বই পর্যালোচনা: রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেনি নি
লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনী: বাতিঘর
প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৫
মূল্য: ২৫০ টাকা
প্রথমেই আসি, বইয়ের নামে। বইয়ের নামটাই পাঠককে আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। বইটির নাম পড়েই প্রথম যে প্রশ্নটি আমার মাথায় এসেছিলো, তা হলো, রবীন্দ্রনাথের কী সত্যিই এখানে আসার কথা ছিলো?
এছাড়াও, সুন্দরপুর নামের এক মফস্বল শহরের কৌতুহলোদ্দীপক খাবার রেস্টুরেন্ট "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" শুধুই কী একটি সাদাসিধে খাবারের হোটেল নাকি এর বাঁকে বাঁকে আরো কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? এখানের খাবারের স্বাদ এরকম অদ্ভুত রকমের সুস্বাদু কেন? রেস্টুরেন্টের মালিক মুশকান জুবেরিকে কেন সুন্দরপুরের লোকজন সন্দেহের চোখে দেখে? খাবার তৈরীর সময় মুশকান জুবেরি প্রত্যেক খাবারে সিরাপের মত একধরনের তরল ঢেলে দেন, এই তরল সিরাপটা আসলে কী? রেস্টুরেন্টের এরকম অদ্ভুত নামেরই বা কী কারন?
এরকমই অজস্র প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে সুন্দরপুরে চলে আসেন নুরে ছফা, ডিবি পুলিশের প্রতাপশালী অফিসার, যার ক্যারিয়ারে নেই কোনো অমীমাংসিত কেস। একটি জটিল কেসের তদন্তসূত্রেই মূলত তার এই সুন্দরপুরে আসা। এখানে এসে কাজের সুবিধার জন্য তিনি সাহায্য নেন স্থানীয় ইনফর্মার আতর আলীর, যাকে লোকজন "বিবিসি" বলে ডাকে। আতরকে নিয়ে নুরে ছফা কেসের রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়েন। কাহিনীর অগ্রগতিতে দৃশ্যপটে আসে স্কুল শিক্ষক রমাকান্ত কামার, রহস্যময় গোরখোদক ফালু, সুন্দরপুর থানার এসআই আনোয়ারের মত কিছু চরিত্র। বলাই বাহুল্য, জটিল কেসটির কেন্দ্রবিন্দুতেই আছে "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" এবং তার মালিক মিসেস মুশকান জুবেরি।
কিন্তু, রহস্যের জালের জট ছাড়াতে গিয়ে আস্তে আস্তে নুরে ছফা নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে যেতে লাগলেন রহস্যের জালে। তখন তিনি দ্বারস্থ হলেন প্রাক্তন ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর কেএস খানের।
যারা এই লেখকের "জাল" উপন্যাসটি পড়েছেন, তারা কেএস খান নামক এই ব্যক্তির সাথে তখন থেকেই পরিচিত। এই প্রাক্তন ক্রাইম ইনভেস্টিগেটরের ক্যারিয়ারেও নেই কোনো অমীমাংসিত কেস। চলভাষায় কথা বলা, সর্বক্ষণ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত থাকা, নিজের নাম নিয়ে বিব্রত থাকা এই বৃদ্ধ লোকটির শরণাপন্ন হন নুরে ছফা।
মজার বিষয়, নুরে ছফা এবং কেএস খান দুজনেই তাদের নাম নিয়ে বিব্রত থাকেন সবসময় এবং দুজনের ক্যারিয়ারেই নেই কোনো অমীমাংসিত কেস।
রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে। ঘটনার একপর্যায়ে, নুরে ছফা মুখোমুখি হলেন মুশকান জুবেরির। মুশকান জুবেরির কাছ থেকে জানলেন এক অবিশ্বাস্য ভয়ঙ্কর সত্য ঘটনা। কিন্তু, ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। নুরে ছফা যে ঘটনাটি জানলেন সেটি কাউকে জানাতে পারলেন না, বলা ভালো, জানাবার মত অবস্থায় রইলেন না। কী হলো তার? মৃত্যু না অন্যকিছু?
প্রাক্তন ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর এবং ডিবির দাপুটে অফিসার, এই দুজনের ক্যারিয়ারে কী প্রথমবারের মত "পরাজয়" নামক শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে নাকি এবারেও শেষে এসে অবশেষে ফলাফল মিলে যাবে?
জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
কাহিনীর ক্লাইম্যাক্সে টুইস্ট ছিলো, যেটা বেশ লেগেছে। যদিও এরকম কিছু হতে পারে, আগেই ধারণা করেছিলাম, তবে অযাচিত এবং অভাবিত এই টুইস্টে পাঠক বেশ মজা (ভয়ও পেতে পারেন)পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, বইটি সে ধাঁচেরই। প্রথম থেকেই পাঠককে বইয়ের পৃষ্টার সাথে আটকে রাখার বিষয়টিতে লেখক বেশ সফলই বলা চলে। এই লেখকের সাথে প্রথম পরিচয় "জাল" দিয়ে, এরপর নেমেসিস, কন্ট্রাক্ট, নেক্সাস, কনফেশন, করাচি, ১৯৫২( এগুলোরও বিশ্লেষণ/রিভিউ আসবে পরবর্তীতে) সবই পড়লাম। ভালোই লিখে যাচ্ছেন। তবে, এই বইয়ে লেখক বেশকিছু গালিগালাজ ব্যবহার করেছেন। বলছিনা, এগুলো ব্যবহার করা খারাপ। অনেক লেখকই লেখায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন, আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদেরও বহু লেখায় গালিগালাজের ব্যাপক প্রয়োগ আছে। তবুও, আমার মনে হয়েছে, এই গালিগালাজ বা নোংরা শব্দ যাই বলি না কেন, এগুলো না ব্যবহার করলে লেখার খুব একটা ক্ষতি হতোনা। সব শ্রেণীর পাঠকের কথা মাথায় রেখে, লেখক পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরো সচেতন হবেন বলেই আশা করছি।
"রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি" দারুন উপভোগ্য একটি বই। পড়ে দেখতে পারেন, ভালোই লাগবে আশা করছি।
লেখক এবং পাঠক সকলেরই দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আনন্দময় হোক আপনার/আপনাদের বইপড়া।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