রিক্সা দিয়ে প্রথমে গেলাম রাজার বাড়ি, বাড়িটি ১৯৩৪ সালে নির্মিত। সেখানে এক ভদ্র মহিলার সাথে দুই/একটা কথা হলো, পরে রিক্সা ওয়ালা জানালো উনি রাজার বড় মেয়ে (মাম্যাচিং) বর্তমানে ইউ.পি চেয়ারম্যান। এতটু দুরেই ছোট্ট একটা টিলার উপর জাদি বৌদ্ধ মন্দির। আজ সেখানে পুজা উৎসব চলছে। দলে দলে বিভিন্ন বয়সের বৌদ্ধ ধর্মম্বলীরা খাদ্য-দ্রব্য, ফুল নিয়ে খালি পায়ে সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠছে।
গতবার বান্দরবন থেকে ফিরে স্বর্ণ মন্দিরের কথা শুনে আফসোস করছিলাম। এইবার আর সেই সুযোগ মিস দেই নাই। সাঙ্গু নদী পার হয়ে শহর থেকে বেশ খানিকটা পথ দুরে পাহাড়ে চুড়ায় স্বর্ণ মন্দির অবস্থিত। দূর থেকে স্বর্ণ মন্দিরের সোনালী চুড়া যেকোন আগন্তুককে আকর্ষন করবেই। আমরা পাহাড় বেড়ে উপরে উঠলাম। মুল স্বর্ণ মন্দিরের প্রবেশ গেট থেকে ১৫২টা সিড়ি খাড়াখাড়ি ভাবে উপরে চলে গেছে। আমরা উঠলাম। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ আমাদের সাথী। গেরুয়া কাপড় পরিহিত স্বর্ণ মন্দিরের পুরহিতের কথা শুনে হতাশ হতে হলো। তিনটার পর দর্শনার্থীরা মুল স্বর্ণ মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে আর এখন পুজারী ও যারা দেবতাকে শ্রোদ্ধা নিবেদন করতে পারবে তারাই প্রবেশের অনুমতি পাবে।
জিজ্ঞাস করলাম- শ্রোদ্ধা নিবেদন কি ভাবে করে ?
- আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব কিভাবে।
ইতিমধ্যে পুরহিতের কথা শুনে ৫/৭ জন (খুব সম্ভবত ইসলাম ধর্মের) লোক দেবতাকে শ্রোদ্ধা নিবেদন করার জন্য ভেতরে প্রবেশ করলো এবং শ্রোদ্ধা শেষে মুল স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পেলো। আমি বাইরে দাড়িয়ে দেখলাম।
আমার ট্যুর পার্টনার আরিফ ভাই আর মীর ভাই এতোক্ষনে সিড়ি বেয়ে এখানে এসেছে। আরিফ ভাইকে বললাম, এরা যে নিয়ম বলছে আমাদের তো পালন করা সম্ভব না। হাত জোর করে বৌদ্ধদেবের সামনে মাথা নত করে শ্রোদ্ধা করতে হবে।
এবার আরিফ ভাই আর মীর ভাই পুরহিতের সাথে কথা বললো।
পুরহিতের এবারো জানালো, যারা এখন দেবতাকে শ্রোদ্ধা নিবেদন করবে বা পুজা করবে শুধু মাত্র তারাই স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে। দেখলা না, এখন যারা মন্দিরে প্রবেশ করলো তাদের মধ্যে একজন শুধু হিন্দু আর বাকি সবাই মুসলিম ধর্মের ছিল। তারা তো দেবতাকে শ্রোদ্ধা নিবেদন করে মন্দিরে প্রবেশ করলো। বুঝছি তোমরা শ্রোদ্ধা নিবেদন করতে পারবা না। তোমরা এখন চলে যাও, তিনটার পর আসো তখন ভেতরে যেতে পারব।
[ওনার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা হয়েছিল, আমি সেদিকে যাচ্ছি না ]
আমরা মন খারাপ করে সিড়ি বেয়ে নীচে চলে আসলাম। পাহাড়ি পথ দিয়ে আমরা আরো উপড়ে উঠলাম। এদিকটা প্রায় সমতল। এক পাশ থেকে স্বর্ণ মন্দির স্পষ্ট দেখা যায়। আমি আরো উপরে যাওয়া পথ খুজছি। ভেতরের দিকে একটা ছোট্ট খোলা ঘরে বৌদ্ধদেব মুর্তির সন্ধান পেলাম। যেটার পেছনে রয়েছে বন্ধ জলাশয় ! প্রায় দেড়/দুই হাজার ফিট উপরে এই ছোট পুকুর দেখে আমিতো অবাক। এটাই এ পাহাড়ের শেষ প্রান্ত উপরে ওঠার কিছু নাই। এবার ফেরার পালা, স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করতে না পারার কষ্ট নিয়ে বান্দরবান ত্যাগ করলাম।
স্মৃতি : ০৪ জানুয়ারী ২০০৮ইং / শুক্রবার।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২৬