
দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, মন্ত্রীরা বেকুবের মতো কথা বলছেন। কোন সভ্য দেশের মন্ত্রী এমন বেকুবের মতো কথা বলতে পারে, তা আমরা কখনো কল্পনা করতে পারি না। ব্যারিস্টার রফিক বলেন, দিলীপ বড়ুয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি ড. ইউনূসের নখের যোগ্যও নন।

প্রসঙ্গত, মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, আপনারা যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলতেই চান, তাহলে রাজনীতিতে আসুন, রাজনীতিতে এসে কথা বলুন। এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষকদের মধ্যে ভর্তুকির অর্থ বিতরণের এক অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তিতে নোবেল জয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বলেন, তিনি কাজ করেন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে। পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতিতে। তাকে কেন শান্তিতে নোবেল দেয়া হলো ? কোথায় যুদ্ধ থামিয়ে তিনি শান্তি এনেছেন, কোন মহাদেশে তিনি শান্তি এনেছেন?

ব্যারিস্টার রফিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন। কারণ, ইতিপূর্বে তিনি বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য ঘুষ দিয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্যও শোভন নয়। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কারোরই এমন মন্তব্য করা উচিত না। গুণী লোককে সম্মান দেখাতে হবে, তাহলে নিজেরও সম্মান বাড়বে।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া সম্পর্কে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের ওই মন্তব্য গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দিলীপ বড়ুয়া তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, ‘আমি ড. ইউনূসের নখেরও যোগ্য নই বলে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক যে মন্তব্য করেছেন, তার সাথে আমি পুরোপুরি একমত।

কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সে যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারিনি, ভবিষ্যতেও অর্জন করার সম্ভাবনা নেই।’ গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিল্পমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক আদর্শ হলো জনগণের সেবা করা। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে কত লোক যে বাস্তুভিটা হারিয়েছেন, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন তার খবর শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক না জানলেও দেশবাসী অবগত আছেন।’ বিবৃতিতে শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মন্ত্রী হিসাবে আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নখের সাথে তুলনা করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকার তথা জনগণের সম্মানকে যেভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন, সে বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা তার পেশা ও ব্যক্তি মর্যাদার জন্য কোনোভাবেই সম্মানজনক হবে না বলে আমি মনে করি। তবে এ বিষয়ে আমি সবিনয়ে দেশবাসীর কাছে বলতে চাই, আমি শুধু আমার একটি পরিচয়ের জন্য গর্ববোধ করি। আমি ১৯৬৯ সালের আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী আন্দোলনে ডিফেন্স রুলস্ অব পাকিস্তান এর আওতায় গ্রেফতার হয়েছিলাম। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষায় কথা বলার অপরাধে সে সময় আমার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তার কতটাই শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক জানেন।

অপর দুই রাজনীতিবীদ জনাব আবুল মাল আবুল মুহিত ও জনাব সৈয়দ আশরাফের কোন মন্তব্য জানা না গেলেও তারাও যে জনাব ব্যারিস্টা রফিক-উল-হকের মন্তব্যে প্রীত নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমাদের শ্রদ্বেয় রাজনীতিবীদ ও বিজ্ঞজনেরা যদি এভাবে একের প্রতি অপরে কাদা ছোঁড়া ছুঁড়ি করেন, একে অন্যের অর্জনে কালিমা লেপন করেন তা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে তা নির্দিধায় বলা যায়। সুতরাং গুনিজনের সম্মান বজায় রেখে সকলকে সতর্কতার সাথে কথা বলা আবশ্যক। দুই মিন্ত্রী নোবেল বিজয়ী ড.ইউনুসকে নিয়ে যে মন্তব্য করছেন তা কাম্য নয়, তেমনি কাম্য নয় দুইজন মন্ত্রী সম্পর্কে জনাব রফিক-উল-ইসলামের মন্তব্যও। কাউকে অসম্মান করে নিজে সম্মানিত হওয়া যায়না। তা ছাড়া সাধারণ জনগণের মতোই যদি তাঁরা কথা বলেন ঈর্ষান্বিত হন পরের সম্মানে তা হলে তাদের মাঝে আর সাধারনের মাঝে পার্থক্য রইলো কই। তাই সকল বিজ্ঞ রাজনীতিবীদ ও বিজ্ঞজনেরা গণতন্ত্র ও মুক্ত চিন্তার অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে ভবিষ্যতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান বিবেচনা করে বক্তব্য দিলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।’