মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-২)
মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-৩)
এন্ডারস সেলসিয়াস:
১৭০১ সালে ২৭ নভেম্বর সুইডেনের আপসালা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী।
তাপশক্তি ও তাপমাত্রার কার্যকর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা তাঁকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়।তিনি তাপমাত্রার একটি একক আবিষ্কার করেন যা তাঁর নামানুসারে ‘সেলসিয়াস স্কেল’ নামে পরিচিত।
১৭৪৪ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি সুইডেনের আপসালা শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
বেঞ্জ।মিন ফ্রাঙ্কলিন:
বেঞ্চামিন ফ্রাঙ্কলিনের জন্ম 1706 সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকার বোস্টন শহরে।।তিনি ছিলেন একাধারে মুদ্রাকরন,দার্শনিক,রাজনীতিবিদ,অর্থনীতিবিদ,রাষ্ট্রের সংবিধানের রচয়িতা,বিজ্ঞানী,আবিষ্কারক।
১৭৪০/৪১ সাল নাগাদ তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজকর্ম শুরু করেন।আবিষ্কারক হিসাবে তাঁর প্রথম উদ্ভাবন খোলা উনুন।বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে বিদ্যুৎশক্তির প্রতি আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি।একদিন আকাশে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে আকাশের বিদ্যুৎ চমক দেখে প্রথম অনুভব করলেন আকাশের বিদ্যুৎ আর কিছুই নয়,বিদ্যুৎ একধরণের ইলেকট্রিসিটি।আধুনিককালে আমরা যে টিউবলাইট দেখি তা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ইংল্যাণ্ডে থাকাকালীন সময়ে সমুদ্রস্রোতের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে কয়েকটি গবেষণাপত্র রয়েল সোসাইটিতে জমা দেন।এছাড়া তিনিই প্রথম বাইফোকাল লেন্সের ব্যবহার শুরু করেন।
১৭৯০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ক্যারোলাস লিনিয়াস:
১৭০৭ সালের ২৩শে মে তিনি র্যাশল্ট,স্টেনব্রোহাল্ট,সুইডেনে জন্মগ্রহণ করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ডাক্তার,আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরতত্ত্বের অধ্যাপক।
সুইডিশ বিজ্ঞানী লিনিয়াস জীবদের দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তক।তিনি বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী সংগ্রহ করে তাদের শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণ করেন।জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাসের উপর তাঁররচিত ‘Systema Nature’ তাঁর বিখ্যাত গবেষণাগ্রন্থ।এছাড়া ‘Species Plantarum’ এবং ‘Genera Plantarum’ নামে তাঁর আরো দুইটি বিখ্যাত গবেষণামূলক উদ্ভিদবিজ্ঞানের বই রয়েছে।তাঁকে শ্রেণীকরণবিদ্যার জনক বলা হয়।
১৭৭৮ সালের ১০ জানুয়ারি আপসালার বাইরে হ্যাম্মারবি প্রদেশে মৃত্যুবরণ করেন।
জেমস ওয়াট:
১৭৩৬ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
জেম্স ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন-এরকম একটা ধারণাই সাধারণত চালু আছে।আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়।বাষ্পের বৈশিষ্ট্য এবং গুণাগুণ নিয়ে জেমস ওয়াটের নশো বছর আগে থেকেই বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারকরা মাথা ঘামিয়ে আসছেন।আসলে জেম্স ওয়াট যা করেছিলেন তা হল বাষ্পীয়শক্তি নিয়ে তাঁর পূর্বসূরীরা যেসব সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলিকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে তাকে হাতে-কলমে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা।বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের যে নকশা জেম্স ওয়াট তিলে তিলে তৈরি করে গেছেন,এখনো পর্যন্ত তাতে আর বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
১৮১৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এন্টনি লরেন্ট ল্যাভয়শিঁয়ে:
১৭৪৩ সালের ২৬শে আগস্ট ফ্রান্সে ল্যাভয়শিঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
ল্যাভয়শিঁয়ে প্রথম বললেন,বাতাসের ২টি উপাদান।একটি শ্বাসযোগ্য,অপরটি বিষাক্ত।যেটি শ্বাসযোগ্য তার নাম দিলেন অক্সিজেন।প্রকৃতপক্ষে তাঁরই আন্তরিক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে আধুনিক রসায়নশাস্ত্রের ভিত্তিমূল।আধুনিক রসায়নের জনক ল্যাভয়শিঁয়ের আরেকটি মহৎ কীর্তি রসায়নের জন্য অভিধান তৈরি করা।
