বর্তমানে যুব সমাজ, বিশেষ করে ছাত্রদের বেশিরভাগ অংশই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত। অনলাইন ক্লাসের সুবাদে, আবদার বা সামর্থ্যের কারণেই হোক অভিভাবকগণ তাদের হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন দিতে বাধ্য হয়েছেন। ইন্টারনেট সংযোগ তো সামান্য বিষয়। এই সুযোগের অপব্যবহার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ক্লাস বা প্রয়োজনীয় কাজের বাইরে ওরা বেশিরভাগ সময় কাটায় পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম, টিকটক-লাইকি, ভিগো লাইভ এ জাতীয় অ্যাপস ব্যবহার করে। যা ওদের নৈতিক বোধকে ক্রমশঃ দূর্বল করছে, আত্মকেন্দ্রিক, নেশাগ্রস্ত ও অভিভাবকদের অবাধ্য করছে। বর্তমানে এই সমস্যাটা সমাজে মারাত্মক ব্যাধির রূপ ধারণ করেছে। এতে খুন খারাবীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে কেবলই সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে। অভিভাবক এবং সরকার কেউই এ দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে না। রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন নির্লিপ্ততা, অভিভাবকের প্রশ্রয়, কোনটাই কম নয়। শেষমেশ আদালতকেই বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এসবের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিতে হলো।
১৬ আগস্ট প্রথম আলোর রিপোর্টে জানা যায়, “দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো ক্ষতিকারক গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার, লাইকিসহ এ ধরনের অনলাইন গেম ও অ্যাপ বন্ধ করে অবিলম্বে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ২৪ জুন মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রিটটি করা হয়।”
জানা যায়, এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো ইন্টারনেট গেমের লিংক বন্ধ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমকে (ডট)। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর বিটিআরসি এ ব্যবস্থা নেয়। ইতোমধ্যে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য অ্যাপগুলোও বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে অ্যাপগুলোর লিংক বন্ধ করলেও ভিপিএন দিয়ে চালানো যাবে। ভিপিএন বন্ধ করার মতো সক্ষমতা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমকে (ডট)এর নেই। এই সব অ্যাপের কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েও তারা বন্ধ করার অনুরোধ জানাবে।
এসব গেম একদিকে যেমন তরুণদের নেশাগ্রস্ত করে তোলে, অন্য দিকে বিভিন্ন সমরাস্ত্র, মারনাস্ত্রের সাথে পরিচিতি ঘটায়। এসবের ব্যাবহার শেখায়। যা একজন উঠতি বয়সী তরুণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে সংঘটিত হয়ে রাষ্ট্র বা সমাজ বিরোধী যেকোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। সমাজে অস্থিতিশীলতার পথ তৈরি হবে। একজন শিশু-কিশোরের মনে মানব প্রেম, মানবতার গুণাবলী শিক্ষা না দিনে কেবল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় তাকে হিংসাত্মক ও হিংস্রতার শিক্ষাই দেওয়া হয়ে থাকে। এসবের কুফল বুঝতে সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা লাগে না, ন্যূনতম সাধারণ জ্ঞানেই অনুধাবন করা যায়।
টিকটকসহ বিভিন্ন অ্যাপসএর ভাল দিকের চেয়ে মন্দ দিকই বেশি। নীতিবোধহীন উচ্ছৃঙ্খল কিছু তরুণ এসব নিয়ে অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কয়েকজন মিলে গ্যাঙ গ্রুপ গঠন করে অনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে।
ইতোমধ্যেই একটা গ্রুপ বলা শুরু করেছে, হঠাৎ করে তা বন্ধ না করে ধাপে ধাপে বন্ধ করতে। এখানে নাকি বিভিন্ন ধরণের ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে। হঠাৎ করে বন্ধ করলে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গেমারদের মাঝেও নাকি বিরূপ প্রভাব পড়বে। এসব গেমের প্রত্যেকটি গেমারই গেম এডিক্টেড সন্দেহ নেই। ওদের গেম এডিকশন দূর করতে ধাপে ধাপে বন্ধ করায় বরং উলটো ফল দেখা দিবে। অন্যান্য নেশার মতো এই নেশাও দূর করতে প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সমাজের পজিটিভ বিভিন্ন কাজে ওদের সংযুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কায়িক খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি, সমাজ কল্যান ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সব দিক দিয়েই তা স্বস্তি এনে দিবে।
এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ধাবিত করার জন্য এসব গেম ও অ্যাপস বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন ড্রাগের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর এসব উপাদান। সরকার, হাইকোর্ট, বিটিআরসি যতো যা ই করুক শিক্ষিত যুবসমাজ এবং অভিভাবকগণ সচেতন না হলে তা দূর করা সহজ হবে বলে মনে করছি না। এছাড়া স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থে কিংবা দেশবিরোধীরা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবার জন্য নেশা সামগ্রীর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে এধরণের নিত্য নতুন উপকরণ উৎপাদন ও আমদানী করে যাবেই। সকলের সজাগ না হলে তা প্রতিরোধ খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৫