somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকাল নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়, এমন অকৃত্রিম দোয়া পৃথিবীর কয়জন মানুষ পায়…

১৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার পর পড়াশুনার চাপে মাঝে মাঝে মনে হত এত পড়াশুনা করার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টসে সহজ কোন বিষয়ে ভর্তি হলে হয়ত জীবনটাকে আরো বেশি উপভোগ করতে পারতাম। তবুও “ডাক্তারি একটি মহান পেশা” এই ব্রতকে স্মরণ করে সকাল সাতটায় উঠে ক্লাশে দৌড়ান থেকে শুরু করে সপ্তাহের একমাত্র ছুটির দিন শুক্রবারে ব্যবহারিক লিখে কাটানো সহ সব কষ্টকে মেনে নিতাম আর ভাবতাম কবে সেই মহান পেশায় সত্যিকারার্থে প্রবেশ করব...

বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। যেদিন মেডিসিন ক্লাব করা শুরু করলাম সেদিন থেকেই ডাক্তারির স্বাদ পাওয়া শুরু করলাম। প্রিয়জনকে হাসপাতালে রেখে প্রতিদিন কিছু মানুষ ছুটে আসে মেডিসিন ক্লাবে রক্তের সন্ধানে। দিনে-দুপুরে সকাল-সন্ধ্যায় রাত-বিরাতে মুঠোফোনে একটি কল পেয়েই ছুটে যাই আর্ত মানুষটিকে তার প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত দিতে। কখনো কখনো মধ্যরাতে রুমের দরজায় করাঘাত করে মানুষ ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে গেছে রক্তের জন্য। প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত পাবার পর মানুষটির মুখ থেকে “বাবা, অনেক বড় ডাক্তার হও” বা “দোয়া করি, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক” এ ধরনের কোন দোয়া অথবা তার মুখের একটি নির্মল হাঁসি... আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে এটাই আমার পরম পাওয়া... মাঝে মাঝে রোগি সুস্থ হবার পর রক্ত নিতে আসা লোকটি ফোন করে জানায়, তখন মনে হয় সত্যি মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটা আসলেই অকৃত্রিম...

৩য় বর্ষে ওঠার পর ওয়ার্ডে ক্লাস শুরু হয়। ওয়ার্ডে নানান ধরনের রোগীর সাথে দেখা হয়। আমি ডাক্তার নই, মাত্র ডাক্তারির হাতে খড়ি হচ্ছে আমার। রোগীদের দেয়া ব্যবস্থাপত্রগুলো দেখে কেবল ধারনা নেয়াটাই ৩য় বর্ষের ওয়ার্ডের পড়াশুনা। যখন নিজেরা রোগিদের History নেই আর স্যারদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র দেখি, রোগী বা রোগীর আত্মীয় জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, রোগ ভাল ভাল হবে তো?” ডাক্তারির সাধারণ ধর্ম হিসেবে সব রোগীকেই বলি, “চিন্তার কোন কারণ নেই, ঠিক হয়ে যাবে”। কারো কোন কঠিন রোগ দেখলে মাঝে মাঝে যোগ করি, “সারতে একটু সময় লাগবে আরকি”। রোগ ভাল হয়ে গেলে হাসপাতাল ছাড়ার সময় রোগীর কাছ থেকে পাই আবারো সেই অকৃত্রিম উপহার, এক চিলতে হাঁসি…

আজকে সন্ধ্যার ঘটনা। এই ঘটনাই আমাকে আজ এটা লিখতে বাধ্য করেছে। গতকাল ৫ বছর বয়সী একটি ছেলের Rectal Polip অপারেশান ছিল। কাল ওটি ক্লাস ছিল, তাই আমিও ছিলাম ওটিতে। বাচ্চাটাকে ওটিতে নেবার পর তার সে কী কান্না! “আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে চল”। স্যার আমাকে “তুমি একটু ওর সাথে কথা বল আর চুপ করাতে পার কিনা দেখ” বলেই পাশের টেবিলের অপারেশানটা একটু দেখতে গেলেন। আমি ছেলেটিকে বললাম, “ভয়ের কিছু নেই বাবু”। ছেলেটি আমাকে আকুতি করে বলল, “স্যার, আমাকে একটু আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন?” তাকে অভয় দিলাম, “খুব অল্প সময় লাগবে, একটু পরেই তোমাকে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাব”। ততক্ষণে স্যার চলে এসেছেন, বললাম, “স্যার, এর মারাত্মক Palpitition (দ্রুত হৃদস্পন্দন) হচ্ছে। ভয় পেয়ে কোন সমস্যা হবে নাতো?” স্যার অভয় দিলেন, “শিশুদের nerve অনেক শক্ত, কিছু হবে না”। Local anrsthesia দিয়ে অপারেশান শুরু হল। স্যার কাজ করতে লাগলেন আর আমি ছেলেটির সাথে কথা বলতে থাকলাম। anesthesia দেয়া থাকায় ছেলেটি কোন কিছু টের পেল না। ইতোমধ্যে আমার ক্লাসের সময় শেষ হয়ে এল। আজ সন্ধ্যায় যখন ওয়ার্ডে গেলাম, আংকেল, আংকেল, একটি ডাক শুনে তাকিয়ে ঐ ছেলেটিকে মায়ের কোলে দেখলাম। কাছে যেতেই ছেলেটি বলল, “মা, এই সেই আংকেল”। ছেলেটির মা বলল, “বাবা, কাল থেকে ও কেবল তোমার কথা বলছে, তুমি নাকি ওকে অনেক আদর করেছিলে”। আরো অনেক কথা হল ছেলেটির মায়ের সাথে। চলে আসার সময় বলল, “কাল সকালে চলে যাব। আর দেখা নাও হতে পারে। আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করো আর তোমার জন্য দোয়া করি, ভাল ডাক্তার হও, বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল কর”। শেষ কথাগুলো আমার কানে এখনো বাজছে। আজকাল নিজেকে সত্যিই অনেক ভাগ্যবান মনে হয়, এমন অকৃত্রিম দোয়া পৃথিবীর কয়জন মানুষ পায়…?
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×