বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্য ছাত্রলীগের এক স্থানীয় নেতা বললেন, তাঁর সংগঠনেরই আরেকটি অংশের কয়েকজন কর্মী বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন, এমনকি তাঁরা ওই নেতার বাড়িতে ও তাঁদের বৌদ্ধপল্লিতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ‘তখন সে আর ছাত্রলীগের কর্মী না, মুসলমান। আমিও আর ছাত্রলীগের নেতা না, বৌদ্ধ হয়ে গেছি। কারণ, আমি বৌদ্ধ বলেই আক্রান্ত হচ্ছি।’ নেতাটি বলছিলেন। অন্তত তিনজন মুসলমান যুবকের কাছে আমরা শুনতে পেলাম, রামু থানার ওসি (এ কে এম নজিবুল আলম) ও আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বৌদ্ধদের ওপর হামলা শুধু নিষ্ক্রিয়ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখেননি, বরং উসকানি দিয়েছেন। কাঠ ব্যবসায়ী এক মুসলমান যুবক আমাকে বলেছেন, ওসি তাঁকে উসকানোর চেষ্টা করেছেন এই বলে, ‘কিছু করতে হবে না? সহ্য করে যেতে হবে?’ আরেক যুবক আমাকে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রতিবেশী বৌদ্ধদের আক্রমণের মুখ থেকে বাঁচানোর জন্য বন্ধুদের সংগঠিত করার সময় পুলিশের এক সদস্য তাঁকে বলেছেন, ‘তুই বড়ুয়াদের পক্ষ নিয়েছিস? তোর ইমান চলে গেছে!’ এই যুবকদের ধারণা, রামুর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের গোঁড়া মানুষের সংখ্যা বেশি বলেই বৌদ্ধদের ওপর অমন ব্যাপক হামলা ঘটতে পেরেছে।
সবচেয়ে গুরুতর বিষয়, আক্রান্ত বৌদ্ধদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, তাঁরাও বিশ্বাস করেন, যাঁরা তাঁদের ওপর আক্রমণ করেছিলেন, তাঁদের প্রধান পরিচয় তাঁরা মুসলমান। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত—সব দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় তাঁদের কাছে একাকার হয়ে গেছে। রামুর মেরং লোয়া বৌদ্ধপল্লিতে কয়েকজন নারী বললেন আরও এক উদ্বেগের কথা। শ্রীকূল নামের পাড়া থেকে মেরং লোয়ায় যাওয়া-আসার পথে মুসলমানদের কয়েকটি মাংস বিক্রির দোকান থেকে লোকেরা ছুরি শানাতে শানাতে তাঁদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘আসো, দেশি গরুর মাংস খেয়ে যাও।’ এ রকম অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবনে এই প্রথম।
Click This Link