বই: কেউ কেউ কথা রাখে
লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
প্রকাশকাল: ০১/০১/২০১৬
ধরণ: মার্ডার মিস্ট্রি
পৃষ্ঠা: ২৬৯
মূল্য: ২৫০ টাকা
সময়টা তখন বেশ উত্তাল। সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, সারাদেশে অস্থিরতা, নৈরাজ্য। এরকমই একটা সময়ে উপন্যাস শুরু হলো।
একটি খুনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেন দুইজন পুলিশ অফিসার।একজন এই বইয়ের উপন্যাসকথক, যিনি উত্তমপুরুষে কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছেন। আরেকজন পুলিশ অফিসার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, এসএম হায়দার। উপন্যাসকথক তাকে বড়ভাইয়ের মত সম্মান করে। দুইজনের সম্পর্কও দারুন। উপন্যাসকথক তাকে "হায়দারভাই" বলে সম্বোধন করে।
খুনের ঘটনার তদন্তের এক পর্যায়ে তারা খোঁজ পায় হত্যাকারীর। বহু নাটকীয়তার পর সেই হত্যাকারীকে ঐ দুইজন পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। খুনীর কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়। কিন্তু, উপরমহলের নেতাদের সাথে খুনীর জানাশোনা থাকায়, অপরাধ প্রমাণ হওয়া সত্বেও সে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে।
উপরমহলের নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে সেই খুনী। কিন্তু, এ অবিচার ও অন্যায় মেনে নিতে পারেননি এসএম হায়দার। তিনি সেই খুনীকে আবারো গ্রেফতার করে আনেন। থানায় এনে বেধড়ক মারধোরও করেন খুনীকে। যদিও কোনো লাভ হয়নি। খুনী আবারো উপরমহলের নির্দেশে ছাড়া পেয়ে যায়।
এর কয়েকদিন পরেই খুন হয়ে যান এসএম হায়দার। দ্বিতীয় পুলিশ অফিসার, যার ভাষ্যে উপন্যাস এগোচ্ছিলো, তিনি মারাত্মক আঘাত পান হায়দারভাইয়ের মৃত্যুতে। তিনি পুলিশের চাকরী ছেড়ে দেন। গ্রামে গিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি একজন জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হন।
এরপর বহুদিন পরে তিনি মনস্থির করেন, তার এবং হায়দারভাইয়ের অমীমাংসিত খুনের কাহিনীটি তিনি বই আকারে বের করবেন। বইয়ের নামও রেখেছিলেন: কেউ কথা রাখেনি। বইমেলায় বই প্রকাশিত হবে, তোড়জোড় চলছে, এমন সময় তিনি জানতে পারেন একটি অপ্রত্যাশিত সত্য, যে সত্য তার বইয়ের নাম রূপান্তরিত করে "কেউ কেউ কথা রাখে"তে। বইমেলাতেও বইটি প্রকাশিত হতে পারেনি, বইটি প্রকাশিত হয় অদ্ভুত সময়ে, প্রকৃতির খেয়ালমতো।
কী সেই অপ্রত্যাশিত সত্য? কে কথা রেখেছিলো? কী কথা রেখেছিলো? কেনই বা বইটির প্রকাশকাল প্রকৃতির উপর ছেড়ে দিতে হয়েছিলো?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে "কেউ কেউ কথা রাখে" বইতে।
এটা মৌলিক থ্রিলার বললে ভুল হবে। এটা লেখকের নিরীক্ষাধর্মী একটি কাজ। এ কাজে তিনি আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এদুয়ার্দো সাচেরির লা প্রেহুন্তা দে সুস ওহোস (La pregunta de sus ojos) বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন। মূল থিম এই বই থেকে নিয়ে লেখক নিজের মতো করে চরিত্র আর কাহিনী লিখেছেন।
আমার কাছে ভালোই লেগেছে উপন্যাসটি। প্লটটি বেশ ভালো ছিলো। অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করে বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়নি। যথাস্থানে, যথাসময়েই শেষ হয়েছে কাহিনী। তবে কিছু বানান ভুল ছিলো ভীষণভাবে অগ্রহণযোগ্য। বইটির প্রথম সংস্করণ, তাই কিছু ভুল থাকা মোটেও অস্বাভাবিক না। ভবিষ্যতে লেখক এ বিষয়ে আরো সজাগ হবেন বলেই আশা রাখি।
বইয়ের প্রচ্ছটটি অসাধারণ হয়েছে। সাধারণত বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করিনা। তবে ডিলানের এই বইটির প্রচ্ছদটি আমার কাছে দারুন লেগেছে।
একটানে বইটি শেষ হলো। ভালোই লেগেছে, বিরক্তিকর কোনো মুহূর্ত বইয়ের শেষপৃষ্ঠা পর্যন্ত ছিলোনা।
উপভোগ্য একটি বই "কেউ কেউ কথা রাখে।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৯