত হয়ে চলেছে| এক পুরুষ থেকে পরের পুরুষে যাওয়ার সময় বেঁচে থাকার জন্য অপ্রয়োজনীয় নির্দেশ সমূহ রিজেক্ট করে টিকে থাকার স্বার্থে তুলনামূলক প্রয়োজনীয় নির্দেশসমূহ সংরক্ষণ করে চলেছে প্রতিটি প্রাণীর মস্তিষ্ক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