মানবজমিন ডেস্ক: ঢাকার শাহবাগ স্কয়ারে জেগে উঠেছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা মানুষ। নতুন এই শতাব্দীতে ধর্মনির্ভরতা নির্মূল করতে ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধর্মনিরপেক্ষতা একটা— প্রয়োজন। লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক, কলামনিস্ট নিক কোহেন। রোববার ‘দ্য অ্যাগোনিস অব বাংলাদেশ কাম টু লন্ডন’ শীর্ষক ওই মš—ব্য প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন- ঢাকার শাহবাগ পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের তাহরির স্কয়ারে। লাখ লাখ তর“ণ, যুবক প্রতিবাদকারী সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তারা কট্টর ইসলামপন্থিদের বিরোধিতা করছেন। এমনকি তাদেরকে সহানুভূতিশীল রাজনীতিকরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতার খবরে প্রতিবাদী জনতা তাদেরকে তোয়াক্কা করছে না। এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ও অবহেলিত মূল্যবোধ যে ধর্মনিরপেক্ষতা তার দাবিতে তৃণমূল পর্যায় থেকে নেমে এসেছে মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম এ আন্দোলন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পশ্চিমারা যে অপরাধের সঙ্গে এক সময় জড়িত ছিল তাদের বির“দ্ধে শাহবাগের এই আন্দোলন। পশ্চিমারা এর বির“দ্ধে একবার দুঃখ প্রকাশ করেই এ বিষয়ে ভুলে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের বির“দ্ধে যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার নিয়ে ঢাকার তর“ণ সমাজ জেগে উঠেছে। জামায়াতের ওই সদস্যদের অপরাধ বোঝার জন্য বামপন্থিদের একটি শব্দ ব্যবহার করা যায়- ‘ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী’ (ক্লারিক ফ্যাসিজম)। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকি¯—ান বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে শাসক গোষ্ঠীর বির“দ্ধে র“খে দাঁড়িয়েছিল। পাকি¯—ানি বাহিনী তাদের জবাব দিয়েছিল গণহত্যা ও গণধর্ষণ দিয়ে, যা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিল। জর্জ হ্যারিসন ও রবি শঙ্কর বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে (নিউ ইয়র্ক) কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের হত্যা, উদ্বা¯—ুদের চাপ ও পাকি¯—ানকে দুর্বল করে দেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তখন নিজের রাজনৈতিক জীবনের সেরা কাজটি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। নির্যাতিত বাংলাদেশকে ¯^াধীনতায় সাহায্য করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাংলা নিউজ গতকাল নিক কোহেনের লেখাটির অনুবাদ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সে সময় পাকি¯—ানি দখলদারদের প্রতি পদ¶েপে সমর্থন করে সক্রিয় ইসলামপন্থিরা। জামায়াত আবুল আলা মওদুদীর পথ অনুসরণ করে, যাকে ইসলামী রাজনীতির দিকপাল বলা হয়। খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশ্বযুদ্ধ চেয়েছিলেন মওদুদী। পাকি¯—ান ভেঙে গেলে তার এই বৈশ্বিক বিপবের ¯^প্ন ভে¯ে— যায়। এর বদলা হিসেবে ডেথ স্কোয়াড গঠন করে মওদুদীর অনুসারীরা। হত্যা করে দেশের বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, প্রশাসক, শি¶কদের, যাদের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠতো ¯^াধীন বাংলাদেশ। জামায়াতের এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য অনেক দেরিতে গঠিত আদালতের বিচারকে কেন্দ্র করেই এখন জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে দু’রকম চিš—া-ভাবনা দেখা যাচ্ছে দেশটির উদারপন্থিদের মধ্যে। একদিক দিয়ে তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে তর“ণদের দৃঢ়তা ও সাহসের প্রশংসা না করে পারছেন না। অন্যদিকে, একই দৃঢ়তার সঙ্গে তর“ণরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের কোন ¶মা নেই। তাদের