“মাথায় কি আছে?”- প্রায়ই কমবেশি আমরা নিজেদেরকে অথবা অন্য কাউকে এই প্রশ্নটি করে থাকি। কেউ অংক না বুঝলে, কেউ অহেতুক অকারণ কোন কাজ করলে, বিশেষ করে নিজেই যদি বোকার মত কিছু করে বসি তো,এই প্রশ্ন চলে আসে। কি আছে আমাদের মাথায়? দশ লক্ষ নিউরনের জালে আবদ্ধ এক মস্তিষ্ক ছাড়া। এই মস্তিষ্কই আমাদের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের মূল হর্তাকর্তা। কি করবো,কি করা উচিত, কিসে রাগ হবে আর কিসে কান্না-সব ঠিক করে দেয় এই মস্তিষ্ক। আর এই সকল সিদ্ধান্ত নিতে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে আমাদের স্মৃতির ভান্ডার। জন্মের পর থেকে আমরা যা কিছু দেখি সব স্মৃতি হিসেবে জমা হয় আমাদের মস্তিষ্কে। এই সব স্মৃতি হাতড়েই আমরা সামনে এগিয়ে চলি।
২০১৫ সালের একাডেমী এওয়ার্ড জয়ী এনিমেটেড মুভি “Inside Out” নির্মিত হয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরের হেডকোয়ার্টার নিয়ে। রাইলি নামের এক শিশুর জন্মের পর প্রথম যখন চোখ মেলে তাকালো, তখনই তার মস্তিষ্কে জন্ম হয় খুশি নামের এক মেয়ের। মস্তিষ্কের হেডকোয়ার্টারে খুশির দায়িত্ব হলো সকল পরিস্থিতিতে রাইলিকে আনন্দে রাখা। খুশি রাইলির সাথে একান্তে সময় কাটাতে পেরেছিল শুধুমাত্র ৩৩ মিনিট। কারণ এরপরই জন্ম নিয়েছে দুঃখ নামের মেয়েটি। দুঃখ সব পরিস্থিতিতেই মন খারাপের কারণ খুঁজে বের করে। এভাবে ভয় আর রাগ নামের ছেলে দুটো আর বিরক্তি নামের মেয়েটিও আসে হেডকোয়ার্টারে।
খুশি,দুঃখ,রাগ,বিরক্তি আর ভয়-এই পাঁচজনের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাইলি ধীরে ধীরে নিজের মত করে বড় হতে থাকে। সে পরিবার,বন্ধুত্ব,শখ ইত্যাদি ব্যাপার শিখতে থাকে। রাইলির নিজস্ব একটি ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠতে থাকে।
এগারো বছর বয়সে রাইলির পরিবার নিজের বাড়ি বিক্রি করে সান ফ্রান্সিসকোতে চলে আসে। নতুন বাড়ি,নতুন স্কুল,নতুন বন্ধু-সব মিলিয়ে রাইলি তাঁর পুরনো দিনগুলোকে খুব মিস করতে থাকে। যদিও সে খুশি থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টায় নিয়োজিত,তবুও ভিতরে ভিতরে বেদনা কুড়ে কুড়ে খায় তাকে। ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে পড়ে যখন দুঃখ’র ভুলে রাইলির সকল সেরা স্মৃতিগুলো বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় আর সে ব্যক্তিত্বের সংকটে পড়ে।
রাইলিকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে খুশি আর দুঃখ সেরা স্মৃতিগুলোকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে ফেরার সর্বোচ্চ চেষ্টায় নামে। অন্যদিকে খুশি’র অনুপস্থিতিতে হেডকোয়ার্টারে রাগ,বিরক্তি আর ভয় খুশি’র ভূমিকা পালন করতে গিয়ে রাইলির সকল ব্যক্তিত্বকে একে একে গুঁড়িয়ে দিতে লাগলো। শেষমেষ খুশি আর দুঃখ হেডকোয়ার্টারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাইলি ঘর পালাতে বেরিয়ে পড়ে। তখন খুশি আবিষ্কার করে, সন্তান যতই বেদনায় থাকুক না কেন একমাত্র বাবা-মা পারে সন্তানের সকল দুঃখের স্মৃতিকে সরিয়ে জীবনটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে।
“
Inside Out মুভিটি Pixer এর সেরা মুভিগুলোর একটি। আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরটাকে ভাল করে বুজতে এই মুভিটা ভালই কাজে দেয়। আর কিছু না হোক,কোন কাজ করার আগে নিজের মাথার ভেতরের পাঁচটা ইমোশনের সাথে তো আলাপ করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৮