১৭৯৪ সালের মে মাসের কোন এক সকালে তাঁকে হত্যা করা হয়।তাঁর মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী লরেঞ্জ বলেছিলেন,’শুধু একটি মুহূর্ত লেগেছিল তাঁর মাথাটি কাটতে।তেমন আর একটি মাথা পেতে হয়ত আমাদের আরো একশ বছর অপেক্ষা করতে হবে।‘
আলেসান্দ্রো ভোল্টা:
১৭৪৫ সালে ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন।
আলেসান্দ্রো ভোল্টা প্রথম ব্যাটারি আবিষ্কার করে বিখ্যাত হন।ভোল্টা পরীক্ষা করে দেখতে পান যে,একত্রিতঅবস্থায় অনেকগুলো তড়িৎকোষের অনেকবেশি পরিমাণ তড়িৎচুম্বকীয় শক্তি পাওয়া যায়।একেই ভোল্টার সঞ্চয়ক কোষ বা ভোল্টারকোষ বলা হয়।তড়িচ্চালক শক্তির একক ভোল্ট তাঁর নামেই বলা হয়।
১৮২৭ সালে ইতালিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এডওয়ার্ড জেনার:
১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মে ইংল্যাণ্ডের বার্কলে শহরে তাঁর জন্ম।।
তিনি গুটি বসন্তের প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কার করেন।১৭৯৮ সালে তিনি প্রকাশ করলেন তাঁর যুগান্তকারী প্রবন্ধ Inqiry into cause and effect of the Variolae Vaccinae।এর পরের বছর প্রকাশ করলেন ২য় প্রবন্ধ Further Inquiry.....।এবং চূড়ান্ত প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন ১৮০০ সালে Complete Statement of facts and obsevations।জেনার তাঁর গবেষণায় প্রমাণ করেছিলেন ২ ধরণের গো বসন্ত আছে।তারমধ্যে একটির গুটি বসন্ত প্রতিশোধক ক্ষমতা আছে।
১৮২৩ সালের ২৬শে জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন এডওয়ার্ড জেনার।
হ্যানিম্যান:
১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে জার্মানের মারগ্রে ওগেট প্রদেশের অন্তর্গত মিসেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন হ্যানিম্যান।তাঁকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জনক বলা হয়।
তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ,’কিভাবে ক্ষত এবং ঘা সারানো যায় সে বিষয়ে নির্দেশনামা।‘বিশেষভাবে তিনি রসায়নের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।ফরাসি ভাষা থেকে জার্মান ভাষায় একাধিক গ্রণ্থ অনুবাদ করেন।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইখণ্ডে Art of Manufacturing chemical products।এছাড়া দুইখণ্ডে Art of distilling liquors।রসায়নের ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা সেইযুগে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল।তাঁর লেখা On Arsenic poisoning ফরেনসিক গবেষণার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।১৮১০ সালে প্রকাশ করেন অর্গানন অব মেডিসিন(Organon of Medicine)।এই অর্গাননকে বলা হয় হোমিওপ্যাথির বাইবেল।তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা Chronic disease:Their nature and Homeopathic treatment।চিকিৎসা জগতে যা এক যুগান্তকারী সংযোজন।
১৮৪৩ সালে ২রা জুলাই শেষরাতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন হোমিওপ্যাথিক জনক মহাত্না হ্যানিম্যান।
আন্দ্রেই মেরী অ্যাম্পিয়ার:
১৭৭৫ সালে ২০ জানুয়ারি ফ্রান্সের লিয়নে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতশাস্ত্রবিদ।
তিনি ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম-এর অন্যতম আবিষ্কারক।তড়িৎ ও চুম্বকত্বের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিখ্যাত।একটি বর্তনীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের পরিমাণ নির্ণয় করে তিনি পদার্থবিজ্ঞানকে এগিয়ে নেন।এ যুগান্তকারী কর্মের জন্য তড়িৎ প্রবাহের এককের নাম তাঁর নামানুসারে রাখা হয় ‘অ্যাম্পিয়ার’।
১৮৩৬ সালের ১০ই জুন ফ্রান্সের মার্শেই তে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জর্জ ও’ম:
১৭৮৯ সালের ১৬ই মার্চ জার্মানিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী।
তিনি V=IR সূত্রের আবিষ্কারক।তাঁর নামানুসারে ও’মের সূত্রের নামকরণ করা হয়।কোনো পরিবাহীর রোধ ‘ওহম’ এককে পরিমাপ করা হয়।
১৮৫৪ সালের ৬ জুলাই জার্মানির মিউনিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।