ঘোর.........
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।
একটা মফস্বল শহরের হোটেলে আছি......
রোজা ছিলাম। "রমজানের রোজার শেষে শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা অত্যাধিক সওয়াবের"- এই বিশ্বাস রেখেই বহু বছর যাবত এই রোজাও পালন করি। আজ ছিলো চতুর্থ রোজা। ব্লাড প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত। তার উপর আমি নিদ্রাহীনতায় ভুক্তভোগী। শারীরিক আরও কিছু সমস্যার জন্য বেশ কয়েক প্রকার ঔষধ খেতে হয়। একটা ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধও খেতে হয়। প্রতিদিনের মতো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। রাতে ঘুম ভাংলে চোখ খুলে দেখি চারিদিকে ঘুঁটঘুটে অন্ধকার, কোথায় আছি এখন? কখন ঘুমিয়েছিলাম তাও মনে পড়ছে না। এখন কি সকাল, নাকি মাঝরাত্রি? অভ্যাসগত ভাবে রাত এগারোটায় আমি ফোনের সাউন্ড মিউট করে ঘুমাই। হাতড়ে মোবাইলের স্ক্রিনে দেখি সকাল ৪ঃ১৪ মিনিট, তিনটা মিস কল আননোন্ নাম্বার থেকে। চোখদুটো ভীষণ ভারী, মোবাইলের আলো অসহ্য লাগছে। মনে হচ্ছে আমি অন্য কেউ, চির চেনা পৃথিবীটা আজ কেমন যেনো অন্যরকম।
তীব্র খিদে আর শীতে স্নাযুগুলো সব অসাড়, সারা শরীরে কাঁপুনি দিচ্ছে। এখন কেউ একটু আগুন গরম চা দিলে খেতে পারতাম, কাউকে ডাকার মত ক্ষমতা নেই, আর ডাকলেও শুনবে না কেউ। পাশের ঘরেও দুইজন বোর্ডার আছেন। ওই দরজায় নক করলে তবেই দেখা মিলবে তার আগে নয়, কিন্তু ইচ্ছেও করছে না। আবার চোখ বন্ধ করলাম। চিন্তার স্রোতগুলো সব এলোমোলো হয়ে যাচ্ছে- আমি কি আবার জেগে উঠতে পারবো?
গতকাল বৃষ্টিতে ভিজেছি, না ইচ্ছে করে ভিজিনি, বাধ্য হয়েছিলাম। বৃষ্টি পড়তে দেখলে কাজহীন মানুষের প্রেম উথলে ওঠে, আমার প্রেম উথলে ওঠেনি বরং গত কালের বৃষ্টি ভীষণ বিরক্ত লাগছিল। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে রুমে ফিরতেই চাইছিলাম, কিন্তু চাইলেই পাওয়া যায় না। যিনি বলেছিলেন- "তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চাইলে সমস্ত কিছু পাওয়া সম্ভব"। তিনি আসলেই ভুল বলেছেন, নইলে উনি আকাঙ্ক্ষার যে মাপকাঠি তৈরি করেছেন সে অবধি আমি পৌছাতে পারিনি। ঢাকা সিটিতে একটু বৃষ্টিতে ড্রেনগুলো ডুবে যায়, এই মফস্বল শহরও ব্যতিক্রম নয়। ড্রেনের নোংরা কাদাপানি ভাঙতে ভাঙতে হোটেলে ফিরেছিলাম।
কুকুরের কান্না সব সময়ই আমার মনে একটা অজানা ভয় ঢুকিয়ে দেয়...এখন কুকুরের কান্না শুনতে পাচ্ছি...মনে হচ্ছে আমার রুমের সামনেই কুকুর কান্না করছে... একটা অজানা ভয় আমাকে গ্রাস করেছে.... শরীরটা অসাড় লাগছে....হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিলে টাচ লাইটটাও টাচ করতে পারছিনা! বাবা-বুবুর কথা মনে পড়ছে...প্রিয় মুখগুলো চোখের সামনে ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি- কিন্তু আমি কথা বলতে পারছিনা... এই কালো অন্ধকারে কোনো মানুষের শব্দ পেতে চাইছি, তীব্রভাবে চাইছি। এবার দরজায় টোকা পড়ছে, স্পষ্ট শুনছি, পরপর তিনবার আবার তিনবার তারপর একটু থেমে গিয়ে আবার একই রকম। আমিও কি এমন করেই দরজায় টোকা দিই? বুঝতে পারছিনা- আওয়াজটা কি সত্যি সত্যি হচ্ছে নাকি আমি আমার মধ্যে শব্দ তৈরি করছি?
মনে মনে 'আয়াত উল কুরসি' তেলওয়াত করছি....তখনই কাছাকাছি কোনো মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে....
আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাউম.....ঘুম থেকে নামাজ উত্তম।
আমার ভয়, শারীরিক অসাড়তা কেটে যাচ্ছে...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৬