গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বলিউডে মুক্তি পেয়েছে যশরাজ ফিল্মসের বহুল আলোচিত ছবি ‘গুন্ডে’। আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত ছবিটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করার পাশাপাশি চরমভাবে বিকৃত করা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
কি আছে এই গুন্ডে মুভিতে?
‘গুন্ডে’ ছবিটির শুরুর দিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভিডিও চিত্র দেখানোর পাশাপাশি হিন্দি ভাষায় বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় যুদ্ধ শেষ হয়। ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা হিন্দুস্তানের সেনাদের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। জন্ম হয় বাংলাদেশ নামে নতুন এক দেশের। হিন্দিতে আরও বলা হয়, যখন হিন্দুস্তানের সেনারা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন কাঁটাতারের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল ১১-১২ বছরের দুই অনাথ বন্ধু বিক্রম ও বালা। তারা বুঝতে পারছিল না, তাদের সঙ্গে যা হলো তা কি ঠিক ছিল, নাকি ভুল? নতুন দেশ কি তাদের নতুন জীবন দেবে? ছবিটির শুরুর দৃশ্যে দেখানো হয়, ভারতীয় যোদ্ধাদের সামনে আত্মসমর্পণ করছেন পাকিস্তানি সেনারা। আর জন্ম হচ্ছে বাংলাদেশের। পেছনে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পোস্টার। উদ্বাস্তু শিবিরের সামনে দিয়ে রুটি ছুড়তে ছুড়তে চলেছে ত্রাণের গাড়ি, আর কাদামাটি থেকে তা কুড়িয়ে খাচ্ছে অসহায় মানুষ। ছবিটিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখানো হলেও কোথাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়নি।
বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় এবং যশ রাজ ফিল্মসের বিবৃতিঃ
ছবিটি মুক্তি পাবার পর থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বাংলাদেশে। ফলে যশরাজ ফিল্মস তাদের ফেসবুকে ফ্যান পেজে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেয়-
‘প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের ছবিতে যেভাবে গল্প তুলে ধরা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অনেক ভাই তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। ছবিটির কাহিনি ও গল্প পুরোপুরি কাল্পনিক। কোনো জাতি, সমাজের বিশেষ কোনো গোত্র কিংবা কোনো ব্যক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের অভিপ্রায় আমাদের ছিল না। তারপরও বাংলাদেশি ভাইরা যদি আমাদের কাজ দেখে আহত হন কিংবা অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করেন তাহলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমরা।’
কিছু সাদাসিধে প্রশ্নঃ
• ১৯৭১ কাল্পনিক?
• ১৬ ডিসেম্বর কাল্পনিক?
• ৩০ লাখ শহীদের আত্নত্যাগ কাল্পনিক?
• ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি কাল্পনিক?
• ৯০ হাজার পাকিস্তানী সেনার আত্নসমার্পন কাল্পনিক?
• বঙ্গবন্ধু কাল্পনিক?
• একাত্তর সালের যে ভিডিও গুলো ব্যবহার করা হয়েছে ওগুলোও কি কাল্পনিক?
যদি তাই হয় তবে তাহলে কল্পনার সংজ্ঞা পাল্টাতে হবে! কল্পনা করে ক্যাটরিনার অর্ধনগ্ন বেলি ড্যান্সের জন্ম দেয়া যায়, কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম দেয়া যায় না!
শেষ কথাঃ
আমি বাংলাদেশী। বাংলা আমার মা, আমার বেহেশত। মায়ের অপমানে আমার তীব্র কষ্ট হয়, রক্তে আগুণ জ্বলে। বাংলার ইতিহাস নিয়ে ব্যবসা আমি সইতে পারি না। আমি প্রতিবাদ জানাই। আপনিও জানান। যশ রাজ ফিল্মসের ফেসবুক পেজে গিয়ে ওদের প্রতিটি পোস্টে গণহারে প্রতিবাদ জানান। IMDB তে গিয়ে গণহারে ১/১০ রেটিং দিয়ে রেটিং দেয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবমাননার কথা কমেন্টে লিখে প্রতিবাদ জানান। ৭১ এ আমরা রক্ত দিয়েছি, পানি নয়।