ছোট বেলায় বার্ষিক পরীক্ষা কেমন হবে তার চেয়েও বুঝি বেশী টেনশন ছিল পরীক্ষা কখন শেষ হবে। পরীক্ষা শেষ মানে পরদিনই মামাবাড়ি- প্রায় দু'মাসের জন্য।
আর মামা বাড়ী মানেই মুক্ত স্বাধীন জীবন। যে আম্মু বছরের দশটা মাস আমাদের দুই ভাইরে কঠিন রিমান্ডে রাখতেন


আমার বড় দুই খালার ছেলেরা অর্থাৎ খালাত ভাইয়েরাও এইসময় চলে আসত মামাবাড়ি। আমরা সব সমবয়সী খালাত ভাই আর একমাত্র মামাত ভাই নিপু ( সেইসময় আমাদের কোন মামাত বা খালাত বোন আছিল না। তাই মেয়ে বিষয়ক কুন জটিলতাও



এই সময় মামাবাড়ী থাকার আরেকটা বড় সুবিধে হলো বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট আমরা মামাবাড়ী বসেই পেতাম। তাই রেজাল্ট নিয়ে আব্বুর ধমকিধামকির ভয়ও ছিলনা।

এইরকম একদিন সকাল বেলা দশটা এগারটার দিকে আব্বু ফোন করেছে, ওদের ত রেজাল্ট দিল।
আম্মু বলল, কার কি অবস্থা ?
- আমার চতুষ্কোন আগের মতই, চারে ছিল চারেই আছে।
আম্মু বলল, রনির রেজাল্ট কি ? (আমার বড় ভাই)
- তোমার ছেলে পচিঁশ থেকে সাতাশে গেছে।
আম্মু ঠেস দিয়া কইল, রেজাল্ট ভাল করলে তোমার ছেলে আর খারাপ করলেই আমার।
আব্বু হয়ত ওপাশ থেকে ভাব নিয়া কইছে, আমার ছেলে কখনও খারাপ করে না।
আম্মু এপাশ থিকা জাঝা মারল, এ্যাঁ কি আমার মহাপন্ডিত !!
আমি পাশ থেকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মু আমার রেজাল্ট কি ?
আম্মু কইল,তুমি আগের মতোই আছো। ( বুক থিকা যেন একটা পাত্থর নামল )

এইবার ভাইয়া মিনমিন কইরা কইল, আমারটা ?
আম্মু ঝাড়ি দিয়া কইল, তোমার উন্নতি হইছে। পঁচিশ থেকে সাতাশ এ গেছ। পিছন থিকা মামা আইয়া কইল, দুরঃ দুই-তিন এদিক ওদিক কিছু না। এইবার তিন পা পিছাইছে আগামী বার ছয় পা আগাবে। কি মামা আগাবি না ?
ভাইয়া মাথা নেড়ে জানাল আগাবে। ( মাথা নাড়ানো দেখে মনে হলো কনফিডেন্স বড়ই কম )
মামা বাকী সব ভাইগো উদ্দেশ্য কইরা কইল, এদের রেজাল্ট ভাল হইছে। সবাই চল, বাবুর হাট বাজার গিয়া মিষ্টি খামু। এই কথা শুইনা সবাই ত ফাল দিয়া উঠল আর আমাদের দুই ভাইয়ের অসাধারন

বাবুর হাট বাজার গিয়া বুজলাম মামার আসল উদ্দেশ্য কি আছিল। আমগো সবডির মাথায় কদমছাট দিয়া

ডুবাইতে ডুবাইতে চোখ লাল কইরা ফেলছি এমন সময় আইল মরার বৃষ্টি। মামা কইল, কাপড় চোপড় ভিজব। তাড়াতাড়ি ঘরে চল।
দুপুরে ভাত খাইতে বসছি; মামা তার সব ভাগিনাদের উদ্দেশ্য কইরা কইল, মামা ভাল না মামানি ভাল ? (এই প্রশ্ন মামানির সামনে হরহামেশাই করেন)।
আমরা একসাথে আওয়াজ দিয়া কইলাম, মামা।
মামা কইল, মামা ভাগিনা যেখানে বিপদ নাই সেখানে।এই কথা আমরাও সুরে সুর মিলাইয়া কইলাম।
আমি একফাঁকে আস্তে কইরা কইলাম, মামানিও ভাল। মামানির রাজা বাদশা আর চোরের গল্প না শুনলে আমার রাতে ঘুম আসে না।
মামা খেইপা গিয়া কইল, যা! তুই আমার ভাগিনা না। তোর মামানির ধারে যা।
মন খারাপ কইরা মামার পাশ থেকে উঠে মামানির পাশে গিয়া বসলাম। মামানি আমারে কাছে টাইনা কইল, এইটা আমার সবচে লক্ষী ছেলে। সংগে সংগে মন পুরা ভাল হয়ে গেল

দুপরের খাওয়া শেষ অথচ বাইরে বৃষ্টি থামার নাম নাই। আকাশের কপালে আজকা ঠাডা পড়ছে

হঠাৎই শুরু হলো রাজ্জক কবরীর বৃষ্টি ভেজা হেভ্ভী রোমান্টিক একটা গান। সেই গান দেইখা মামানির মনে কী হইল কে জানে মামারে কইল, দেখছ কি সুন্দর গান গাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। কী রোমান্টিক !
মামা কইল, এইখানে রোমান্টিকের কি আছে ?
মামানি মুখ ঝামটা দিয়া কইল, এইসব তুমি কি বুঝবে, তোমার মধ্যে এসব থাকলে ত।
- বুঝুমনা মানে! রাজ্জাকের এই ছবিও আমি হলে গিয়া সাত বার দেখছি।
- বুঝ বলেইতো খাওয়া-দাওয়া, ঘুম আর ব্যবসা। এছাড়া তোমার দুনিয়ায় আর কিছু নাই।
তখন খুব বেশী ছুডু আছিলাম। মামা মামানির কথার মানে বেশিরভাগই বুঝি না কিন্তু এইটুক বুঝছি পরিস্হিতি সুবিধার না।
মামা আর কোন কথা না বইলা আমগোরে অবাক কইরা দিয়া দুইহাতে মামানিরে কোলে তুইলা নিয়া কইল, চল বৃষ্টিতে ভিজি।
মামানি ভীষন লজ্জা পাইয়া কইল, আহঃ ছাড় ! কি কর ভাগিনাদের সামনে !
মামা কইল, তুমি ভাগিনাদের সামনে আমার রোমান্টিকতা নিয়া প্রশ্ন তুলছ। আজকে দুইজনে মন ভইরা বৃষ্টিতে ভিজুম। বইলাই মামানিরে পাঁজকোলা কইরা নিয়া গেল বাইরের উঠানে।
দুর ! রাজ্জাক কবরী বাদ। আমরাও পিচ্চি সবগুলান ছুটলাম মামার পিছন পিছন। মামা মামানিরে নিয়া উঠানের মাঝখানে ভিজতেছে আর মামানি কবরীর মতো লাজুক হাসি দিয়া দু'হাতে মামার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। ঝুম বৃষ্টিতে কী অপূর্ব রোমান্টিক সিন।
আমরাই বা বাদ যাই কেন। সবগুলা বান্দর লাফ দিয়া গিয়া পড়লাম উঠানে। তারপর মামা মামানির সাথে সেই জল কাদা বৃষ্টিতে মাখামাখি গড়াগড়ি.................
আহঃ মাঝে মাঝে ভাবি কতইনা সুন্দর আছিল সেই দিনগুলা।