somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে বইটির রিভিউ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবারের বই মেলায় অনেক নবীন লেখকদের বই বাজারে এসেছে। ব্লগিং সূত্রে পরিচিত নবীন লেখিকা ‘জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা’র ‘প্রবাসে’ বইটির প্রতি আগ্রহী ছিলাম। লেখিকা যদিও এই বই এর অধিকাংশ পর্ব সামহোয়ারইন ব্লগে আগেই প্রকাশ করেছেন তবে বই প্রকাশের সুবাদে সেগুলোর অধিকাংশই এখন তিনি সরিয়ে নিয়েছেন। প্রবাসে ব্লগ সিরিজটির শুরুর দিকের পাঠক হলেও নিয়মিত পড়া হয়ে ওঠেনি সময়ের অভাবে। মনে আছে প্রথম প্রবাসে সিরিজটি ব্লগে পড়তে গিয়ে ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই শপিং আর ভ্রমণ এর গল্পে ভর্তি আরেকটা গতানুগতিক ব্লগ। কিন্তু প্রথম কয়েক পর্ব পড়ার পর পরে কি হচ্ছে জানার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। ইদানিং ব্লগে বড্ড অনিয়মিত। তাই বই আকারে ‘প্রবাসে’ প্রকাশের কথা জানার পর বইটি বইমেলার অত্যাবশ্যকীয় তালিকায় ঠাঁই দেই। যাই হোক বইটি কিনতে গিয়েছিলাম গত ২১ ফেব্রুয়ারিতে। কিনে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। রাতে খাবার শেষ করে বইটি নিয়ে বসলাম। আর সেটাই হলো কাল। শেষ করে যখন উঠি দেখি বাজে রাত পৌঁনে পাঁচটা। বইটি মোট ১৯ টি পর্বে বিভক্ত। লেখিকার বর্ণনাভঙ্গি সুন্দর, সুখপাঠ্য। কল্পনা করতে সহজ হয়। বইয়ের শুরুটা হয়েছে লেখিকার ইমিগ্রেশন পার হবার পর প্রিয় মুখগুলো আর দেখা না হওয়ার কথা দিয়ে। বইটি আসলে খুব সাধারণ এক মেয়ের আমেরিকায় স্ট্রাগলের গল্প। সেই মেয়ের চোখে আশেপাশের মানুষ দেখার গল্প। এই মানুষেরা প্রেইরী অঞ্চলের একটি ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার সময় লেখিকার আশেপাশেই থেকেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে থাকার কারণেই বইটিতে অনেক গুলো বিষয় উঠে এসেছে। লেখিকাকে আমার সমাজ সচেতন মনে হয়েছে। যেমন একজন পাকিস্তানিকে পেয়ে লেখিকার প্রশ্ন, “তোমাদের পাঠ্যবইতে ১৯৭১ নিয়ে কি লেখা আছে?” বই এর এক অংশে আমরা দেখতে পাই ইরানি যুবকের চোখে ইসলামি শাসনব্যবস্থার সমালোচনা অথচ ইরান নিয়ে তার গর্বের সীমা নেই। আমেরিকান সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের হলিউডি চিন্তাভাবনাও কিছুটা খণ্ডিত হয়েছে বইটিতে। ভালোভাবে ফুটে উঠেছে বর্তমান আমেরিকার হালচাল। আমেরিকানদের সহযোগি মনোভাবের কথাও বারবার এসেছে। বেশ ভালোভাবে এসেছে ভারতীয় আর নেপালি চরিত্রগুলো। সহযোগি মনোভাবের ভারতীয়ের ছবি যেমন পাই তেমনি দেখতে পাই ভারতীয়দের আভ্যন্তরীণ বিদ্বেষ। নেপালি ছেলে সুদীপ কিম্বা বাংলাদেশী মুহিত ভাই এর চরিত্র খুব ই ইন্সপায়ারিং। আরো এসেছে ছোটখাটো নানা মজার চরিত্র। তবে এই আত্মজীবনিমূলক উপন্যাসের অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র নাসরিন। সুদূর প্রবাসে লেখিকার গার্ডিয়ানের ভূমিকা ভালোই নিভিয়েছে এই চরিত্রটি। বই এর প্রায় প্রতিটা পর্বের শেষেই সাসপেন্স ধরে রাখার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। হুট করে বাসার ভিতরে কেউ প্রবেশের ঘটনাটি পড়ে সাসপেন্স মুভির চে কম ফিলিংস পাই নি। লেখিকার সরল বাক্যে হাস্যরস সৃষ্টির আয়োজন ভালো লেগেছে। লাল টমেটো সম্বোধনের মজার চরিত্রটির উপস্থিতি খুব কম হলেও ভোলার নয়। কাহিনীর অনেকটা জুড়েই আছে লেখিকার কর্মস্থল ইমেজ প্রসেসিং ল্যাবের নানান মজার কাণ্ডকাহিনী। অদ্ভুত সব প্রফেসরদের মজার কর্মকাণ্ড ভালো না লেগে উপায় নেই। আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার চমৎকার একটি বর্ণনা পাওয়া যাবে। আরো জানা যাবে কৃষিকাজের সাথে স্যাটেলাইট ইমেজিং এর সম্পর্ক। কৃষিকাজ নিয়ে আমেরিকানদের চিন্তাভাবনার ও চিত্র পাবেন বইটিতে। সবমিলিয়ে বইটি যেমন একজন মানবীর প্রবাস জীবনের ডায়েরি তেমনই আমেরিকার শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রবাসী বাঙ্গালিদের জীবনযাপন, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের এক সুখপাঠ্য অথচ তথ্যবহুল সম্ভার। প্রবাসে যারা উচ্চশিক্ষার্থে আসতে চান তাদের মনস্থির করার জন্য এই খুব সাধারণ বাঙালি নারীর সংগ্রামের কাহিনী ই যথেষ্ট। যেহেতু লেখিকার এটি প্রথম বই তাই প্রুফ রিডিং আর ছাপার কাগজের মান নিয়ে তেমন কিছু বললাম না। লেখিকার জন্য শুভ কামনা। আশা করছি তিনি লেখালিখি কখনোই ছেড়ে দেবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×