somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই এর গন্ধে ছেলেব্যালা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়স তখন পাঁচ। প্রি ইস্কুলিং শুরু করার আগের কথা। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়াস্থ নানাবাড়িতে ঘরময় ছুটোছুটি করতে গিয়ে দেখি ছোটমামা নিশ্চুপে কাপড় ইস্ত্রি করছে। আমাদের দিকে মনযোগ কম। জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম মামা ঢাকা চলে যাচ্ছেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির হলে থাকবেন, আগামী বছর দুয়েক ওখানেই পড়ালেখা করবেন। মন খারাপ হলো। মামা সেবার ক্যাসেট বাজিয়ে প্রথম শুনিয়েছিলেন আজম খান। মনে আছে। মামা চলে গেলেন, আমি চলে এলাম খুলনা... আমার শহর।
অক্ষর চিনতে থাকলাম। মামা পড়াশুনা করতে থাকলেন। কোন এক ছুটিতে খুলনা এসে আমার সামনে ধপাস করে ফেলে দিলেন বিচ্ছিরি মলাটের একটা বই। নাম ভূতের নাম রমাকান্ত কামার। আর ভাইয়ার টা কি সুন্দর মলাটের। লাল একটা পিঁপড়ে আর তার ছায়া এরকম টাইপ মলাট ছিলো। ভারী হিংসে হলো শুরুতে। তারপর সব ভুলে রমাকান্তকামার পড়তে থাকলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত। মামা হিন্টস দিয়েছিলেন ভয় পাবার কিছু নেই। :D পড়া শেষ করে ধরলাম ভাইয়ের গিফট পাওয়া পিপলী বেগম। তিলু, বিলু আর নীলুর গল্প। বর্ষার রাতে রান্নার হাত খারাপ বাবার বানিয়ে বানিয়ে বলার সেই গপ্পো বাচ্চামনে অনেক দিন মিশে ছিলো। লাভ একটা হয়েছিলো অবশ্যি! পিঁপড়ে নিধন বন্ধ হয়ে গেলো আমার আস্তে আস্তে!



লিখতে বসলে আসলে নির্দিষ্ট করে কোন বইয়ের কথা বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যাই হোক এরপর অবধারিত ভাবেই এলো ঈশপ। বড় বোন নীরাপু বারবার তাগাদা দিয়ে কিনতে বললো এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, র‍্যাপুঞ্জেল এরকম ৭/৮ টা সিরিজ বই। বেশ ছবিওয়ালা ছিলো বইগুলি। এভাবেই চলছিলো। একদিন এরাবিয়ান নাইটস এর কিশোর সংস্করণ হাতে এলো। বয়স আরেকটু বাড়লে সমান তালে কমিকস গিলতে থাকলাম। বিল্লু, পিংকি, চাচা চৌধুরী আর শৈশবের সবচেয়ে বড় ফ্যান্টাসী ফ্যান্টম। টাকা জমানোর ধৈর্য ছিলো কম। আম্মার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকতো ব্যাংকার বাবার দেয়া হাত খরচের খুচরো বাণ্ডিল। রোজ সে বান্ডিল পাতলা হতে থাকলো আমার চৌর্যবৃত্তিতে। অবাক করা বিষয় হলো ভূত প্রেত প্রকৃতি এসব নিয়ে পড়লেও কোনদিন মাসুদ রানা বা সেবার বই সেভাবে পড়া হয়নি। দুই একটা গিফট পেয়েছিলাম ওই ই পড়া পর্যন্ত। বাট ইয়েস আই হ্যাভ নেভার রেড মাসুদ রানা!
টুকে টাকে বই পড়া চলতে থাকলো। নাইন এ উঠে আবার আড়মোড়া ভেঙ্গে বই পড়তে থাকলাম। বাসায় থাকা হুমায়ূনী বইগুলি এই ফাঁকতালে শেষ হতে থাকলো। এর মধ্যে সবচে ভালো লেগেছিলো ছায়াবীথি। বই এর শেষ পৃষ্ঠা পড়ে খুব ভালো লেগেছিলো সেদিন।
কলেজে উঠে লাইব্রেরি তে গিয়ে প্রায় সবাই ধার নিলো গিয়াসের ফিজিক্স বই আর আমি ধার নিলাম বঙ্কিমের কপালকুন্ডলা। আহা সে কি শব্দমালা! মনে আছে কিছু কিছুঃ “বিষমোজ্জ্বল জ্বালাবিভাষিত আয়তলোচন প্রান্তে...”, “হেমাম্বুদ কিরিটিনী ঊষা”, “বাঙালি অবস্থার বশীভূত অবস্থা বাঙ্গালির বশীভূত নহে” এইসব!
এরপর কলেজ লাইফেই ধার নিয়ে পড়ে ফেললাম দত্তা। শরৎচন্দ্রের বিজয়া! কি অসাধারণ ছবি আঁকলেন বিজয়ার। প্রেমে পড়েছিলাম। আজো আছি। মজার ব্যাপার হলো বইটা পড়া শেষ করে টেবিলে রেখেছি, বাবা এসে দেখে বললেন, “পড়েছিস? আমার প্রিয় বই এটা, বিজয়া না নায়িকার নাম?” বছর খানেক আগে জলসা বা কোন হিন্দি বাংলা চ্যানেলে দত্তা সিরিয়াল হলে বাবা আগ্রহ ভরে দেখছিলেন। পিতা ও পুত্রের প্রিয় রোমান্টিক ধাঁচের বই হিসেবে দত্তা দুই প্রজন্ম ধরে জায়গা করে নিলো।
টিনেজ লাইফের প্রেমিকার থেকে যে লেখকের সন্ধান পেয়েছিলাম তার জন্যে আমি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশে এমন শক্তিমান লেখক আর জন্মাবেন কি জানি না। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই পড়ার পর কিছুদিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। অসাধারণ তার বর্ণনাভঙ্গী। প্রচলিত সব স্টাইল থেকে আলাদা। এক কথায় স্মৃতির কিছু কোষ তার লেখনীর কাছে আটকা পড়তে বাধ্য। স্বাধীনতাপূর্ব উত্তাল ঢাকা আর একই সাথে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনের যুগপৎ কাহিনীর ভিতর দিয়ে একজন যুবকের মানসিক ভারসাম্যহীনতার গল্প দারুনভাবে বাংলাদেশের কথাই তুলে ধরেছে।
শামসুর রাহমানের কালের ধুলোয় লেখা আমার আরেকটি প্রিয় বই। পুরোনো ঢাকায় একসময় ছিলাম বলে আমার পুরোনো ঢাকার প্রতি সবসময় ই আলাদা একটা টান আছে। এই বইটায় বাতিওয়ালার বাতি জ্বালিয়ে যাওয়ার কাহিনীটা আমার স্মৃতিতে ভাস্মর থাকবে।
আর কবিতার বই তো সবসময় ই প্রিয়। দুঃখের বিষয় সব কবিতার বই ই দেশে রেখে আসতে এক অর্থে বাধ্য হয়েছি। সুযোগ পেলে আনিয়ে নেওয়ার আশায় আপাতত দিন কাটাই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×