পদ্মা সেতুকে স্বপ্নের সেতুই ভাবতাম। কিন্তু এই সেতুই আবার কারো কারোর কাছে দুঃস্বপ্নও বটে। কিছু কথার্তায় বুঝলাম, পদ্মা সেতু নিয়ে নেতিবাচক ভাবনার লোকও রয়েছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। এদেশে যেহেতু রাজনীতি আছে।
একজন বলেছিলেন, সেতু না বানিয়ে ফেরি বাড়ালেই হতো, অযথা এতো টাকা খরচ না করে। টাকাগুলো অন্যান্য উন্নয়ন খাতে ব্যবহার করা যেতো। তিনি দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। আমার খুব জানার আগ্রহ, তিনি কি এখন ফেরিতেই চলাচল করবেন? নাকি সেতু ব্যবহার করবেন? উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যা নেতিবাচকদের ভাবনারও বাইরে।
একসময় তথ্য চুরি হয়ে যাবার ভয়ে আমরা বিনামূল্যের ইন্টারনেট করিডোরে যুক্ত হবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তার জন্য ভোগান্তি কিন্তু কম হয়নি। আরে সারা বিশ্ব যখন যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির দিকে মুখিয়ে, আমরা তখন তথ্য চুরির শংকায় শঙ্কিত। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার যখন তুঙ্গে, আমরা তখন খরচের ভয়ে স্পীড বোট বাদ দিয়ে কলাগাছের ভেলায় চড়ে বেড়াবার মানসিকতা নিয়ে আছি!
বেগম সুফিয়া কামালের “আজিকার শিশু” কবিতাটি এখন খুব মনে পড়ছে, তিনি পিছিয়ে পড়াদের আক্ষেপ নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন। অনেকেরই মনে আছে হয়তো। আজ পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধনে অনেকের মুখে সেই পিছিয়ে পড়াদের জীবনধারার কথাগুলোই বের হয়ে আসে। মন মানসিকতা, চিন্তা চেতনায় তারা এখনো পশ্চাদপদ। কেউ কেউ আবার লক্ষ কোটি টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভেবে খাম্বা কিনেই খান্ত দেন। অনেকে অন্ধকারে বসে সেই খাম্বার কারবারীদের জন্য হাততালি দিয়ে তৃপ্তি বোধ করেন। সময় এসেছে মানসিকতা পরিবর্তনের। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে অজ্ঞতার কালিমা দূর করতে হবে। জীন পরী দেও দানার গল্পকাহিনী এখন অতীত।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরীঘাটে অপেক্ষায় বসে থাকার কথা বাদই দিলাম। জীবন বাজী রেখে তীব্র স্রোত আর উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে যারা পদ্মা নদী পারাপার হতো, বিশেষ করে বর্ষায় ভয়াবহ রূপিণী পদ্মা পাড়ি দিতে কার না বুক কাঁপতো? মুমূর্ষু কতো রোগী যে এ্যাম্বুলেন্সে নদীর উপারে অপেক্ষায় থাকতেই থাকতেই পরপারে চলে গেছেন, তার কোন হিসেব নিকেষ নেই। ঝড়ঝঞ্জায় কতো লঞ্চ নৌকা ডুবে গেছে, অকালে প্রাণ ঝড়েছে। সকল উন্নয়ন, সকল আস্ফালন বাদ দিয়ে যদি শুধু জীবনের কথা ভাবি, তাহলেও কি পদ্মা সেতুর অপরিহার্যতা অস্বিকারের কোন উপায় আছে?
সেতু হলে নদীর গতি ব্যহত হয়, নাব্যতা হারায়। এ কথা অনেকরই জানা আছে। তাই বলে কি মানুষের সুবিধার কথা ভাবতে হবে না? পরিবেশের ভারসাম্য যতোটা সম্ভব রক্ষা করেই উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতে হবে। বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশে পরিবেশের পরিবর্তন হবেই। এই সত্যটি মাথায় রেখেই যথা সম্ভব কাজ করতে হবে। পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখেই সরকার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেলে করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। বসে তো থেকে নেই।
যারা পদ্মা সেতু নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করেন, বাদ দিন সেতুতে চড়া। ফেরি এখনো ওঠে যায়নি। লঞ্চ বা ফেরিতেই নদী পারাপার হোন, কেউ তো মানা করবে না। দেখি কয়জন সেতু বাদ দিয়ে লঞ্চ আর ফেরিতে চলাচল করেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২২ রাত ২:৪০