চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ওমান এয়ারের একটি ফ্লাইট মাসকাট হয়ে সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশে ছাড়ে। গত সোমবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যাত্রীরা চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলার ২ নম্বর লাউঞ্জ তাই ফাঁকা। তবে সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন নিরাপত্তাকর্মী আমীর হামজা। নিয়মানুযায়ী লাউঞ্জ কক্ষটি বন্ধ করতে যান তিনি। কিন্তু কক্ষটির ভেতর একটি সিটে হঠাৎ নজর আটকে যায় তাঁর। আমীর হামজা দেখেন, সিটের ওপর পড়ে আছে একটি মানিব্যাগ। কাছে গিয়ে মানিব্যাগটি হাতে নিয়ে দেখেন, তাতে রয়েছে বেশ কিছু মার্কিন ডলার, একটি ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র। এরপর তিনি মানিব্যাগটি নিয়ে দ্রুত ছুটে যান বিমানবন্দর ম্যানেজারের কক্ষে।
বিমানবন্দর ম্যানেজার উইং কমান্ডার নুর ই আলম মানিব্যাগ খুলে দেখেন, তাতে রয়েছে ১০০ মার্কিন ডলারের ৩১টি নোট, যার মূল্য দুই লাখ ৪১ হাজার টাকা। সঙ্গে এইচএসবিসি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড। কার্ডে নাম লেখা আবু বাকের। বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। তিনি সৌদিপ্রবাসী। নুর ই আলম নিশ্চিত হন আবু বাকের ওমান এয়ারের যাত্রী। ভুল করে মানিব্যাগ ফেলে গেছেন লাউঞ্জে। পরে দেরি না করেই সিসিটিভিতে রানওয়ের দিকে চোখ রাখেন নুর ই আলম। কিন্তু ইতিমধ্যে বিমানটি রানওয়েতে উড্ডয়নের মুহূর্তে রয়েছে। ফলে বিমানটি থামানোর আর কোনো সুযোগ নেই। পরে বিমানটি মাসকাট পৌঁছার আগেই ওমান এয়ারের চট্টগ্রাম বিমানবন্দর শাখার মাধ্যমে টেলেক্সে এ-সংক্রান্ত বার্তা মাসকাট বিমানবন্দরে পাঠানো হয়।
এরপর ওমান এয়ারের ৩১২ ফ্লাইটটি মাসকাট পৌঁছার পর বিমানবন্দরে আবু বাকেরের নাম ধরে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। আবু বাকের তৎক্ষণাৎ ছুটে গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের কাছে হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগটি তাঁর বলে নিশ্চিত করেন। পরে সেখান থেকে ফোনে আবু বাকেরের সঙ্গে কথা বলে নুর ই আলমও নিশ্চিত হন।
এ ঘটনায় বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক নুর ই আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খবর দেওয়া হলে বুধবার আবু বাকেরের স্ত্রী তাসলিমা আকতার ও তাঁর ভাই এসে তিন হাজার ১০০ মার্কিন ডলার, ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ মানিব্যাগটি বুঝে নেন।’
হারানো মানিব্যাগ বুঝে পাওয়ার পর তাসলিমা আকতার বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তাঁর সৎ উপার্জনের টাকা বলেই হয়তো আল্লাহ আমীর হামজার মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই সততা সবার মাঝে থাকলে দেশে অনেক ভালো কিছু হতো।’ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক বলেন, ‘দেশে অনেক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যেও আমীর হামজা সততার এক নজির স্থাপন করলেন, যা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে নিশ্চিত। তাঁর সততার জন্য সিভিল এভিয়েশন আর্মড সিকিউরিটি গার্ডের (এএসজি) পক্ষ থেকে বিশেষ সনদ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।’
নিরাপত্তাকর্মী আমীর হামজার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দুই সন্তানের জনক। এ বিষয়ে আমীর হামজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৬ বছর ধরে নিরাপত্তা প্রহরী পদে দায়িত্ব পালন করছি। সৎ থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি আমি।’ আমীর হামজার প্রশংসা করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সিকিউরিটি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা সবার জন্য অনুকরণীয়।
নিউজ: কালের কন্ঠ