
Grand and Holly Mosque of the world
হাদিসে বলা হয়েছে, শয়তান থেকে বাঁচার ঘাঁটি তিনটি। সেখানে শয়তান থেকে, শয়তানি কুমন্ত্রণা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তার একটি হলো আল্লাহর ঘর মসজিদ। আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘আল মসজিদু বাইতুল্লাহ’ মানে মসজিদ আল্লাহর ঘর। শান্তি ও নিরাপত্তার স্থানও আল্লাহর ঘর মসজিদ।

Dome-rock-Mosque, Palestine
কুরআন সুন্নাহর আলোকে হেদায়েত করার ও হেদায়েত লাভ করে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার স্থান মসজিদ। যারা মসজিদে এসে আত্মশুদ্ধি ও হেদায়েত লাভ করতে পারে না তাদের ব্যাপারে আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘তারা কাফেরের মতো আসে কাফেরের মতোই বেরিয়ে যায়।’ আল হাদিস। এখানে সব মুসলমান কুরআন-ভিত্তিক বয়ান শুনবে। কোনটা জায়েজ, কোনটা নাজায়েজ, কোনটি ফরজ, কোনটি হারাম জেনে নেবে। আল্লাহর কাছে তাওবা এস্তেগফার করবে। কান্নাকাটি করবে। মাফ চাইবে। নিজের দুঃখ-যাতনার কথা আল্লাহকে জানিয়ে প্রশান্তি লাভ করবে। নিজের ভুলত্রুটি শুধরিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।

Tokyo-Mosque,Japan
এ জন্যই মসজিদ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। মসজিদ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, মুনাজাত ও প্রার্থনা করার, ইবাদত বন্দেগি ও ফরিয়াদ করার স্থান। ইসলাম, রাষ্ট্র ও সমাজ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মতবিনিময়ের স্থান মসজিদ। জনগণকে ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও মানবিক প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে হেদায়েত প্রদানের স্থান মসজিদ, এ কারণেই সাপ্তাহিক জুমার দিন সব মুসলমানের পাঞ্জেগানার জোহরের নামাজের পরিবর্তে জামে মসজিদে এসে একত্র হওয়া ফরজ এবং ইমাম সাহেবের খুতবা (ভাষণ) শোনার জন্য ওই সময়ে নামাজ পড়া বন্ধ রেখে চুপ থাকা ওয়াজিব। আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘যে একটি মসজিদ বানাবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর বানিয়ে দেবেন।’ আল হাদিস।

Imambara Mosque, India
আল্লাহর ঘর মসজিদে নাজায়েজ ও গুনাহ হয় এমন দোয়া ছাড়া সব ধরনের দোয়াই আল্লাহর কাছে করা জায়েজ। আল্লাহ বলেন, আমি বান্দার কাছেই আছি, বান্দাহ যখনই ডাকে তখনই সাড়া দিই। (আল কুরআন)। বান্দা যখন কাতর কণ্ঠে চোখের পানিসহ আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করে তখন আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল না করে থাকতে পারেন না। তবে শর্ত হলো বান্দাকে অন্তর থেকে দোয়া করতে হবে। দোয়া কবুল হওয়ার আস্থা নিয়ে দোয়া করতে হবে। অন্যায়, অনাচার ও সব ধরনের পাপাচার ত্যাগ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্তর থেকে আল্লাহর কাছে মা চাইতে হবে। তাওবা করতে হবে। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন।

Mosque: Kota-Kinabalu-Sabah-Malaysia
দুনিয়ার জগতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করার, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ জানানোর, মনের গোপন কথাগুলো গোপনভাবে আল্লাহর কাছে ব্যক্ত করার স্থান হলো মসজিদ। এ কারণে মসজিদ তালাবদ্ধ করে রাখা নাজায়েজ। মসজিদে তালা দিলে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ঘরে এসে তার ইচ্ছা ও সুবিধামতো আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তাই মসজিদ সব সময় খোলা থাকবে এটাই নিয়ম। দুঃখের বিষয়, আজ মুসলমান নামধারী মুসলমানেরা আল্লাহর ঘর মসজিদের ওপরও জুলুম করতে ভয় পাচ্ছে না এবং নিজেদের অজ্ঞতার কারণে মসজিদে বা মসজিদের ব্যাপারে এমন অনেক কাজ করছে যা নাজায়েজ।

Sunset Mosque, Madina
আল্লাহর ঘর মসজিদে অবাধে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ যেমন থাকতে হবে, কুরআন-হাদিসসম্মত সব ইসলামী কথাও আল্লাহর বান্দাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে অবাধে বলার সুযোগও থাকতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর ঘর মসজিদ তার স্বীয় মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে। মসজিদ যখন বান্দার ইচ্ছা স্বার্থ ও কথামতো পরিচালিত হবে তখন মসজিদ আল্লাহর ঘর থাকবে না, হয়ে যাবে বান্দার ঘর। এ রকম একটি মসজিদ মদিনায় মুনাফেকেরা তৈরি করেছিল যা আল্লাহর নবী সা: হজরত আলী রা:সহ কয়েকজন সাহাবা পাঠিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন। কারণ তারা সে মসজিদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:৫৭