তার মুখে অনেকক্ষণ ধরে জ্বলন্ত সিগারেটটা রয়েছে। কিন্তু সে সেটাকে টানছে না। বড্ড অলস লাগছে। যতবারই মনে পড়ছে ডাক্তারের কথাটা যে তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নেই, ততবারই নিজের প্রতি লজ্জায় শরীর কুঁচকে যাচ্ছে। আর মনে যে কি ঝড় বইছে, তা কি বলে বোঝানো যাবে? তিলে তিলে গড়ে তোলা আত্ম-অহংকারের প্রাচীর কি একটা সত্যেই গুড়িয়ে যাবে? অবশ্য এ তো যে সে সত্য নয়। জীবনের এক চরম সত্য। একে কি অস্বীকার করা যায়?
সে ভাবছে, বাড়ি গিয়ে নায়লাকে কিভাবে মুখ দেখাবে? কি বলবে নায়লাকে? সে কি মিথ্যে বলবে? বলবে, সব দোষ নায়লার? সবাইকে এই কথা বলে নিজের পৌরুষত্বের মান বজায় রাখবে? অবশ্য তাতে যে আরও দীর্ঘমেয়াদি বিপদের আশংকা থেকে যায়। বাড়ির সকলে বলবে, নায়লাকে ছেড়ে দাও। অন্য কাউকে বিয়ে কর। সেটাই তো অতি যৌক্তিক কথা। নায়লা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মেয়ে নেই নাকি! আবার নায়লাকে সত্যি কথাটা বললে যদি নায়লাই তাকে ছেড়ে যায়? দাম্পত্য জীবনের ভালবাসায় আবেগ, উদ্বেগ, উত্তেজনা সবই থাকবে। কিন্তু তার যদি কোন পরিণতি না থাকে, তাহলে সেই ভালবাসা, সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে কি লাভ?
সিগারেটটা শেষ পর্যন্ত নিভেই গেল। সিগারেটে আগুন ধরানোই হয়েছিল সেটাকে ফুঁকে ফুঁকে অন্তিম পর্যায়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেটাকে যদি ফোঁকাই না হয়, সেটা তো নিভে যাবেই! দুনিয়ার সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট নিয়তি আছে। তাকে খন্ডাবে কে?
সে সিগারেটটাকে নদীর পানিতে ফেলে দিল। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ওই তো, নিভে যাওয়া সিগারেটটা পানির মৃদু স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে চলেছে। সে সেদিকেই তাকিয়ে রইল। কিন্তু সে খেয়াল করল, কিছুদূর গিয়েই সিগারেটের টুকরোটা কি যেন একটায় আটকে গেল। কি ওটা? সামান্য কৌতূহল হল তার। তবে সেই কৌতূহল মেটাবার মত ইচ্ছাশক্তি তার মধ্যে তৈরি হল না।
আসলেই তার বড্ড অলস লাগছে। নির্ঘুম রাতের ব্যর্থ প্রয়াসের স্মৃতিগুলো বারবার যেন চোখের সামনে ডানা ঝেপটে কিছু একটা মনে করিয়ে দিতে চাইছে।
_দুই_
পরের দিন আবার সে এসে বসল নদীর পাড়ের সেই জায়গাটাতে। গত ২৪ ঘন্টা অনেক ভেবেছে সে। চেয়েছে নায়লাকে মুখ ফুটে সত্যটা বলতে। পারেনি। অক্ষম পুরুষরা কি এরকম হীনম্মন্যতায় ভোগে সবসময়?
