২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। এমন এক সময় মুন্নি সাহা এক সংসদ সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেন, 'ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে আপনার অনুভূতি কি?'
সংসদসদস্য জানালেন, 'অনেকে এটাকে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়াও বলছেন। অথচ দ্যাখেন, মেসির মত প্লেয়ার কিন্তু মাঝমাঠ থেকে বল ড্রিবলিং করে এনে ৬/৭ জনকে কাটিয়ে যেমন গোল দেয়, তেমনি আবার মাত্র ১২ ফুট দূরত্ব থেকে, পেনাল্টি শটের মাধ্যমে একা গোলকিপারকে পরাস্ত করেও গোল দেয়। গোল দেয়ার ধরন মেসির যেমনই হোক, সে কিন্তু সেই গোলটা ঠিকমতই উদযাপন করে। অনুরূপভাবে এই নির্বাচনে আমি যেমনভাবেই জিতি না কেন, আমিও মেসির মতই সমান উল্লসিত।'
পরবর্তি দিন ব্রাজিলপ্রেমী এক দর্শক পত্রিকায় চিঠি লিখে পাঠাল, 'কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে একজন সংসদ সদস্য কেবল মেসির কথা বলতে পারেন, অথচ নেইমারের কথা বলেন না? মূলত টিভিতে দেয়া ঐ সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনমূলক। একজন জননেতা হিসেবে তার মনে রাখা উচিৎ ছিল, এই দেশে শুধু আর্জেন্টিনার ভক্তই নয়, ব্রাজিলের ভক্তও আছে।'
ওইদিন রাতেই 'একাত্তর জার্নালে' নবনিতা ও তার দুই বয়ফ্রেন্ড মিলে প্রমাণ করে দিলেন, যেহেতু ঐ সংসদ সদস্যের নির্বাচনি এলাকা আর্জেন্টিনা ভক্ত অধ্যুষিত অঞ্চল, তাই ঐ সংসদ সদস্যের বক্তব্য অতিব গঠনমূলক এবং তার মাধ্যমে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ও মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
নবনিতার অনুষ্ঠান দেখে অনেক আওয়ামী ভক্ত নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে গেলেন। কিন্তু পরের দিনই 'আমার দেশ' পত্রিকা সরেজমিন প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিল, ঐ সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকায় আর্জেন্টিনা ভক্ত ও ব্রাজিল ভক্তের আনুপাতিক হার ছিল ৪০:৬০।
তারপরের দিন প্রথম আলোতে মতিউর রহমান সম্পাদকীয় লিখলেন, আমার দেশ আবার কোন হনু যে তারা জরিপ করতে আসে? প্রথম আলোর জরিপ হল আসল জরিপ, নিরপেক্ষ জরিপ। গতবছরও তারা জরিপ করে দেখিয়েছিল, বিএনপি'র জনপ্রিয়তা দেশে ৯০%। তাই সবার উচিৎ প্রথম আলোর জরিপ ফলো করা। অতঃপর তারপরের দিন প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে উঠে এল, ঐ সংসদ সদস্যের নির্বাচনি এলাকায় ব্রাজিল ভক্ত ৪৫%, আর্জেন্টিনা ভক্ত ৫৫%।
মির্জা ফখরুল আলমগীর লাদেনের বাসভবন হতে গোপন ভিডিও পাঠিয়ে দাবি করলেন, প্রথম আলোর জরিপে সূক্ষ্ম কারচুপির আশ্রয় নেয়া হয়েছে কেননা মতি ভাই আর উৎপল শুভ্র উভয়ই আর্জেন্টিনার ভক্ত।
এই ঘটনার পরের দিন জনৈক বুদ্ধিজীবী পত্রিকায় একটি কলাম লিখলেন, 'তোমরা যারা ফুটবল খেলা দেখ'। এই কলামের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, যে বয়সে তরুণ তরুণীর হাতে হাত রেখে প্রেম করার কথা, সেই বয়সে রাত জেগে ফুটবল খেলা দেখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাছাড়া এই ফুটবল খেলাকে বর্তমানে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই সকলের উচিৎ দেশ ও দশের বৃহত্তর স্বার্থে ফুটবল খেলা দেখা হতে বিরত থাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৬