রেডিও ফুর্তি হতে ২০১৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বই।
বইয়ের ভূমিকায় জানানো হয়েছে, এই বই প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য নাকি বাংলা সাহিত্যে কিছু অসাধারণ ভৌতিক কাহিনীর সংযোজন। এইটুক পড়ে অনেকেই হয়ত আশাবাদী হয়ে উঠবেন। কিন্তু তাদের হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রতিটা গল্প পড়ার পর শুধু মনে হবে, এই গল্পে ভয়ের জায়গাটা কোথায়? এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে বড় অসহায় মনে হবে, যেমনটা হাসির গল্পের মেইন পাঞ্চ খুঁজে না পেলে হয়। কিন্তু নিশ্চিত থাকুন, এক্ষেত্রে আপনার মস্তিষ্কের কোন দোষ আপনি দিতে পারবেন না। গল্পে আসলেই কিছু নাই। বিষয়বস্তু যে অতিমাত্রায় অখাদ্য, তা যে কেউ পড়ার পর বুঝবেন। এবার আসা যাক সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বইটা কেমন সে ব্যাপারে। খুব বেশি কিছু এখানেও বলার নাই। সাধারণ পাঠকেরা তাদের মত করে লেখা পাঠিয়েছেন বা বলেছেন। সেগুলোকে অন্তত ভদ্রস্থ করা তো উচিৎ ছিল, তাই না? কিন্তু সেসবের কোন বালাই নেই। সম্পাদক হয়ত মনে করেছেন, প্রতিটা গল্পে অন্তত একবার করে 'এর ব্যাখ্যা আমি আজও খুঁজে পাইনি' বা 'এরপর আমি যা দেখলাম তার জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না' টাইপের কথার সন্নিবেশনেই হয়ত হয়ে যাবে। কিন্তু না। তা হয়নি এবং হতে পারেও না। মুখে মুখে লোকে যে গল্প বলেছে, তাতে তাদের কন্ঠস্বরের ওঠানামাও অনেক ক্ষেত্রে গল্পে আলাদা ভ্যারিয়েশন আনে। কিন্তু বইয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই বইয়ের গ্রন্থনাকারী ও সম্পাদকের অবশ্যই উচিৎ ছিল গল্পগুলোর ভাষা নিয়ে একটু কাজ করা। কিন্তু তার কিছুই তারা করেননি। এর একটা কারণ হয়ত এই যে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে সেই জন্যে তারা যা পেরেছেন, তাই-ই প্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কনটেন্ট ভাল না খারাপ তা নিয়ে দুবার ভাবারও টাইম পাননি।
যাইহোক, ভূতের গল্প বা হরর কাহিনীর ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে হুমায়ুন আহমেদ, কোন বড় লেখক ভূত নিয়ে কমবেশি লেখেননি? সেসব গল্পের কোনোটা আক্ষরিক অর্থেই গায়ে কাটা দেয়। কোনোটা আবার স্রেফ লেখকদের অসামান্য লেখনি ও পরিবেশনক্ষমতার জোরে আমাদের নিকট গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেছে। সুতরাং ভূতের গল্প নিয়ে বই প্রকাশ করে তাকে সাহিত্যের আঙ্গিনায় একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া খুব একটা সহজ কাজ না। আর আলোচ্য বইটি তো এক্ষেত্রে ডাহা ফেল করেছে। ভূত এফএম নামক শো'টা এমনিতেই খুব একটা মনোরঞ্জনকারী নয়। তবু মাঝেমধ্যে দুই একটা গল্প হয়ত ভালোই লাগে। কিন্তু এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই সমান হতাশাব্যঞ্জক।
শেষ কথাঃ কেউ যদি ভুলবশত বইটা কিনে ফেলেন বা অর্ডার দিয়ে ফেলেন, তাহলে কষ্ট করে আগে বইয়ের গল্পগুলো পড়বেন। সবশেষে রাসেল ভাই রচিত ভূমিকা অংশটি পড়বেন। সেক্ষেত্রে রাসেল ভাইয়ের কথাবার্তা আপনার কাছে খুবই হাস্যকর ঠেকবে ও তা একটুখানি হলেও আপনাকে আনন্দ দিতে পারে।
পুনশ্চঃ শিবু কুমার শিলের প্রচ্ছদ বেশ সুন্দর। কিন্তু যে বইয়ের ভিতর এতখানি সাদামাটা, তার বাহ্যিক সৌন্দর্য কাউকেই খুব একটা আকর্ষণ করবে না।