সে আরেকটা সিগারেট ধরাল। তারপর, কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। একসময় সে আবিষ্কার করল, সিগারেটটা আজও নিভে গেছে। কারণ আজও সে সিগারেটটাকে শেষ করতে পারেনি। আগেরদিনের মতই সিগারেটটাকে সে ছুঁড়ে ফেলল পানিতে। চেয়ে রইল দেখতে, আজ সেটা কতদূর যায়। একটা জিনিস সহজেই তার চোখে পড়ল, আজও সিগারেটের টুকরাটা একই জায়গায় গিয়ে আটকে গেল। বারবার কিসে আটকে যাচ্ছে টুকরোটা? নদীর পানির অন্যান্য সাধারণ বর্জ্যকে তো ওটা ঠিকই কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাহলে ওখানটায় কি আছে যে বারবার ওখানে গিয়েই ওটার পথ চলা থেমে যাচ্ছে?
নদীর পাড়ের ওই জায়গাটায় কি আছে, দেখতে উঠে দাঁড়াল সে।
ওই তো, একটা কুকুরকে দেখতে পাচ্ছে সে। দৌড়ে নদীর পাড়ের ওখানটায় গেল ওটা, যেখানে গিয়ে সিগারেটের টুকরোটার পথ চলা থেমেছে। কিছুক্ষণ থাকল। তারপর আবার ঢুকে গেল অদূরের কাশবনে। সে এগুতে গেল। আবার দেখতে পেল কুকুরটাকে। ওটা আবার ফিরে এসেছে। কি যেন শুকছে ওই জায়গায়। কিছুক্ষণ বাদে আবার ফিরে গেল কাশবনের ভেতর। সে আবার এগুতে গেল। দুপা এগিয়ে থমকেও দাঁড়াল। কুকুরটাকে আবার দেখতে পেয়েছে সে। এবার আর একা ফিরে আসেনি। সঙ্গে এনেছে আরও চার-পাঁচটা কুকুরকে। সকলে মিলে ওই জায়গাটায় কি যেন একটা দেখছে। নাকি শুকছে? তারপর সকলে মিলে শুরু করল গগনবিদারী চিৎকার। কাউকে হয়ত এসওএস মেসেজ দিতে চাইছে। কিন্তু কে পাবে তাদের মেসেজ? এত রাতে কেউ নেই নদীর পাড়ের এদিকটায়। শুধু সে একা আছে।
সে একটা আকর্ষন বোধ করল। কি দেখছে কুকুরগুলো? তাকে জানতে হবে। তাই এবার আর কোনরকম ইতস্তত না করে এগিয়ে গেল। কাছাকাছি আসতেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেল। মানুষের বাচ্চার কান্না। নাকি কোন একটা কুকুরই ওভাবে কুইকুই করছে? তাকে জানতে হবে। তাই কুকুরগুলোকে দাবড়ি দিয়ে ভাগিয়ে দিল সে। কুকুরগুলো কিন্তু পুরোপুরি ভাগল না। কাশবনের ভেতর ঢুকে তার দিকেই চেয়ে রইল। সে এবার জায়গাটায় পৌঁছুল।
বাচ্চার কান্না এখনো শুনতে পাচ্ছে সে। নিচু হয়ে দেখল, একটা ছোট্ট অবয়ব। চাদর দিয়ে একটা ছোট্ট শরীর ঢাকা। মোবাইলের টর্চ মারল সেদিকে। হ্যাঁ, একটা মানুষের বাচ্চাই। তার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আর কুঁইকুঁই করে কাঁদছে।
বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল সে। খেয়াল করল, বাচ্চাটার গায়ের চাদরে দুটটা সিগারেটের টুকরো লেগে আছে। দুটোই আধ খাওয়া।
_তিন_
বাচ্চাটাকে নিয়ে ক্লিনিকে এল সে। প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করা হল, 'বাচ্চাটা কার?'
তার নিঃসঙ্কোচ জবাব, 'আমার'
-'কিন্তু ওর বাম হাতের পাশের মাংস গেল কই? মনে হচ্ছে কেউ বুঝি ওখান থেকে এক খাবলা মাংস তুলে নিয়েছে।'
-'নিলে নিয়েছে, আপনার কি? ওকে সারিয়ে তুলুন।'
-'সত্যি করে বলুন তো এই বাচ্চা আপনি কই পেয়েছেন?'