মৃত্যুদÊ চাই। আপনি কি এমনটা ভাবছেন যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, যুদ্ধাপরাধ অনেক আগের কথা? বৃটেনের বাংলাদেশীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে প্রচুর দ্বন্দ্ব রয়েছে। শাহবাগের সঙ্গে জামায়াতের দ্বন্দ্বের রেশ লন্ডনেও পৌঁছেছে। ৯ই ফেব্র“য়ারি ইস্ট লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল রোডের আলতাব আলী পার্কে জড়ো হন শাহবাগ-সমর্থকরা। সেখানে একই সঙ্গে অবস্থান নেয় জামায়াতও। আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, তারা আমাদের ওপর পাথর নিয়ে আক্রমণ করেছে। সেখানে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা ছিল। কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। অন্যদের নিয়ে সোমবারই আবার পার্কে যান আন্দোলনের জন্য। তবে তার সঙ্গীরা কিছুটা শঙ্কিত। শুক্রবার রাতে শাহবাগের সক্রিয় কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন লন্ডনের আন্দোলনকারীরা। এই হোয়াইট চ্যাপেলেই সমাজতন্ত্রী ও ইহুদিরা বৃটিশ ফ্যাসিস্ট ইউনিয়নের বির“দ্ধে র“খে দাঁড়িয়েছিল। বামপন্থিরা অবশ্য একে নাৎসিবিরোধী আন্দোলন হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আধুনিক বিশ্ব যেখানে চরমপন্থিদের সঙ্গে নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বৃটিশ বামপন্থিদের অবস্থান কোথায় আমার কাছে পরিষ্কার নয়। উদারনৈতিক বহুসংস্কৃতিবাদের ভেতরেই এর অ¯^ীকৃতির বীজ রয়েছে। এটি হয় উদারনৈতিক নতুবা বহুসংস্কৃতিবাদ, কিন্তু দু’টোই হতে পারে না। বহুসংস্কৃতিবাদ মানে এই নয় যে, বর্ণবাদ কিংবা সামপ্রদায়িকতার শিকার না হয়ে সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, এর সুবিধা নিয়ে সমাজ তাদের সুবিধামতো নেতাদের বেছে নিয়ে সম্মানিত করছে। বৃটিশ ইসলামের ¶েত্রে প্রশ্রয় পাওয়া দলটি হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এমনকি তাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। ‘অপাস ডাই’ যেমন বৃটিশ ক্যাথোলিসিজমকে প্রতিনিধিত্ব করে, শিবসেনা যেমন বৃটিশ হিন্দুত্ববাদকে প্রতিনিধিত্ব করে, তেমনি জামায়াতে ইসলামী বৃটেনে ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর এসবের জন্য বামপন্থিদেরই দায়ী করতে হবে। কেন লিভিংস্টোন ও জর্জ গ্যালওয়ের মতো রাজনীতিকরা জামায়াতের ইস্ট লন্ডন মসজিদে সহায়তা করেছেন, ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ নামে জামায়াতের সংগঠনটিই টাওয়ার হ্যামলেটের স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। কুইলিয়াম ফাউন্ডেশনের উদার মুসলমানরা আমাকে বলেছেন, বৃটেন জামায়াতকে এমন একটা স্থান দিয়েছে, যার ফলে বৃটিশ বাংলাদেশীরা সামাজিক গণতন্ত্রের বদলে মৌলবাদী ইসলামের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। বৃটিশ-এশীয় নারীবাদী গীতা সেহগাল ধর্মান্ধতার আগ্রাসন রোধে গত সপ্তাহে সেন্টার ফর সেক্যুলার স্পেস চালু করেছেন। তার মতে, জামায়াত ঐতিহ্যগত বিশ্বাসকেই বিকৃত করে। গীতা সেহগালই ১৯৯০ সালে চ্যানেল ৪-কে বৃটেনে বসবাসরত জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের নাম জানিয়েছিলেন। তিনি জওয়াহরলাল নেহর“র নিকট আত্মীয় (গ্র্যান্ড নিস) ও ইন্দিরা গান্ধীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমি সেহগাল ও কুইলিয়ামকে প্রচÊ শ্রদ্ধা করি, কিন্তু মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না। এমনকি বামপন্থিরাও তাদের ঘৃণা করে। ওই প্রতিবেদনে তিনি আরও লিখেছেন, বেশির ভাগই বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে কথা বলতে চান না। এগুলোকে রাজনৈতিক গণহত্যা বলে ভুলে যেতে চান। কিন্তু ঢাকা ও লন্ডনের এসব আন্দোলন থেকে এটা স্পষ্ট যে, অপরাধ কখনও ভোলা যায় না। উদারপন্থিদেরও এবার কোন একটি পথ বেছে নেয়ার সময় এসেছে। তারা ভুল কোন পথ বেছে নেবে না- এটাই আমাদের আশা।
Click This Link