‘বাজি ধরো! বিয়েটা তোমার হবেই হবে!’ ফুল কনফিডেন্স নিয়ে বলেছিল আদিল।
মুফিয়ারও কনফিডেন্স কম ছিল না। ‘বাজি! বাজি! বাজি! কিছুতেই হবে না!’
মুফিয়া বাজিতে হেরে যায়। ছেলে পক্ষ একবার পিছিয়ে গেলেও পরে এগিয়ে আসে। মেয়ে পক্ষের অমত কখনই ছিল না। ফলে আদিলের জয় পেতে খুব একটা বাগ পেতে হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই মুফিয়ার বিয়ে!
রাত বেশী হয়নি। বড় জোর এগারটা। অন্যদিনের চেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি একটু বেশী হচ্ছে আজ। দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে আদিল। দক্ষিণের জানালাটা হালকা খোলা। শির শির করে বাতাস আসছে। ঘরের ফ্লোরোসেন্ট বাতিটা বন্ধ, মিটিমিটি করে লাল রঙয়ের একটা ডিম লাইট জ্বলছে। আজ একবারও মুফিয়ার খোঁজ নেয়নি আদিল। অথচ কাল মেয়েটার বিয়ে। একটু খোঁজ নেয়া উচিৎ ছিল। বাজির প্রাইজটা এখনও পায়নি আদিল।
- কাল নাকি আপামণির বিয়ে?
- হতে পারে! জানিনা
- ও... সেটা না জানলেও চলবে। কিন্তু আমার পাওনাটা যে দিতে হয়!
- কি যেন পাওনা ছিল আপনার?
- বাজিতে যেন কি দেয়ার কথা ছিল?
- আমার মাথাটা! তাই না?
- আপামণি কি রেগে গেলেন?
- না, রেগে আছি।
- দুনিয়াটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পাওনা চাইলেই মানুষ শুধু শুধু রাগ করে। দেবেন না তাই বলেন!
- কে বলল দেব না? কবে চান?
- আপনি হারিয়ে যাওয়ার আগে!
- হারাবো কেন?
- বিয়ে করবেন বলে!
- বিয়ে করলে মানুষ হারিয়ে যায়?
- সবার কাছ থেকে হারায় না! তবে কিছু কিছু মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যায়।
- ও... আপনার থেকে হারিয়ে যাব?
- কোন সন্দেহ?
- না, নেই!
- তারপর?
- কি?
- আপামণির হবু বরের খবর কি?
- সারাদিনই তো কথা বলি! আজ অবশ্য কথা হয়নি। বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত আছে মনে হয়
- গলা ব্যাথা করে না?
- প্রেম করলে কি গলা ব্যাথা হয়?
- আমি কি জানি! আমি কি কখনো প্রেম করেছি?
- মজা পেলাম! জানো আমি না আমার হবু বরের প্রেমে পড়ে গেছি!
- আহারে! কোথাও লাগেনি তো? আমি কিন্তু ভাই উঠাতে পারবো না!
- আমি উঠতেও চাই না!
- তাহলে বরকে নিশ্চয় ‘I love you’ টা বলেই ফেলেছো!
- না! মাথা খারাপ!
- তুমি তো আবার বিয়ের আগে কাউকে ‘I love you’ বলবে না!
- তোমার মনে আছে সে কথা?
- না। ভুলে গেছি!
- আমারও মনে আছে। কি করে ভুলি বল?
- কেন ভুলবে না?
- ভোলার মত যে না
- কেন ভোলার মত না?
- ভুলতে পারিনি তাই
- তাহলে ভোলার দরকার নাই
- আমি তো ভুলতে চাইনি। তুমিই তো জোর করে ভোলাতে চাচ্ছ
- আজকেই তো শেষ! একটু জোর জুলুম সহ্য করতেই হবে। পারবে না?
- খুব পারবো!
- আমার মেয়াদ আর কতক্ষণ আছে?
- কতক্ষণ চাও?
- ভোর হওয়ার আগেই শেষ করতে চাই। কাল থেকে আর এভাবে কন্ট্যাক্ট করা উচিৎ হবে না। তোমাকে ইচ্ছে করেই অনেক কষ্ট দিয়েছে! নিজ গুণে মাফ করে দিও। I’ll miss you!
- আমি মাফ টাফ চাইতে পারব না। তবে তোমাকে মিস করব!
- এটা আমার জন্য অনেক কষ্টকর হবে!
- আমার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে তুমি আজ একা হয়ে গেলে
- ব্যাপার না। মানুষ মাত্রই একা। আমাকে টেক্সট করার ইচ্ছে করলে তোমার বরকে করিও!
- তুমি না থাকলে তো বরকেই করতে হবে তাই না?
- গুড গার্ল!
- আমি যেভাবে বললাম তাতে আমাকে গুড বলা যায় না!
- অনেকদিন পর একটু বাতাস করলাম। খুশি হতে পারতে!
- এমন সস্তা বাতাসে আমি ফুলি না। আচ্ছা আমি না হয় বরকে টেক্সট করব। তুমি করবেটা কি?
- জানিনা
- তোমার ইচ্ছেই করবে না দেখিও
- আমারও তাই মনে হয়।
- আমাদের সাড়ে সাত বছরের সম্পর্ক তাহলে আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে?
- হুম।
- তাহলে আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই।
- আর একটু মেয়াদ বাড়ানো যায় না?
- না। হাতে মেহেদি দেব। আর টেক্সট করতে পারব না।
- ওকে। বাই
- বাই
এত বড় একটা রিলেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ মুফিয়ার যেন গায়েই লাগছে না! ওর কাছে মেহেদীটাই দামী হল? বিদায়টা তো একটু মিষ্টি করেও দেয়া যেত! একদিন, দুইদিন না, দুই হাজার সাত শত সাইত্রিশ দিনের রিলেশন ছিল! না, মেয়েটা বিয়ের আগের দিনেও চেঞ্জ হল না।
কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। শিরশিরে বাতাসে একটু চোখ লেগে এসেছিল আদিলের। সারাদিন তো আর কম ধকল যায়নি! বিছানা থেকেই হাক ছাড়ে আদিল, - ‘কে?’
ওপাশ থেকে ছোট মামার কণ্ঠ ভেসে আসে। ‘তোর কি বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?’
ঘড়ির দিকে তাকায় আদিল। রাত সাড়ে বারোটা! বারোটায় আদিলের হলুদ অনুষ্ঠান ছিল। মুফিয়ার হলুদ অনুষ্ঠান দিনেই হয়ে গেছে। হলুদের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে ছোটমামাকেই পাঠানো হয়েছিল।
দরজার করাঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এক লাফে বিছানা থেকে নামে আদিল। বিয়েটা তাহলে হয়েই যাচ্ছে আদিলের!