সে চুপ করে রইল।
-'কি হল, বলবেন না বাচ্চাটাকে কই পেয়েছেন?'
-'নাহ।'
-'ও কে। ইচ্ছে না করলে বলা লাগবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ অনেকক্ষণ পানির মধ্যে ছিল বাচ্চাটা। শরীর তো অলমোস্ট পচে গিয়েছে। বা হাতের কিছুটা অংশও তো মনে হচ্ছে পিপড়া বা অন্য কোন পোকায় খেয়ে ফেলেছে।'
-'হুম'
-'কি আশ্চর্য ব্যাপার, বলুন! এইটুক দুইদিনের বাচ্চাকে কেউ এভাবে ফেলে রাখে পানিতে?'
-'হয়ত বাচ্চাটাকে তারা নিতে চায়নি। তাই ফেলে দিয়ে গেছে।'
-'আর আপনি একে নিতে চান?'
-'হ্যাঁ। আমার কোনদিন বাচ্চা হবে না। তাই আমি এটাকে নেব। (বলেই সে বুঝল, যে সত্যটাকে সে গোপন রাখতে চাইছে, সেটাই তো অপরিচিত একজনকে বলে দিচ্ছে। তাই সে পরের বাক্যগুলো উচ্চারণ করল) এবং আশা করি এ ব্যাপারে আপনি কোনরকম বাধা আমায় দেবেন না। মুখ বন্ধ রাখতে কত চান?'
ডাক্তার হেসে ফেলল, 'বাচ্চাটাকে নিতে হলে নেন। এটা তো আর আমার বাচ্চা না যে আমি বাধা দেব। কেউ একে নিলে তো ভালোই, নইলে গিয়ে পড়বে কোন সরকারি এতিমখানায়। যাইহোক, এটার পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করে দিলাম। একসপ্তাহ পর ব্যান্ডেজ খুলে ভাল করে গোসল করিয়ে দেবেন।'
-'বাচ্চাটাকে 'এটা' বলছেন কেন? এ কোন কীট নয়, এ একটা মানুষের বাচ্চা। একটা মানবসন্তানকে পৃথিবীতে আনা সোজা কথা না।'
-'হুম, আপনার জন্যে তো অবশ্যই সোজা না।'
-'বলেছি না মুখ বন্ধ রাখবেন?'
এই বলে ডাক্তারের দিকে সে এগিয়ে দল একটা ব্ল্যাংক চেক। মুখ বন্ধ রাখতে ডাক্তার ইচ্ছানুযায়ী একটা টাকার অংক এতে বসিয়ে নিতে পারে।
_চার_
মানসিক কষ্টটা কিছুতেই তার মন থেকে দূর হচ্ছে না। তার মনে পড়ে গেল প্রথম যৌবনের এক স্মৃতি। তখন তারা পুরনো ঢাকায় থাকত। বিশ পেরিয়ে একুশে যখন সে পা দিল, তখনই প্রথমবার তার যৌবনের বাঁধ ভাঙে। যৌবনের তাড়না সামলাতে না পেরে মিলিত হয় পাশের বাড়ির ষোড়শী মেয়েটার সাথে। মেয়েটার সম্মতি ছাড়াই। ওটাকে কি ধর্ষন বলা চলে? শুনতে কথাটা খারাপ লাগলেও ব্যাপারটা নেহাতই মন্দ না। একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে পারলে বিবেক হয়ত কিছুটা আপত্তি জানায়। কিন্তু পৌরুষত্বের অহমিকায় মনটা নিদারুণ আনন্দে ভরে ওঠে। সম্ভ্রম হারিয়ে মেয়েটা যখন মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছিল, তা দেখে আরও একবার যৌবনের তাড়নায় উচ্ছ্বসিত হয় তার দেহ। দ্বিতীয়বার খেলা করে মেয়েটির শরীর নিয়ে।
