সেই ছোট বেলা থেকেই ভূত, প্রেত, রহস্য গল্প এই সবের প্রতি আমার ব্যাপক আগ্রহ। এই রকম একটি শোনা গল্প আজ শেয়ার করছি। গল্পটা তেমন কিছু না তবুও জ্বীন ভূত বলে কথা!
বড় ভাইয়া ছোটবেলায় গর্ব করে প্রায়ই বলতো- "জানো আমি না পরীর চুল টেনেছি"! আমি বিশ্বাস করতাম না, ভাবতাম হয়তো কোন স্বপ্ন দেখেছে নয়তো মজা করে বলছে। কিন্তু খালা, মামা, অন্য ভাই বোন সবার মুখ থেকে ব্যাপারটার আদ্যপ্রান্ত জানার পর এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম যে কাহিনী সত্য।
ঘটনা আমার জন্মের অনেক আগের। তখন সবে মাত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার মা বাবা ভাই বোন নানা নানী খালা মামা সবাই এক সাথে নানা বাড়ীতেই থাকতেন। খালাদের তখনো বিয়ে হয়নি। আমার দুই খালাই ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। বিশেষ করে মেঝ খালা ছিলেন দূর্দান্ত। তখন মেঝ খালার বয়স চৌদ্দ পনেরোর বেশী হবে না। এই বয়সেই উনার হার্টের অসুখ দেখা দিল। সেই সাথে উনার কথা বার্তায় এবং আচরনে প্রকাশ পেল কিছুটা অসংলগ্নতা। তিনি দেখতেন জানালায় কেউ ছুরি হাতে তাকে মারার জন্য বসে আছে। যা অন্যরা কেউ দেখতে পেত না। এমনি আরো কিছু ব্যাপার যা এখন মনে আসছে না----স্মৃতি প্রতারনা করছে।
আচার আচরনের অসংলগ্নতা দেখে সবাই ধারনা করলো এটা জ্বীন ঘটিত ব্যাপার স্যাপার এবং এক জন জ্বীন বিশারদই পারেন এই অবস্হা থেকে মুক্তি দিতে। অবশেষে এক ব্যাক্তির সন্ধান পাওয়া গেল যিনি জ্বীন বশ করতে পারেন। এই লোকের আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো তার আন্ডারে কাজ করে সাত জন পরী, হুম সত্যিকারের পরী। যাদের কাজ হল রুগীদের চিকিৎসা দেয়া।
তো একদিন সেই জ্বীন বিশেষজ্ঞকে দাওয়াত করা হল। বাড়ীর সবচেয়ে নির্জন এবং ছোট কামরাটি তার আসনের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। সেই ঘরে একটি মাত্রই জানালা। জানালার ঐ পাশে বিশাল হাতির ঝিল, হু হু করে বাতাস এসে লুটিয়ে পড়ে ঘরময়। এই ঘরে তিনি সেই সাত পরীকে ডাকবেন। তারাই চিকিৎসা যা দেয়ার দিবে।
বাইরে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পর্দা টেনে ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করে ফেলা হয়েছে। এমন অন্ধকার যে কিছুই দেখা যায় না। আগরবাতির ছাই রঙা সুগন্ধি ধোয়া বাতাসে ভাসছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে সাদা গন্ধরাজ ফুলের সুবাস। দরজার বাইরে আমার চার/পাচ বছর বয়সী বড় ভাইয়া ভীষন কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। তার একটাই উদ্দেশ্য ঐ দরজা ভিড়ানো ঘরের ভিতর কি হচ্ছে তা জানা।
অনবরত ডাকের ফলে ঐ অন্ধকার ঘরে অশরিরী কারা যেন এসেছে। কত গুলো ছায়া মূর্তিকে দেখা গেল ঘরেরে মাঝ বরাবর গোল হয়ে ঘুরছে। তারা অস্বাভাবিক লম্বা এবং সাদা ধরনের পোশাক পরনে। পুরো ঘর নিথর নিস্তব্দ কবরের মত শীতল। খুব নিকট কয়েক জন আত্মীয় ঘরে প্রবেশাধিকার পেয়েছে। তার মধ্যে আমার ছোট খালাও ছিলেন।
অবস্হা বুঝে ভাইয়া নিঃশব্দে ঘরের ভিতর ডুকে পড়লেন। ডুকেতো অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না, তিনি অন্ধের মত সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন একটা কিছু অবলম্বনের জন্য। হাতের মধ্যে পেয়েও গেলেন কিছু একটা। সেই কিছু একটা যে কি তা বুঝার জন্য তিনি জিনিসটা ধরে দিলেন টান। এমন সময় একটা অপরিচিত নারী কন্ঠ রাগী গলায় বলে উঠল "কে রে আমার চুল ধরে টান দিয়েছে"। আমার ছোট খালা বুঝতে পারলেন কান্ডটা কার, তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন "এ আমার ভাগিনা, বাচ্চা মানুষতো বুঝতে পারেনি, ক্ষমা করে দিন।"
তখন সেই নারী কন্ঠ বলে উঠল "আপনাদের ভাগিনা বলে ছেড়ে দিলাম নইলে.......।" এরপর তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ঐ ঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। প্রানে বেচে যান তিনি। আমার ছোটবেলায় ভাইয়ার কাছ থেকে এই গল্প অনেক বার শুনেছি। আমি খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করতাম-
আচ্ছা ভাইয়া, পরীদের কি ডানা আছে?
--না
ওরা কি অনেক সুন্দর?
--অন্ধকারে বুঝা যায়নিতো
তুমি হাত দিয়ে যেহেতু চুল ধরেছ তাহলেতো ওদের চুল অনেক লম্বা?
-- হুম অনেক লম্বাইতো, হাটু পর্যন্ত হবে।
কেমন লেগেছিল চুল গুলো ধরতে?
-- অন্ধকারের মধ্যে ওটা যে চুল ছিল তাইতো বুঝতে পারিনি। পরী বলার পর বুঝেছি আমি পরীর চুল টেনেছি। অন্য কেউ হলেতো মেরেই ফেলতো বাচ্চা বলে পার পেয়েছি।
আমার ভাবতে ভাল লাগতো ইস ভাইয়ার কি সৌভাগ্য তিনি পরীর চুল টেনেছেন!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪০