somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বয়ঃসন্ধিকালে স্ট্রোক

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ধারণা করতে পারেন, ক্লাস এইটের একটা ছেলে বয়ঃসন্ধিকালের সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে করতে স্ট্রোক পর্যন্ত করতে পারে?


সত্যি ঘটনা, তাই আমার মনে হল শেয়ার করি এবং এর সাথে একটা ভাল বইয়েরও মেসেজ দেই যেই বইটা আমি পড়েছিলাম আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে।

যেহেতু ছেলে আমার পরিচিত তাই নাম পরিচয় কিছুই বলব না। ঘটনা হল, ৯-১০ দিন আগে হুট করে সকালবেলা ছেলে স্ট্রোক করে, পরে দুদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পরে বাসায় আসে। আমার মা সেই হাইস্কুলের স্কুলের টিচার, যথারীতি ছেলের বাবা-মাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, তাকে বাসায় কোন বিষয়ে চাপ দেওয়া হয়েছে কিনা, বা বাসায় এমন কোন সমস্যা চলছে কিনা যার কারণে দুশ্চিন্তায় এমন হতে পারে। ওর মা বলে বাসায় কোন বিষয়ে চাপ দেওয়া হয়না। এমনিতেই ও সহজ সরল ভাল ছেলে, তাহলে ওর এরকম হওয়ার কথা না। আম্মু তখন জিজ্ঞেস করে ওর আচরণে এমন কোন পরিবর্তন দেখেছে কিনা যেটা একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। তখন ওর মা বলেন,ও নাকি বেশ কিছুদিন যাবৎ হঠাৎ রাতে বা ভোরে উঠে প্যান্ট পাল্টায়। যাই হোক আমার মা তো অভিজ্ঞ টিচার বুঝতে বাকী থাকে না বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন।

সমস্যা যেটা হয়েছে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের Wet Dream বা স্বপ্নদোষ হওয়া কমন বিষয়। বাট যখন ঐ ছেলের তা বেশ কয়েকবার হয়, এটা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। আগেই বলেছি সহজ সরল ছেলে জানতও না বা কাউকে শেয়ার করবে তাও করেনি। ফলস্বরূপ বেশ কিছুদিন টেনশন করতে করতে স্ট্রোক করে।

আমার মা ওর বাবা-মার সামনে ওকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলে। আম্মু যখন ফোনে আমাকে ঘটনাটা বলছিল, তখন বলেছে "আমি যখন বাচ্চাটাকে বুঝাচ্ছিলাম বাচ্চার বাবা-মা দুজনে লজ্জায় মারা যাচ্ছিল এমন অবস্থা। অথচ বাচ্চাটাকে আগেই ওর বাবা বা মা ধারণা দিত তাহলে এমন স্ট্রোক করত না বাচ্চাটা। হ্যা ওর বাবা-মা শিক্ষিত না, সচেতন না।কিন্তু অনেক শিক্ষিত বাবা-মার ক্ষেত্রেও এমন দেখা যায়। "

আসলে বাবা-মার উচিত বাচ্চাদের সঙ্গে ফ্রি হওয়া। বাবা-মা যদি বন্ধুসুলভ আচরণ করেন, বাচ্চারা সকল সমস্যা বাবাকে খুলে বলবে তাহলে এরকম পরিস্থিতি হবে না।


যাই হোক, তো আমার মায়ের কাছে এই ঘটনা শুনে আমার হুট করে একটা বইয়ের কথা মনে পড়ল। আমি ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়তাম। কিনে পড়তাম, পিডিএফ পড়তাম, ভাড়া নিয়ে পড়তাম,পাবলিক লাইব্রেরী তে গিয়ে পড়তাম,বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে পড়তাম; মানে ভাল বই চোখে পড়লেই বা কেউ বললেই পড়ে ফেলতাম। তো ক্লাস নাইন থেকে ইন্টার পর্যন্ত রেগুলার রংপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে যাওয়া হত আমার। তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, শেল্ফে বই খুঁজতে যেয়ে হঠাৎ করে একটা বই চোখে পড়ল। বইয়ের নামঃ তুমি এখন বড় হচ্ছো । বই লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি একজন খ্যাতনামা মনোচিকিৎসকও। ততদিনে আমি বড় হয়েই গেছি , তাই বইটা আমার লাগত না । কিন্তু আমি ভাবলাম আমারও তো অনেক ছোট ভাইবোন আছে, বইটা যদি ভাল হয় ওদের গিফট করতে পারব। এইজন্য বইটা পুরোটা পড়েছিলাম সেদিন। এবং পড়া শেষে মনে হয়েছিল এই বইটা কিশোর-কিশোরীদের উদ্দেশ্য করে আনোয়ারা সৈয়দ হক ক্যাজুয়াল ও ঘরোয়াভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। বইটাতে গল্পের মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন ভাবনা, সমস্যা ও চিন্তার দিক তুলে ধরেছেন তিনি। এরপর থেকে আমি আমার পরিচিত টিনেজারদের এই বই সাজেস্ট করি। আমার বাসায়ও এক কপি আছে।অনেককে পড়তেও দিয়েছি। বইটা আসলেই ভাল। বইটা রকমারিতে "কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য" ক্যাটেগরিতে নাম্বার ১ বেস্টসেলারও চেক করে দেখলাম।







তো যেই বাবা-মারা বাচ্চাদের সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে কমফর্ট ফিল করেন না , তারা অনায়াসে "তুমি এখন বড় হচ্ছো" বইটি তুলে দিতে পারেন বাচ্চাদের হাতে। তারা অনেক ভুল ধারণা থেকে মুক্তি পাবে ইন শা আল্লাহ্‌। আমার এই লেখা যারা পড়ছেন তাদের অনেকের ছোট ভাইবোন বা ভাগ্না-ভাগ্নি-ভাইঝি আছে, তাদেরও অহেতুক বয়ঃসন্ধিকালীন ভাবনা থেকে বের করতে এই বইটা গিফট দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভাল হয় তাদের সাথে ফ্রি হওয়া, তাদের বন্ধু হয়ে বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা।

ভুলভাল দুশ্চিন্তা একটা বাচ্চার স্ট্রোকের কারণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিষয়টা মোটেও ফেলনা না কিন্তু!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:০৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×