সব যখন শেষ, তখন তার মনে পড়ে অযাচিত সমস্যার আগমনের সম্ভাবনা। পরের এক সপ্তাহ ভাবতে থাকে, কিভাবে মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইবে। কিভাবে তাকে বলবে, চল তোমায় ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সব চিহ্ন মুছে ফেলি। তারপর দুজনেই ভুলে যাই সেদিনের কথা।
একদিন মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরছিল। তাকে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে নির্জনে বসে মনের কথাগুলো বলেও ছিল। কিন্তু সব শুনে মেয়েটা তারদিকে কেবল তির্যক হাসি হেসেছিল। তার হাসিতে ঘৃণার বিচ্ছুরণ ছিল। অসহায়ত্বের নয়। তারপর কয়েক মাস কেটে যায়। মেয়েটা তার কাছে আসেনি সাহায্যের আশায়। কিন্তু তার মধ্যে গর্ভধারনের কোন লক্ষণও দেখা যায়নি। আবার ঘটনাটা জানাজানিও যে হয়নি, সেটাও সে বুঝেছিল। তা না হলে এতদিনে মেয়েটার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। তাড়াতাড়ি কোথাও হয়ত বিয়েও ঠিক হয়ে যেত, মধ্যবিত্ত সমাজে যেমনটা হয়। কিন্তু এসবের কিছুই এক্ষেত্রে হল না।
সে ভেবেছিল, মেয়েটা হয়ত গোপনে কারো সাথে ক্লিনিকে গিয়ে নিজেরাই কাজটা সেরে এসেছে। অথবা মেয়েটা বোধ হয় ওইটুকু বয়সেই পেকে গিয়েছিল, পিল খেতেও আরম্ভ করেছিল।
কিন্তু আজ সে বুঝতে পারল, তার দুটো ধারণার একটাও সত্য না। সমস্যা তার নিজেরই। তার নিজেরই ক্ষমতা নেই সন্তান উৎপাদনের।
সে মনে করার চেষ্টা করল, শেষবার মেয়েটার সাথে যখন সে কথা বলেছিল, তখন মেয়েটার হাসিতে কি কেবলই ঘৃণার ছাপ ছিল? নাকি তার প্রতি কিছুটা করুণাও মেয়েটার হাসিতে ফুটে উঠেছিল? এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সে বাড়ি এসে পৌঁছুল।
_পাঁচ_
বাচ্চাটাকে নিয়ে সে বাড়ি ফিরল। রাত পেরিয়ে তখন ভোররাত। ড্রইং রুমে সকলে উদ্বিগ্ন মুখে বসে ছিল। সে তো কখনো এত দেরি করে না! আজ কি হল? ফোনটাও তো বন্ধ পাচ্ছে।
বাচ্চাটাকে দেখে সকলের মুখে জিজ্ঞাসা চিহ্ন। এই বাচ্চাকে সে কোথায় পেয়েছে? রাতে তার ফিরতে এত দেরি হল কেন?
সকলের সামনে সে এক গল্প শুনাল, 'এই যে আমার বাচ্চা। এক প্রস্টিটিউটের সাথে আমার রিলেশন ছিল। তার ফসল এ। দুদিন আগে হয়েছে। ওর মা আমাকে এসে বলল ওর দায়িত্ব নিতে। বাচ্চা কোলে সে তার ব্যবসা চালাতে পারবে না। আমি নিলাম ওকে। নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করব কেন? ক্লিনিকে গিয়ে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে শিওর হলাম, এ আমারই সন্তান। জন্মানোর পরই ওর শরীরে কিছুটা ইনফেকশনের মত হয়েছে। সেটারও চিকিৎসা করিয়ে এলাম।'
এসব কথা শোনার পর যা হবার ছিল, তাই হল। নায়লা তাকে ছেড়ে গেল। বাড়ি বৌ থাকতে যে পুরুষ প্রস্টিটিউটের সাথে রিলেশন করে, তার কাছে নায়লা কেন থাকবে? নায়লার কি কোন আত্মসম্মান নেই? ওই ভোর রাতেই নায়লা কাপড়-চোপড় গুছিয়ে বাপের বাড়ি রওনা হল। যাবার আগে জানিয়ে গেল, ডিভোর্সের জন্য উকিল নোটিস পাঠাবে এক সপ্তাহের মধ্যে।
বাড়ির লোকও তাকে ত্যাগ করল। তাদের পরিবারের সন্তান হয়ে সে কিভাবে এরকম একটা ঘৃণ্য কাজ করল, তারা ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু অত ভাবাভাবির সময় নেই। বংশের মুখ ডুবিয়েছে যে, তাকে ওই মুহুর্তেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হল।
_ছয়_
তৃপ্ত মুখে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এল সে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে তখন।
হ্যাঁ, তার জীবনে আজ বিরাট এক ট্র্যজেডি এল। তবে একটা কথা ঠিক যে সে ছিল তাদের পরিবারের ইনকামের প্রধান চালিকাশক্তি। তাকে ত্যাগ করে কি তার পরিবার বেশিদিন থাকতে পারবে? বাবা-মায়ের রাগ তো দুদিনেই গলে জল হয়ে যাবে। আর বাকিরাও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় তাকে মেনে নিতে বাধ্য হবে। হয়ত পেছনে তার নামে নানান কথা বলবে। কিন্তু সামনাসামনি সকলেই সাজবে বিনয়ের অবতার।
নায়লা বোধ হয় আর ফিরবে না। একুশ শতকের মেয়েদের নিয়ে এই হয়েছে জ্বালা! এনাদের আত্মসম্মানবোধ বড়ই প্রবল। হয়ত তার নামে সত্যিই কেস টেস করে বসবে। তখন হবে আরেক যন্ত্রনা। তবে নায়লাকে বেশি করে কিছু টাকা দিয়ে দমিয়ে রাখার মনস্থির করল সে। কোর্টে মামলা উঠলে কোথা থেকে কোন সত্য ফাঁস হয়ে যাবে, সেই রিস্ক না নেওয়াই ভাল। মেয়েদেরকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে আজ হয়ত তারা এতটা বাড় বাড়তে পারত না। ভাবল সে। তবে সে যাইহোক, এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত যে আর কোনদিন নায়লাকে কাছে পাবে না সে। কিন্তু এই কষ্ট কি গত দুদিন ধরে মনের মধ্যে চলা ট্র্যাজেডির চেয়ে বেশি? তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নেই, সে পৌরুষহীন --- এসব অপবাদে কি একটা পুরুষের পৌরুষে ঘা লাগত না? নির্ঘাত লাগত।
কিন্তু এখন সে আশংকা নেই। কোলের এই বাচ্চাটা বড় হবে তার পরিচয়ে। আর এই বাচ্চা আজীবন বিবেচিত হবে তার পৌরুষত্বের প্রমাণ হিসেবে।
(শেষ কথাঃ প্রথমেই বলে রাখি, এই গল্পে এক বিকৃত মানসিকতার পুরুষের বিকৃত ধ্যান-ধারণার উন্মেষ ঘটানো হয়েছে। সেগুলোকে লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত ধরে নেওয়া ভুল হবে। আবার এই গল্প পড়ে কোন নারী যদি বলেন, আসলে সব পুরুষই এমন --- সেটাও যেমন ঠিক না তেমনি কোন পুরুষ যদি বলেন আমি এই গল্পের মাধ্যমে পুরুষজাতিকে ছোট করতে চেয়েছি, সেটাও আসলে ঠিক না। আর সবচেয়ে বড় কথা, ১৮+ ট্যাগ আছে বলেই এটাকে যেন চটি কাহিনী ভাবা না হয়। ছাপার অযোগ্য একটিও শব্দ এখানে ব্যবহৃত হয় নাই।)