somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প : চন্দ্রাহত

১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন থেকে ইলেক্ট্রিসিটিটা খুব ডিস্টার্ব করছে। হঠাত হঠাত নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। অনেকদিন পর একটা শিট হাতে নিয়ে পড়তে বসেছিল পিয়াস। পিয়াসের মনের সাথে ইলেক্ট্রিসিটির বুঝি একটা গোপন সম্পর্ক আছে। পড়া শুরু করা মাত্রই দুম চলে গেল! মেহেদি একটা মোমবাতি জ্বালিয়েছে। আলোর চেয়ে কালো লাফাঙ্গা পোকায় ঘরটা ভরে গেছে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে ঘরে বসে থাকা যায় না। হেড ফোনটা কানে গুজে ছাঁদের দিকে চলে যায় পিয়াস। চাঁদের রূপালী আলোয় হলের শ্যাওলা পরা ছাঁদটাকে কোন এক ভীনগ্রহের অব্যবহৃত প্লে গ্রাউন্ডের মত লাগছে। যেখানে চাঁদের আলো ছাড়া অন্যকোন কৃত্রিম আলোর অনুপ্রবেশ নিষেধ। ছাঁদটা ফাঁকা। রেলিঙ ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছটার পাতা মৃদু দুলছে। শির শির করে একটা শীতল বাতাসের প্রবাহ পিয়াসের ঘামে লেপ্টে থাকা টি শার্টটাকে আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে। একটা পাখি দূর আকাশে বৃত্তাকারে উড়ছে আর মাঝে মাঝে পাখা ঝাপাটাচ্ছে। চাঁদের মায়াবী ফাঁদে বোধহয় আটকা পড়েছে বেচারা। ভালো লাগে পিয়াসের। চাঁদটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে সে। একপলক চাঁদ দেখা আর এক দৃষ্টে চাঁদ দেখার মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। চাঁদকে একপলক দেখলে অকারণে ভালো লাগে কিন্তু এক দৃষ্টে দেখলে কারণসহ ভালো লাগে। আজকের চাঁদটা কেমন যেন ঘোলা ঘোলা, রঙটাও রূপালী নয়, লালচে। বেচারী চাঁদ লজ্জায় লাল হয়েছে নাকি কেউ রক্তাক্ত করেছে কে জানে!

ফোনটা হঠাত ভাইব্রেট করে ওঠে পিয়াসের। সাজিদ ফোন করেছে।

- দোস্ত! এখন কি অবস্থা?
- অবস্থা তো ভালই
- কোন হসপিটালে আছিস তুই?
- হসপিটালে মানে? আমি তো ছাঁদে!
- তুই নাকি এক্সিডেন্ট করছিস?
- কোথায়?
- রাখ ব্যাটা! ফোনের টাকাগুলা হুদাই নষ্ট করলাম!

আপন মনে হাসে পিয়াস। বন্ধুদের কেউ একজন গুজবটা ছড়িয়েছে। বন্ধুগুলোর উপর ভরসা নেই পিয়াসের। সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ফান করতে ওরা অভ্যস্থ। হঠাত করেই হুলুস্থুল একটা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে।

ফোনটা আবার ভাইব্রেট করে।

- দোস্ত পা’টার কোথায় ভাঙছে? হাটুর উপরে না নিচে?
- কনুইয়ের উপর!
- তোর হাতও ভাঙছে!
- হ। সবি ভাঙছে। তোরা থাকলে আস্তে আস্তে আমার হাত-পা নাক-কান-গলা সবি ভাঙবে!
- মানে তুই এক্সিডেন্ট করিস নি?
- না, করব ভাবতেছি! জীম, ফোনটা রাখতো। কে যেন ফোন করছে।

জীম ফোন কেটে দেয়। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।

- কেমন আছেন?
- জ্বি, ভালো আছি।
- না, আপনি ভালো নেই। চলার সময় চোখ গুলো কি আপনি পকেটে ভরে রাখেন?
- কে বলছেন?
- আগে উত্তর দিন! দুই দুইটা জ্বলজ্যান্ত চোখ থাকতে আপনি মাইক্রোর নিচে পরেন কিভাবে? অ্যা?
- ও এই কথা! আমি তো রাস্তার সাইডেই ছিলাম। হঠাত কোত্থেকে একটা বাস এসে আমাকে ধাক্কা দিল!
- বাস?
- না মানে মাইক্রোবাস!
- তারপর?
- তারপর দেখি আমি হসপিটালে! উহ... প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে!
- মাথাতেও লেগেছে নাকি? আমি না শুনলাম পা...
- পাই তো! বা পা এর বুড়ো আঙুলের মাথাটা একদম থেথলে গেছে! উহ...
- কষ্ট হচ্ছে খুব না?
- আরে না! আমি ভালো আছি। ডাক্তার পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন। সাতদিন পর অপারেশন!
- অপারেশন!
- হুম। পা’টা দু’জায়গায় ভেঙে গেছে। রড দিয়ে সাপোর্ট দিতে হবে!
- আহারে! এরপরও ভালো থাকেন কি করে? ব্যথা হচ্ছে না?
- না। কিছুক্ষণ আগেই টোরাক্স পুশ করেছে। ব্যথা একদম নেই।
- একদম টেনশন করবেন না। দেখবেন খুব তারাতারি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন। আমি নামাজ পড়ে আপনার জন্য দুয়া করব।
- আপনার পরিচয়? হ্যালো...
- গোপন রাখলাম। অসুস্থ মানুষ এত কথা বলেন কেন? রেস্ট নিন। বাই

আনন্দে চিৎকার করে ওঠে পিয়াস। পিয়াসের এক্সিডেন্টের কথা শুনে বিচলিত হয়েছে মেয়েটা! ধরাধরা গলায় বলছে –‘একদম টেনশন করবেন না! দেখবেন খুব তারাতারি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন!’ তারমানে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে হৃদি! অথচ সেদিন কিভাবেই না বিপদ সংকেত দেখালো মেয়েটা।

- হৃদি
- জ্বি ভাইয়া, বলেন?
- ভাত খেয়েছো?
- হ্যা...
- ভাত খেয়ে পানি খেয়েছো?
- হ্যা...
- তাহলে ঠিক আছে।
- মানে কি? আপনি এসব বলার জন্য আমাকে থামতে বললেন?
- না তো!
- তো কি?
- ‘অনেস্টলি বলছি গত মাসে শুরুতেই তোমার উপর আমি ক্রাশ খেয়েছিলাম! এখন মনে হয় প্রেমে পড়েছি। দয়া করে এবার আমাকে উঠাও!’

কিন্তু হৃদি পিয়াসকে সেদিন উঠায় নি। সাদা মুখ কালো করে গটগট করে হেঁটে গেছে। কষ্টে বুকটা মমতাজের মতই ফেটে গিয়েছিল সেদিন। অথচ আজ কত উদ্বেগ নিয়েই না ফোন করল মেয়েটা। অসুখ-বিসুখ এমনই একটা জিনিস যেটার মাধ্যমে অতি সহজেই আসল নকলের পার্থক্য করা যায়।

চাঁদটার দিকে তাকায় পিয়াস। পাখিটা এখনও ঘুরছে। পিয়াসেরও পাখিটার মত ঘুরতে ইচ্ছে করছে। মুক্ত আকাশে বৃত্তাকারে ঘুরছে পিয়াস, বৃত্তের কেন্দ্রে বসে লজ্জ্বায় লাল হচ্ছে হৃদি। বন্ধুরা দূরে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখে মিটিমিটি হাসছে - ‘মামা ক্যামনে? তোর না পা ভাঙা?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×