শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে ৩ দিনের আয়োজন।
বাংলা সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা, বাঙালির সৃজন-মননে দীপ্তমান কৃর্তি পুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী তার স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ ২৫ বৈশাখ থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। শতবর্ষ ধরে বিশ্বকবির অনন্য প্রতিভার আলো উদ্ভাসিত করে চলেছে বাঙালির জীবন ও দর্শন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে পরিচিত করেছেন বিশ্ব দরবারে। নিভৃত বাংলার প্রত্যমত্ম অঞ্চল শিলাইদহে কবির জীবনের বেশ কিছু সময় কেটেছে তাঁর লেখনির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই স্মৃতি বুকে ধারন করেন আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। চির জাগরম্নক, বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের অন্যতম মহানায়ক, কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা, দ্রষ্টা ও ঋষিতুল্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে কুষ্টিয়ার শিলাইদহকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানমালার বাইরেও এখানে বিসত্মীর্ণ এলাকা জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী চলবে এ মেলা। দোকানীরা মেলায় হরেক রকমের পণ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে। কবি পদধুলির শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ায় এ এলাকার সাহিত্য-সাংস্কৃতিকমনা মানুষ হতাশ হলেও লাখো মানুষের ঢল নামবে এই শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। মিলন মেলায় পরিনত হবে ঠাকুরবাড়ীর চত্বর। স্থানীয় প্রশাসনের দক্ষ আয়োজনে কবি আঙিনার সব দিক টইটুম্বর হয়ে উঠবে উৎসুকদের পদভারে। এই অনুষ্ঠানের সময় ঠাকুরবাড়ী বন্ধ থাকলেও দর্শকরা আসে মূলত: কবিকে স্মরণ করতে। দেশ-বিদেশের শত-শত দর্শনার্থী ও পর্যটকরা আসবেন শিলাইদহের এই কবি পাদপীঠে। কুমারখালীর নিভৃত পল্লীর এই শিলাইদহে কুঠিবাড়ী শুধু গ্রামকে শহর সাদৃশ্যই করেনি, পাল্টে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবন যাত্রা। এখানে স্থানীয়দের চেয়ে এখন বাইরের মানুষেরই বেশী আনাগোনা থাকে। তবে এখনও সেভাবে ভাল পর্যটক আকর্ষণয়ী হোটেল ও রেসত্মরা গড়ে ওঠেনি। যেখানে দিন বদলের সাথে-সাথে কিছুটা হলেও উন্নয়ন কর্মকান্ড চোখে পড়ে। এক সময় ঠাকুরবাড়ীতে অসংখ্য পুরাতন গাছ ছিল, সেগুলো মারা গেছে, মারা গেছে সেই ঐতিহাসিক বকুল গাছটিও। অবশ্য ঠাকুরবাড়ীর শ্রীবৃদ্ধি করতে ও স্মৃতি রক্ষায় তাঁর স্থলে একটি বকুল গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেভাবে ফুটে উঠেনি সুন্দর্য্য। বিশ্ব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ গণ নাটোরের জমিদার পরিবারের কাছ থেকে শিলাইদহের জমিদারী ক্রয় করে নিয়েছিলেন। জমিদারী পরিচালনার জন্য রবীন্দ্রনাথ যুবক বয়সেই এই শিলাইদহের নীল কুঠিতে আসেন। পদ্মার ভাঙনে কুঠি ভবনটি বিধ্বসত্ম হলে ১৮৯২ সালে ১৩ বিঘা জমির উপর বিসত্মৃত ৬ বিঘা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরাও করেন। এই রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, গান রচনা করতেন। জমিদারী পরিচালনার জন্য তিনি দীর্ঘকাল এখানে কাটান। এ মহান কবি ১৯৪১ সালের ৭ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করলে সরকার ওই জায়গা সংরক্ষিত ঘোষণা করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্মরণে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহের কুঠিবাড়ী সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। রাসত্মা ঘাট পরিস্কার, নতুন রঙে রঙিন করা স্টেজ, গেট ও প্যান্ডেলের জায়গা বাড়ানোসহ বিভিন্ন কাজ সমাপ্ত করেছে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি। তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বিশ্বকবিকে নিয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক ও নাট্যানুষ্ঠান এবং আবহমান কালের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। জেলার বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীবৃন্দর নাটক, নৃত্য ও রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী ঘিরে শিলাইদহের কুঠিবাড়ী জনসাধারনের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ এ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রামত্ম থেকে ছুটে আসছে। দেখছে কুঠিবাড়িতে রবী ঠাকুরের ব্যবহার্য সংরক্ষিত জিনিসপত্র। এতে দর্শনার্থীদের উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, ‘‘শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে কবির জন্মোৎসব পালনের সব প্রসত্মুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে কুঠি বাড়ি ও আশপাশের পুরো এলাকা। প্রসত্মুত করা হয়েছে রবীন্দ্র মঞ্চ।
আজ ২৫ বৈশাখ রোববার কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ। দুপুর ২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। দ্বিতীয় দিন ২৬ বৈশাখ সোমবার প্রধান অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ। তৃতীয় দিন ২৭ বৈশাখ মঙ্গলবার প্রধান অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ। তিন দিনের অনুষ্ঠানেই সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, কুঠিবাড়িতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে প্রশাসনের দিক থেকে সকল প্রসত্মুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া পৌরসভার আয়োজনে ২৫ বৈশাখ সকালে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত টেগরলজ কুঠিবাড়িতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ছবিটি নিজের তোলা।
তথ্য সুত্র-- আন্দোলনের বাজার
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