ব্রিটেনের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ব্যারন অ্যাভেবারি (এরিক লুবক) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া আবার নতুন করে শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। বেলজিয়াম প্রবাসী জিয়াউদ্দিনের সাথে ট্রাইব্যুনাল ১-এর পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের গোপন স্কাইপি সংলাপ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। তার আহ্বানটি ‘বাংলাদেশÑ কন্সপিরেসি টু পারভার্ট দ্য কোর্স অব জাস্টিস?’ শিরোনামে লিবারেল ডেমোক্র্যাট ভয়েজে সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ এবং পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের সদস্য লর্ড অ্যাভেবারি বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নতুন করে শুরুর ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করতে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি পুলিশ বাহিনীর হাতে সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার প্রতিও আলোকপাত করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য গুমসংক্রান্ত জাতিসঙ্ঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার অবশ্যই করতে হবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার পর দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু যে আইনে বিচার করা হয়েছে তা ১৯৭৩ সালে প্রণীত এবং তা আন্তর্জাতিক বিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যুদ্ধাপরাধবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ স্টিফেন র্যাপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিজ, ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, ইউকে পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ, ইউকে বার অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলোর সবাই বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের’ অনুসৃত আইন ও প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, সর্বশেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজামুল হক পদত্যাগ করেছেন। বেলজিয়ামপ্রবাসী ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে তার ১৭ ঘণ্টার গোপন স্কাইপি সংলাপ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সরে দাঁড়ান।
ইকোনমিস্ট পত্রিকা যখন ৫ ডিসেম্বর নিজামুল হককে টেলিফোন করেন, তখন ওই বিচারপতি দৃশ্যত বলেছিলেন, তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কারো সাথেই কথা বলেননি। কিন্তু ইউটিউবের রেকর্ডিংয়ে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি অভিযোগ গঠন, সাক্ষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, কৌঁসুলিদের সাথে সমন্বয় করা এবং বিচারপতি নির্বাচনের মতো বিষয় নিয়ে জিয়াউদ্দিনের সাথে পরামর্শ করেছেন।
নিজামুল হকের স্থানে ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন বিচারপতি ফজলে কবির। তিনি কোনো শুনানি না করেই রায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই রায় কি আসামিপক্ষের সমাপনী যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই মধ্য অক্টোবরে জিয়াউদ্দিনের তৈরি করা খসড়ার ভিত্তিতে হবে?
ইতোমধ্যেই আসামিদের দু’জন টেপকৃত সংলাপের ভিত্তিতে পুনরায় বিচার শুরু করার আবেদন করেছেন। সরকার ওগুলো প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে আদালতের রায় পেয়েছে। অবশ্য আমার দেশ পত্রিকায় ওগুলো প্রকাশিত হয়েছে এবং ইন্টারনেটেও পাওয়া যাচ্ছে। বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে প্রসিকিউশনের এক আইনজীবীকে সরিয়ে দেয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে।
নতুন বিচারপতিকে লিখিত ও মৌখিক উভয় ধরনের বিপুল প্রমাণ সংগ্রহে গতিশীলতা আনার পাশাপাশি এসব সমস্যাও মোকাবেলা করতে হবে।
ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ বলেন, বিচারপতির বিচারকাজের নৈতিকতার মারাত্মক স্খলন নিয়ে ব্যাপক হইচইয়ের মধ্যে মিডিয়া আরেকটি সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কথা ভুলে গেছে। সেটা হলো ৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথ থেকে বিশেষ পুলিশ বাহিনীর সুখরঞ্জন বালী নামের আসামিপক্ষের এক সাক্ষীকে অপহরণ করার ঘটনা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এর পর থেকে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তিনি জীবিত আছেন কি না, তা পর্যন্ত জানেন না তার স্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের স্বাধীন বিচারক ও আইনজীবীবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিয়ারকে এই বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা উচিত। নতুন করে বিচারকাজ শুরুর বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের বিবেচনা করা উচিত এবং বাংলাদেশের উচিত তাদের উপদেশ শোনা। আর গুমসংক্রান্ত জাতিসঙ্ঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের উচিত তাদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকাকে বলা এবং সুখরঞ্জন বালীর গুম হওয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা।