সংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে হরতাল সমর্থন করেও আমার মনের কিছু প্রশ্ন আমি সরকার এবং বিরোধীদলের নেতা-নেত্রীছাড়াও জনগণের উদ্দেশ্যে পেশ করছি
প্রথমতঃ
১. হরতাল গণতান্ত্রিক হলেও হরতালের জনদুর্ভোগ,যানবাহন ও পথরোধ কি আদৌ গণতান্ত্রিক নাকি সংবিধানসম্মত বা আইনসম্মত?
২. হরতাল কি সরকারের বিরুদ্ধে নাকি জনগনের বিরুদ্ধেই করা হয়ে থাকে?
৩. সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল করা হলে জনগনের জান-মালের ক্ষতি করার অধিকার কি সংবিধানে আছে নাকি ক্ষতি করাও উচিত?
৪. হরতালের নামে সরকারী সম্পদ ধংস করা কি সাংবিধানিক নাকি গণতান্ত্রিক অধিকার?
৫: হরতালের নামে নির্দোষ যানবাহন ধ্বংসের অধিকার কোন আইনে বা ধর্মেছে, সেটাও আমাদের জানার অধিকার আছে?
৬. শুধুমাত্র বিশৃঙ্খল ও ধ্বংসাত্মক মিছিল এবং কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা কি অসাংবিধানিক নাকি অগনতান্ত্রিক আচরন?
৬. শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিছিল ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুলিশি একশনও কি সাংবিধানিক নাকি গণতান্ত্রিক আচরন?
দ্বিতীয়তঃ
এসব প্রশ্নোত্তরে যা-ই বলা হোক না কেনো–আমার সাজেশন হলো-
১. শান্তিপূর্ণ ও স্বতস্ফূর্ত হরতাল পালনে কারো বাধা দেয়া যেমন অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক তেমনি অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার সরকারকে শ্রদ্ধাভরে মেনে চলতেই হবে।
২. হরতাল যদি জনগনের বিরুদ্ধেই হয়ে থাকে, তবে সারা দেশব্যাপী তা পালনে আমার অন্তত আপত্তি নেই।
৩. আর হরতাল যদি সরকারের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের ভাষা হয়ে থাকে, তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অধিকার কারো নেই এবং তা অগণতান্ত্রিক।
৪. সরকারবিরোধী হরতাল পালন করতে চাইলে সরকারকে চাপে ফেলার মত রাজধানীভিত্তিক বনধ বা হরতাল পালন করতে হবে, যাতে সারাদেশের মানুষ অহেতুক ভূক্তভোগী না হয়।
৫. তাছাড়া রাজধানীভিত্তিক অবরোধ, সভাসমাবেশ, মিছিল, অনশন ইত্যাদি যা খুশী পালন করা যেতে পারে, যাতে সরকারই কেবলমাত্র চাপে পড়ে সাধারন জনগন নয়।
৬ঃ জনগনের স্বার্থে হরতাল করতে হলেই শুধুমাত্র দেশব্যাপী তা স্বতস্ফূর্তভাবে পালন করা যেতে পারে।
৭. আর হরতালকালে অবশ্যই ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিক্সা, প্রাইভেট কার ইত্যাদি ছাড়াও স্কুল-কলেজ, ভারসিটির গাড়ি অবশ্যই হরতালের আওতামুক্ত রাখতে হবে।
৮. দেশব্যাপী খাদ্য ও তরিতরকারি এবং জীবনধারণ সামগ্রী যেমন মাছ-গোস্ত, ভোজ্যতেলসহ রোগী পরিবহন, এম্বুলেন্স, সংবাদপত্র, বিয়ের গাড়ী, দমকল, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিবহনসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট যানবাহনগুলোকে অবশ্যই হরতালের আওতামুক্ত ঘোষনা দিয়েই তবে হরতাল ডাকতে হবে।
৯ঃ সরকারী দল পুলিশ ছাড়া কোনো্ দলীয় ঠেঙ্গারে বাহিনী নামতে পারবেনা। এমনকি মন্ত্রীরাও হরতালবিরোধী উস্কানী দিয়ে বিশ্বজিৎ হত্যার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন না।
১০ঃ বরং শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনে সক্ষম হলে অস্তিত্বহীন বামদের হরতালের মতোই বিরোধীদেরও অভিনন্দন শিখলে রাজনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসতে পারে।
তৃতীয়তঃ
যারা হরতালের বিপক্ষে এবং হরতাল বন্ধে একাট্টা, তাদের সাথে আমিও সহমত পোষণসত্ত্বেও আমি আইন করে হরতাল বন্ধের পক্ষে নই। তবে গনভোটের মাধ্যমেই এক্ষেত্রে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। কারণ সরকারীদল ক্ষমতায় থাকলে ঘোষণা দেয় যে, বিরোধীদলে গেলে আর হরতাল করবোনা আবার বিরোধীদলে গেলেই সেই হরতাল পালনের মহোৎসবে নামে, যা প্রমাণিত সত্য অন্তত আমাদের দেশে। তাই তাদের কোন বিশ্বাস নেই যে, তারা আইন করে হরতাল বন্ধের পক্ষে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