somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

স্মৃতি, স্বপ্ন ও ভালোবাসার শহরঃ

৩০ শে জুন, ২০১১ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্মৃতি, স্বপ্ন ও ভালোবাসার শহরঃ

বরিশাল শহরটি খুব ঝকঝকে বা আধুনিক শহর ছিলনা কোনো সময়ই। কিন্তু প্রচুর গাছপালা, পুকুর, খাল নিয়ে নিরিবিলি মোটামুটি সুন্দর বাসযোগ্য শহর ছিল বরিশাল।এখন?

শহরের মুল আকর্ষণ বিবির পুকুর অনেকাংশে ভরাট করে কৃতিমতা আনা হয়েছে, হাতেম আলী কলেজের পশ্চিম পাশের বিশাল দীঘিটি মাটি ভরাট করে হাউজিং হয়েছে, সদর রোডস্থ্য পুরাতন হাসপাতালে অস্তিত্ব বিলীণ হবার পথে, কালীবাড়ি রোড, নতুন বাজার, কলেজ রোড, গোরস্থান রোড, সিএন্ডবি রোড, কলেজ এভিনিউর অসংখ্য পুকুর ভরাট করা হয়েছে। সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ,বরিশাল কলেজের সামনে, পাশের বড় বড় পুকুরগুলো ভরাট করে বানানো হয়েছে আবাসিক প্রকল্প। নবগ্রাম রোডের ঐতিহ্যবাহি সেই খালটি এখন আর নেই। সেই খালের বুকের উপর এখন বিশাল পাকা স্ট্রর্ম সুয়ারেজ ড্রেন এবং উপরে আধুনিক রোড!ঝাউতলা, কাউনিয়া, আমানতগঞ্জ বেলতলা রোডের পাশের পুকুর জলাভুমি এখন ধূলিধূসর বিরানভুমি। সাগরদী, রুপাতলী এলাকা এখন আধুনিক বরিশাল।

শতবর্ষী কাকলী(জগদীশ) সিনেমা, হাসপাতাল রোডস্থ্য সোনালী সিনেমা হল ভেংগে সেখানে এখন শপিং কমপ্লেক্স এবং মাল্টি স্টোর্ড হাউজিং কমপ্লেক্স। একই অবস্থা ফজলুল হক এভিনিউতেও। পোর্ট/বান্দ রোড থেকে বরিশাল লেডিস পার্ক, সাগরদী, রুপাতলী, জেলা স্কুল, পুলিশ লাইন, আলেকান্দা এবং জর্ডন রোডের বিশাল বিশাল ছায়া তরুবৃক্ষ এখন আর নেই। নেই নাবালক জমিদার বাড়ির(হীম নীড়, ফেয়ারী হাউস) পদ্ম পুকুরে ফুটে থাকা বর্ণীল পদ্ম। বাংলাদেশে আমার দেখা শহরগুলোর মধ্যে বরিশাল শহরেই সব থেকে বেশী পুকুর ছিল। কিন্তু এখন বরিশালে পুকুর খাল, ডোবা-জলাশয় খুঁজেও পাওয়া যায়না।

অক্সফোর্ড মিশন ক্যাম্পাস, বিএম স্কুল,বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে কিম্বা এর আশে পাশে এখন আর কৃষ্ণচুড়ায় আগুণ লাগেনা।অক্স ফোর্ড মিশন স্কুলের সামনেই আমার দাদা-পিতার আদি নিবাস। পাশাপাশি বিশাল দুটো লাল রংযের ভবন,একসময়ের বরিশাল শহরের অভিজাত ভবন এখন রুগ্ন জীর্ণ অবস্থায় বাড়ির মালিকের জন্য হাহুতাশ করছে।বরিশাল শহরেই আমার দাদা বাড়ি এবং নানা বাড়ি(হুদা ভিলা, শহীদ কর্ণেল নাজমুল হুদা পরিবার। আমার মামাদের প্রত্যেকের নামের শেষ অংশ "হুদা")। নানা বাড়িতে আমার এক মামা ৭৫ সন পর্যন্ত স্বপরিবারে থাকতেন, আর দাদা বাড়িতে দুরসম্পর্কের এক আত্মীয়। উভয় বাড়ির মুল দ্বায়িত্ব কেয়ার টেকারদের উপর। তারপরেও কোনো এক অজানা আকর্ষনে সেই ছেলে বেলা থেকে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত সুযোগ পেলে আমি বারবার চলে যেতাম দুই বাড়ির সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য। ছেলে বেলা দাদার রেলী সাইকেলে কিম্বা ভেসপায় করে বরিশাল শহরে ঘুরতাম এবং সপ্তম শ্রেনীতে পড়ার সময় থেকে আমার মামাত ভাইয়ের ফিফটি সিসি হোন্ডা মটর সাইকেলটি-যা আমার জন্য বরাদ্ধ থাকতো বরিশাল গেলে। এখনও বছরে-দুই বছরে একবার যাওয়া হয়।

বরিশালের একমাত্র সরকারী পার্কটি সিটি কর্পোরেশনের আধুনিকায়নের নামে গাছপালা শুণ্য। যেখানেছিল সুন্দর সুন্দর ইউক্যালিপ্টাস, শিশুগাছ, বকুল,কৃষ্ণচুড়া গাছ-সেখানে এখন বসানো হয়েছে-সিমেন্টের বেঞ্চী আর শিশুদের জন্য কিছু রাইডার।

বিকেলে বরিশালের কীর্তণখোলা নদির তীর ছিল সবস্তরের মানুষের অন্যতম আকর্ষন।এখন সেখানে জনারণ্য। সেই শিশু কালে যখন বরিশালে যেতাম তখন দেখেছি-কচু পাতায় বৃস্টির ফোঁটা, শীত কালে শিশির বিন্দু,বর্ষায় ব্যাঙ্গের ডাক, ব্যাংগাচি, প্রজাপতি, কলমিলতা,বাবুই পাখির বাসা, পালতোলা নৌকা, স্টীমারের হুইসেল, হাওয়াইমিঠা, কাঠি লজেন্স, কটকটি(বরিশালের ভাষায় কডকডি), হটপেটিস, ঘটি গড়ম(একটা বহনযোগ্য বাক্সের ভিতরে কাঠকয়লা জ্বালিত চুলায় গড়ম গড়ম চানাচুড়, হট পেটিস-যাকে বলা হতো ঘডি গড়ম)-যা এখন কিছুই নেই।
বরিশালে আমার অন্যতম আকর্ষন ছিল "গড়বরান"র মিস্টির দোকানের সুস্বাদু রসগোল্লা।অমন সুস্বাদু রসগোল্লা আমি আজ পর্যন্ত অন্যকোথাও খাইনি। আরোছিল 'শশী মিস্টান্ন ভান্ডার'র মিস্টি! গড়বরান মিস্টির দোকানটি কয়েক হাত বদল হয়ে এখন আর নেই, শশী মিস্টান্ন আছে-কিন্তু সেই স্বাদ আর নেই!

এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার স্বপ্নের শহর। হয়ত আমার এবং আমার থেকে প্রবীণদের মৃত স্বপ্ন থেকেই নতুন প্রজন্মের শিশুদের মনে নতুন স্বপ্নের নির্মাণ হচ্ছে। সেই শিশুটিও হয়ত একদিন তার স্বপ্নের মৃত্যুর কথা লিখবে। এভাবে একপ্রজন্মের মৃত স্বপ্নের মাঝে আরেক প্রজন্মের নতুন স্বপ্নের নামই কি প্রগতি? নাকি প্রগতি হচ্ছে পুরনো স্বপ্নের সাথে নতুন স্বপ্ন যোগ হওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫১
৫৭টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×