বইঃ বক্সার রতন
লেখকঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
প্রকাশকালঃ এপ্রিল, ১৯৮৪
প্রকাশনালয়ঃ আনন্দ
মূল্যঃ ৫০ টাকা
পৃষ্ঠাঃ৯৬
রতন, লাইট হেভিওয়েটে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সম্প্রতি। লাইট হেভিওয়েটের ফাইনালের দিনে রতন লক্ষ্য করলো রিং এর বাইরে দর্শকসারিতে দুইজন সন্দেহজনক বিদেশী বসে আছে। রতন যেখানে যেখানে বক্সিং করতে যায়, এই দুইজন লোকও রতনের পেছনে ছায়ার মত লেগে থাকে। এদেরকে আগেও দেখেছে রতন। সন্দেহজনক এই দুইজন লোকের জন্য রতনের অস্বস্তি হয়,বক্সিং এর রিং এ ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। রতন পরে জানতে পারলো, এই দুই লোকের নাম জন এবং রোলো। তারা রতনকে আমেরিকা নিয়ে যেতে চায় প্রফেশনাল বক্সিংয়ে নামানোর জন্য।
রতনের বাবা ছিলেন বিজ্ঞানী। তিনি সারাবিশ্ব থেকে এনার্জি ক্রাইসিস দূর করার জন্য "হিট অ্যামপ্লিফিকেশন" নামক একটি প্রজেক্ট শুরু করেন। প্রজেক্ট যখন শেষের দিকে তখন তার সহযোগী রবিন ফরডাইক রতনের বাবাকে ওষূধ খাইয়ে পাগল বানিয়ে দেয়। যাতে করে রবিন একাই এই প্রজেক্টের সুফল ভোগ করতে পারে, বিশ্বজুড়ে যেন তার একার সুনাম হয় তাই সে রতনের বাবাকে পাগল বানিয়ে তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু, রবিনও এই প্রজেক্ট শেষ করতে পারেনি। লক্ষ্যের কাছাকাছি থাকা প্রজেক্ট, যেটা বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববাসীর বিরাট উপকার হতো, সেই প্রজেক্ট বিশ্বাসঘাতকতার কারনে মুখ থুবড়ে পড়ে।
রতনের বাবার নাম বাঞ্চারাম। বাঞ্চারাম এখন তার দিদি হৈমবতীর কাছে থাকে। হৈমবতীর বয়স আশির কোঠায়। বাঞ্চারামের চেয়ে বাইশ বছরের বড়। কানে কিছুই শোনেন না হৈমবতী,একবর্ণ কথাও তিনি শোনেন না। তার ভাই বাঞ্চারাম যাই বলুক, কিছু না শুনে তিনি তাতেই সায় দেন। বাঞ্চারামের প্রিয় খাবার রসগোল্লা। আকাশে চাঁদ উঠলেই তার রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করে। দিদির কাছে প্রায়ই রসগোল্লার আবদার করে। দিদি কানে কিছুই শোনেন না তাই আবোলতাবোল বকে যান।
বাঞ্চারামের ল্যাবরেটরিটা এখনো আছে। মাঝেমাঝেই তিনি এখানে আসেন। পাগল হওয়ার আগের স্মৃতি মনে না থাকায় বিভিন্ন জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করে চলে যান। মাঝরাতেও মাঝেমাঝে আসেন তিনি গবেষণাগারে। এরকমই এক মাঝরাতে ল্যাবরেটরি থেকে নিখোঁজ হলেন বাঞ্চারাম।
রতন, রোলো এবং জনের সহায়তায় চললো বাবাকে উদ্ধার করতে। জানতে পারলো, রতনের বাবা বন্দী আছেন মাঝ দরিয়ায় ভাসমান একটা জাহাজে। সেখানে যেতে হলে লাগবে শক্তি, তারচেয়েও বেশি লাগবে চতুর বুদ্ধি।
রতন কী পারবে তার বাবাকে উদ্ধার করতে?
আমার কাছে দারুন লেগেছে উপন্যাসটি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের "অদ্ভুতূড়ে সিরিজ" এর আমি বড় ভক্ত। এই বইটিও আমাকে নিরাশ করেনি। শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনা ছিলো কাহিনীতে। ছোটদের জন্য লেখা হলেও বড়রাও আনন্দ পাবেন সমপরিমানেই। শুরু থেকে শেষতক কোথাও একবিন্দু বিরক্তি লাগেনি। শব্দের বুনোট ছিলো ছিমছাম। নিমেষেই শেষ করার মত একটি বই এটি। অবসর সময়ে দারুন সঙ্গী হতে পারে "বক্সার রতন।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৭