somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একখানা লেখা না হয় রইল নামহীন

০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্কেটে গিয়েছিলাম। ওখানে যাওয়াটা পৃথিবীর অষ্টমাশ্চর্য নয়। কিন্তু ফেরার পথে লোকজনের অবাক চাহনী দেখে নিজেকে আজব কোন চিড়িয়া বলে ঠাহর হল। অবশ্য আমার চাহিদা শুনে স্যুট-জামার দোকানের কর্মচারীরাও বেশ বজ্রাহত হয়েছিল। আমি যখন তাদের গিয়ে বললাম, 'ভাল ওম হবে এমন স্যুয়েটার আছে? উলের স্যুয়েটার হলে ভাল হয়।' তখন তারা আক্ষরিক অর্থেই চোখ কপালে নয়, একেবারে মাথায় তুলল। ভাত খেতে বসা এক কর্মচারী সবে মাছের চোখ মুখে দিতে যাচ্ছে তখন। বেচারা আমার কথা শুনে গ্রাস তুলতে যাওয়া হাত দিয়ে মাথা চুলকানো শুরু করে দিল। যে মাছের চোখ যাওয়ার কথা ছিল তার পেটে, তা চলে গেল হতভাগার মাথায়। যাকে বলে একদম চোখ মস্তকে টাইপ কান্ড।
স্যুয়েটার কিনতে আসার পেছনে বাতেন সাহেবের ভুমিকাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বাতেন সাহেবকে আসলে বাতেন সাহেব নয়, বলা উচিত বাতেন মিয়া। একখানা ছোট-খাটো ঝুপড়ি আকারের হোটেল চালায় সে। সে নিজেই তার হোটেলের মালিক, নিজেই তার হোটেলের ওয়েটার, নিজেই তার হোটেলের বাবুর্চী। তার কর্মস্থান ঐ ঝুপড়ি, বাসস্থানও ঐ ঝুপড়ি। খদ্দের বলতে আছি আমিসহ আমার গোত্রীয় হাতে গোনা ছন্নছাড়া কয়েকজন। এই ধরনের লোককে কেউ সাহেব বলে না। সাহেব বলে বড়লোকদের। বড়লোকের নামের সাথে যদি মিয়া যুক্তও থেকে থাকে, তাও আমরা তাকে মিয়া বলে ডাকি না, সাহেবই বলি। অন্যদিকে গরীবের নাম যদি সাহেবও হয়, তবুও আমরা তাকে কাটা-ছেড়া করে সাবু মিয়া বানিয়ে ফেলতে দেরি করি না।
তো এই স্যুয়েটার কিনতে আসার পেছনে বাতেন সাহেবের থুক্কু বাতেন মিয়ার ভুমিকাকে ছোট করে দেখার সু্যোগ নেই। ভাত মাখতে মাখতে যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
'বাতেন ভাই। এই যে সারাদিন চুলার সামনে বসে কাজ করতে হয়, গরম লাগে না?'
'কিয়ের গরম? আরামই লাগে।'
'বলেন কি? লোকে ঘরে ফুল স্পীডে ফ্যান ছেড়ে গরমে অস্থির, আর আপনি এই ঝুপড়িতে আগুনের মধ্যে বসে কিনা বলেন আরামই লাগে!'
'এইডা হইল গিয়া অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথরের লাহান একডা ব্যাপার। হালকা গরমে আমরা কাহিল হইয়া পড়ি, মইরা যামু মইরা যামু করি, কিন্তু বিতাছাড়া গরমে তেমন বেদিশা হই না। উল্টা কেমন একটা আরাম আরাম ভাব লাগে।'
'তার মানে আপনি বলতে চান বিতাছাড়া গরম পড়ে নাই এখনো?'
'উহু। বিতাছাড়া গরম আমগো দ্যাশে পড়ে না। বিতাছাড়া গরমের কারবার মরুর দ্যাশের লগে। আমরা আগুনের সাহায্যে বিতাছাড়া গরমের হালকার উপর ঝাপসা একটা স্বাদ পাইতে পারি মাত্র।'
আমি আগুনের দিকে কাছিয়ে এলাম। বিতাছাড়া গরমে আরাম লাগছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলাম। বুঝতে পারলাম না। প্রথম অভিজ্ঞতা বলেই হয়ত ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছি না ব্যাপারটা। বাতেন মিয়াকে বলতেই সে আমার সাথে সহমত পোষণ করল। তার সাথে শলা-পরামর্শ করেই স্যুয়েটার কেনার এই পদক্ষেপ। সারাদিন তো আর বাতেন মিয়ার হোটেলে গিয়ে পড়ে রইলে চলবে না।
সারা মার্কেট ঘুরে যখন স্যুয়েটার পেলাম, ততক্ষণে আমি কাকভেজা। বৃষ্টিতে না, ঘামে। ভেবেছিলাম গ্রীষ্মের এই দুপুরে স্যুয়েটারের কাস্টমার পেয়ে পানির দরে বিক্রি করে দেবে। এরা চেয়ে বসল বৃষ্টির দর। তীব্র দাবদাহে বৃষ্টির যেমন দর বেড়ে গেছে, তেমনি বাজারে স্যুয়েটার সংকটের সুযোগ নিয়ে এরাও এদের স্যুয়েটারের দর বাড়িয়ে দিল। তবে আমার একটানা ঘ্যানর ঘ্যানরের কারণে শেষ-মেশ মেঘের দরে মীমাংসা হল।
স্যুয়েটার পড়ে যখন মার্কেট ছেড়ে বের হলাম, নিজেকে কেমন হিমুলাইক ক্যারেক্টর বলে মালুম হল। কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার আক্কেল গুড়ুম। ঈশান কোণে ঘন-কালো মেঘের ছোটাছুটি। দমকা হাওয়ায় ধুলো-বালিরা সব নৃত্য জুড়েছে যেন। বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টির আগমনী সংকেতে ছেলে-পুলেরা রাস্তায় মাতম তুলেছে। গুড় গুড় গুড়... মেঘের ঐ ধ্বনী কি গর্জন, না উল্লাস? আমার কি আনন্দিত হওয়া উচিত? বৃষ্টিতে ভেজা হয় না অনেকদিন। কিন্তু ভেজাটা কি ঠিক হবে আমার? নতুন স্যুয়েটার পড়ে একজন মানুষ বৃষ্টিতে ভিজছে, দৃশ্যটা কি খুব দর্শনীয় হবে? তীক্ষ্ণ শব্দে বাজ পড়ল কাছে-পিঠে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হল, ভিজিয়ে দিল আমায়। কাকতাড়ুয়ার মতো অনঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম দ্বিধান্বিত আমি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×