সকালে ঈদের নামাজ শেষে ঘরে এসে মাকে সালাম করেই তৈরী হয়ে নিলাম। ব্লগের বেশ কিছু আপু আর ভাইদের বাসায় আজ ঈদের দাওয়াত। আমকে অবশ্য কখনোই কষ্ট করে দাওয়াত দিতে হয় না। আমি নিজ দায়িত্বেই তা গ্রহন করি। হাজার হোক দায়িত্ববোধ বলে একটা ব্যাপার আছে না।

চুলে একটু তেড়ছা ভাব দিয়ে ঘর থেকে বেরোতে যাব আম্মা বলল, কিরে ঈদের দিন কিছু মুখে না দিয়ে কোথায় বেরুচ্ছিস?!
- কিছু মুখে দেয়ার টাইম নাই মা। আজ সারা দিন খাইতে খাইতেই যাবে।

- এই মামা যাবা? (একটা রিকশা ডাক দিলাম)
- যামু মামা। কই যাইবেন?
- *******, কত?
- ঈদের দিন বেশী চামু না। পঞ্চাশ টাকা দিয়েন মামা।
- দশটাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা ক্যামনে চাও!

- পঞ্চাশ টাকার কমে যামু না মামা। যাইলে চলেন।
ঈদের দিন রিকশা চালানির কাম। হুদাই ঘুরাঘুরি করি।

ডিং ডং! ডিং ডং!
- ভিতর থেকে আওয়াজ আসল, কে?
- আমি রেজোয়ানা'বু। তোমার বর্গক্ষত্র।

দরজা খুলতেই ধমক খাইলাম, ঐ আমার বর্গক্ষত্র আবার কিরে! আমার তো একটা আছেই। বেদ্দপ! তারপর হাসি মুখে বলল, আয় ভিতরে আয়।
আপুর হাসি মুখই বলে দিচ্ছে আজকে ব্যাপক খানাপিনা হবে

আপার পিছন পিছন ড্রয়িং রুমে ঢুকলাম। সোহামনি দেখি কাছিম ছানা নিয়ে খেলতেছে আর এই ঈদের দিনেও আপার কম্পুতে সামু ওপেন। সোহামনিরে কোলে নিয়া আদর করতে করতে বললাম, কি করতেছো আপা। নতুন কিছু লিখতেছো নাকি?
- আর বলিস না! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর ভৌতিক ক্যাসেলগুলা নিয়া একটা পোস্ট দিব ভাবছি।
- বলো কি! ঈদের দিনেও তুমি পুরানা দালান বাড়ী নিয়া পৈড়া আছো।


- আর রান্না বান্না। কাল রাতে বসেছি এখনো শেষ করতে পারছি না।
আর পুরানা দালান বাড়ী কি রে! জানিস এই সব ক্যাসল গুলার ঐতিহাসিক মুল্য। এখন যেই ক্যাসল নিয়ে লিখছি সেটা হলো স্কটল্যান্ডের Eilean Donan. সম্রাট আলেকজান্ডারের নির্দেশে ১২৬০ সালে ক্যাসলটি নির্মিত হয়। পরে ১২৬৩ সালে Largs এর যুদ্ধের কৃতিত্বের পুরস্কার হিসেবে তৃতীয় আর্ল আব ডেসমন্ড...
- আপা আমার খিদা লাগসে।

- এইজন্যই তোদের দিয়ে কিছু হবে না। ভাল কিছু শুনলেই তোদের ঘুম পায় নয়তো খিদা লাগে।

- বিরিয়ানী করবা মানে! কিছু কর নাই!

- সময় পেলাম কই। বললাম না লেখাটা নিয়ে কাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম।
- আচ্ছা তুমি লেখা শেষ করো। আমি না হয় একটু ঘুরে আসি।
- আসিস কিন্তু। আর সময় করে লেখাটা পড়িস। অনেক কিছু জানার আছে।
- আচ্ছা। ( হ! ঈদের দিন খানা দানা ফেলে তোমার লেখা পড়ে সময় বরবাদ করি আর কি!


এখন কোথায় যাওয়া যায়। ভাবলাম বিলাইপুর জঙ্গলে একটু ঢু মারি। যেই ভাবা সেই কাজ। সোজা বিলাইপুর বাসায়। দরজায় নক করতেই ভিতর থেকে কে যেন চিল্লায়া উঠল, ওঃ.. ওঃ.... ওঃ........। তব্দা খেয়ে কোন রকমে নিজের নাম বললাম। দরজা খুলে দিল ছ'ফুট লম্বা এক লোক। মাথায় তেল সাবান না পড়া ইয়া লম্ব লম্বা চুল, এই ঈদের দিনেও পরনে হাঁটু অব্দি নেংটি


- ওঃ.. ওঃ.... ওঃ........(সেই সাথে কোমর থেকে খপ করে ছোরা বের করলো।)
- মাবুদে এলাহী! করেন কি আপনি!!


সালামির আশা বাদ দিয়ে কোন দিকে না তাকিয়ে পিছন ফিরে দিলাম ভোঁ- দৌড়। জান হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছি এই সময় পিছন থেকে শুনি বিলাইপা সমানে চেঁচাচ্ছে, চতুষ শোন, শুনে যা। ভয়ের কিছু নেই, আমি আছি তো। শোন... । কিন্তু আমার অত শোনার সময় নাই। জান বাচাঁনি ফরজ!
বড় রাস্তায় এসে হাঁফাতে লাগলাম। উফ! অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। খিদেটাও তখন মাথা চাড়া দিয়েছে।

- ঈদ মোবারক আপা।
- ঈদ মোবারক চতুষ। কেমন আছো?
-ভাল না। এইমাত্র জানের উপর দিয়ে খতরা গেল। আর এখন তো খিদেয় জান যায় যায় অবস্হা। তোমার বাসায় আসতেছি। আয়োজন কি বলো?
- আরে এখন কি আসবে। আমি তো এখন পার্লারে।
- ঈদের দিন তুমি পার্লারে কি কর! আজিব!!
- আরে একটু সাজব না। গত একসপ্তা তো পার্লারেই ছিলাম। এখন চুলে প্যাক লাগিয়ে স্টিম দিব, তারপর ....... তারপর ........
- তা এগুলা শেষ হতে কয়দিন লাগবে?

- কয়দিন কিরে চতুষ গতুষ! এই বড় জোর পাঁচ ছয় ঘন্টা। রাতে আসো। তোমার প্রিয় চিকেন কেশ্যুনাট সালাড, হাড়িকাবাব, স্পেশাল কড়াই গোস্ত, জর্দা, ফিরনী, চিকেন বল, সিজলিং বিফ আর ফ্রুট চার্ট সব আইটেমই রেডি থাকবে।

- থ্যাংকস!

ধুর! আজকের দিনটাই কুফা। আচ্ছা ভেবুর বাসায় যাই। ও নিশ্চয়ই হতাশ করবে না। দরজায় নক করতেই ভেবু দরজা খুলল।
- আরে চতুষ যে! এসো এসো ভেতরে এসো।
- কি করো?
- একটা পোষ্ট লিখছি। ''যেসব ব্লগারদের এখনো আমার লিংকসে নেয়া হয় নি''।
- লিষ্টের শুরুতে নিশ্চয়ই আমার নাম আছে।

ভেবু একটু লজ্জার হাসি হাসলো, আসলে...
- থাক থাক আর কারন দর্শাতে হবে না। ঈদের দিন। কি খাওয়াবা বলো?
- ওমা! আজকে ঈদের দিন নাকি!!
-


- শোন, শোন। আমার লেখাটায় কমেন্ট দিও কিন্তু।
-


এখন কোথায় যাওয়া যায় ভাবছি। না আজকে কপাল সত্যি খারাপ! শুনেছি নিজ জমিদারি দেখা শোনার জন্য দেশে আসছেন আমাদের হোদল রাজা। এই তো সুযোগ! রাজবাড়ীর শাহী খানাদানা। রাজ দরবারে ডুকেই দেখি মন্ত্রী, উজির- নাজির, পাইক- পেয়াদা বেষ্টিত হয়ে হোদল রাজা এক বিরাট সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর বিশাল ভুড়ি খানা নিয়ে।

বললাম, আপনার দরবারে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি রাজা মহাশয়।

- বলো আজকের এই খুশির দিনে তুমি কি খেতে চাও?
- মহারাজের যা মর্জি। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে

এবার হোদল রাজা তাঁর দয়া বিবির দিকে তাকিয়ে বললেন, দয়া বিবি, তবে চতুষের জন্য তুমি তোমার ইস্পিশাল পুডিং এর ব্যবস্হা কর।

- নাউজুবিল্লা।


ও আমি ফাইসা গেছি...
আমি ফাইসা গেছি...
মাইনকার চিপায়।



সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৬