টুং টুং টুং টুং! ঘুমটা ভেঙ্গে গেল! আধবোজা চোখে টেবিল ক্লকটার দিকে তাকায় অনুপ। রাত তিনটে পনের। মোবাইল অপারেটর থেকে একটা মেসেজ এসেছে। ‘স্পেশাল অফার! ৫০০ এসএমএস মাত্র ৫ টাকায়!...’ মোবাইলটা আছাড় মেরে ভাংতে ইচ্ছে করে অনুপের। এসএমএস কি ভর্তা করে খাবে সে? মোবাইল সাইলেন্ট করে ভেঙে যাওয়া ঘুমটা জোড়া লাগানোর চেষ্টা চলে অনুপের। কিন্তু শত চেষ্টাতেও ঘুম জোড়া লাগে না। অস্বস্থি লাগে, এপাশ ওপাশ করে অনুপ। অভ্যেসটা বদলে গেছে। এইতো কয়েকমাস আগেও নিয়মিত রাগ জাগত সে। একটু আধটু না, পুরো রাত। তখন ঘুমটার তেমন প্রয়োজন ছিল না। গভীর রাতে টেক্সট করত প্রাপ্তী। টুং টুং টুং টুং...
- কাইফা হালুকা?
- ফ্যাটফ্যাটি (মোটামুটি)! তুমি?
- কাল যা বলছি তার উল্টো
- গুড। পড়াশুনা?
- খারাপ না
- একটু দোয়া করতে পারবে?
- যাতে ভালো বউ পাও?
- না। বউ খারাপ হলেও আমার কোন প্রব্লেম নেই
- তো?
- পড়াশুনাটা যাতে শুরু করতে পারি! কতদিন থেকে বই ছুঁই না...
- অতি উত্তম আবেদন
- উত্তম তো হবেই। আমি সব সময় উত্তম কাজই করি!
- আমার সাথে যে মেসেজিং করছো এটা কিন্তু খারাপ! প্রুভড!
- জানি। এটা নেগেটিভ। তুমি যে রিপ্লাই দিচ্ছো এটাও নেগেটিভ। নেগেটিভ নেগেটিভে পজেটিভ!
- বলছে তোমাকে! আমি মানিনা!
- কেন প্রেমিকা?
- আমার ইচ্ছা! তোমার সাথে না আমার সেদিন ব্রেক আপ হয়ে গেছে! আমি তো আর তোমার প্রেমিকা নেই!
- কে বলল?
- প্রাপ্তী
- কষ্ট পেলাম
- প্রেম করতে চাইলে একটু কষ্ট পেতে হয়। এ তো খুব ছোট কষ্ট
- অত শত বুঝিনা, আমি আমার প্রেমিকাকে ফিরে চাই। হুহ...!
- প্রেমিকাকে ফেরৎ দেয়া হইল! হুহ...!
- প্রেমিকা! তুমি খুব ভালো!
- জানি। কমন ডায়ালগ
- প্রেমিকা! তুমি খুব খারাপ!
- গুড। আনকমন ডায়ালগ
- কি যেন শুনলাম প্রেমিকা! তুমি নাকি কাকে যেন পছন্দ কর!
- কাউকে না। তোমাকেও না! যদিও তুমি আমার প্রেমিক
- মাইন্ড করলাম
- ঠিক আছে তোমাকে পছন্দ করি
- মিথ্যে বলে আমাকে খুশি করার দরকার নেই
- সত্যি বলছি। আমি যার তার সাথে মেসেজিং করি না
- কি সৌভাগ্য! কি সৌভাগ্য!! আমার প্রেমিকা আমাকে পছন্দ করে!
- প্রেমিকা প্রেমিককে পছন্দ করবেনা তো কাকে করবে শুনি?
- প্রেমিকা তুমি ধন্য হও নি?
- কেন?
- আমার মত প্রেমিক পেয়ে?
- না! আজব লাগছে। এক্টিং এ আমরা দু'জনেই অনেক ভালো!
- ছি ছি প্রেমিকা! তুমি এসব কি বলছো?
- রাগ করছো প্রেমিক?
- প্রেমিকা যদি বলে সে এক্টিং করছে তখন রাগ করব না তো ড্যান্স করব?
- রাগ করোনা প্লিজ। চিরন্তন সত্যটাই তো বললাম!
- হা হা হা... তুমি পারোও বটে!
একটা মশা কানের কাছে এসে পোঁ পোঁ করে। ভাবনায় ছেদ পরে অনুপের। মশাটাকে মারতে গিয়ে কয়েকবার ব্যার্থ হয় অনুপ। খাটের কোণায় থাকা মোবাইলটা নিচে পরে যায়। প্রাপ্তীদের পিকনিকের বাসটা টিলা থেকে যেভাবে খাদে পরে গিয়েছিল ঠিক সেভাবে। মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। অনুপের কানে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে যায়,-
‘প্রেমিক, আমার জন্য একটু দোয়া করতে পারবে?’