জগতের বিষ্ময়কর জিনিস হল এন্টিম্যাটার যা কিনা পদার্থের বিপরীত রূপ। বিজ্ঞনিরা কসমিক রশ্মির ছবি তুলতে গিয়ে প্রথম এন্টিম্যাটার আবিস্কার করেন ১৯৩০ সালে ।তাদের আবিস্কার করা এন্টিম্যাটারের নাম হল পজিট্রন যা ইলেক্ট্রনের মিরর ইমেজ কিন্তু বিপরীত পজিটিভ[+] চার্জ বিশিষ্ট।(প্রোটন ও পজিটিভ[+] চার্জ বিশিষ্ট কিন্তু ইলেক্ট্রনের মিরর ইমেজ নয়)।প্রথম প্রথম শুধুমাত্র ম্যাথম্যাটিকাল ক্যালকুলেশন করে এদের চরিত্র সম্পর্কে ধারনা করতে পারা গেলেও পরে মাহাজগতে এদের বাস্তব অস্তিত্ব প্রমান করা গেছে।আর এখন তো ল্যাবেও তৈরি করা হয়ে গেছে।
সকল পদার্থই মৌলিক কনিকা ফার্মিয়ন ( যারা ভর বাহি কনিকা) ও বোসন (যারা ভর বিহীন আলোক কনিকা)
মৌলিক ফার্মিয়ন কণিকা দিয়ে ব্যাখ্যা করা পারমানবিক মডেলে আমরা তিন ধরনের কনিকার কথাই অহরহ শুনে থাকি এরা হল
১ ইলেক্ট্রন -এদের চার্জ নেগেটিভ[-]
২ প্রোটন- এদের চার্জ পজিটিভ [+]
৩ নিউট্রন এদের কোন চার্জ নেই
মৌলিক কণিকাই কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত। এসকল কোয়ার্কের একটা উল্লেখজনক বৈশিষ্ট্য আচ্ছে যেটাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘রঙ’ বা ‘বর্ণ’ (এখান থেকেই ‘ক্রোমোডাইনামিক্স’ বা ‘বর্ণগতিবিদ্যা’ শব্দটা এসেছে, যদিও কোয়ার্কের কোনো দৃশ্যমান রঙ নেই, এগুলো স্রেফ বৈশিষ্ট্য নির্দেশক নাম)। কোয়ার্ক হয় তিনটি তথাকথিত রঙ-এর লাল, সবুজ ও নীল। এছাড়াও প্রতিটি কোয়ার্কেরই প্রতি-কোয়ার্ক আছে। তাদের নাম যথাক্রমে প্রতি-লাল, প্রতি-সবুজ ও প্রতি-নীল। ধারণাটা হচ্ছে শুধু মাত্র সেইসব সন্নিবেশ যাদের রঙএর সমষ্টি শূন্য (মানে কোয়ার্কের মিলিত চার্জ জিরো )তারাই মুক্ত কণিকা আকারে অস্তিত্বশীল হয়।
কোয়ার্কদের মধ্যকার শক্তিশালী বল পরিমানে কম হয় যখন তারা কাছাকাছি থাকে এবং তাদের দূরত্বের বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে, ঠিক যেন রাবার ব্যান্ড দিয়ে যুক্ত। এই অসীমতটীয় স্বাধীনতার কারণেই আমরা প্রকৃতিতে মুক্ত কোয়ার্ক দেখিনা বা ল্যাবরেটরিতেও তৈরি করতে সক্ষম হইনি। এদেরকে আমরা দেখতে না পেলেও এই কোয়ার্ক রূপায়ণ আমরা মেনে নিই, কারণ এই তত্ত্ব প্রোটন, নিউট্রন ও অন্যান্য পদার্থকণিকার আচরণ খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে।
এধরনের কোয়ার্ক সন্নিবেশ দুই ভাবে পাওয়া যেতে পারে। একটি রঙ ও তার প্রতি-রঙ কাটাকাটি যায়, তাই একটি কোয়ার্ক আর তার প্রতি-কোয়ার্ক মিলে একটি বর্ণহীন জুটি তৈরি করে, ফলে এ ধরনের সন্নিবেশ সম্ভব। এভাবে আমরা যে ক্ষণস্থায়ী কণিকাটি পাই তাকে বলে মেসন। এছাড়াও তিনটি রঙকে (বা তিনটি প্রতি-রংকে) মেলানো হলেও তাদের সন্নিবেশে কোনো বর্ণ থাকে না। এভাবে তিনটি কোয়ার্কের (প্রতি রঙ এর একটি করে) মিলনে আমরা ব্যারিওন নাম স্থিতিশীল কণিকা পাই যেমন প্রোটন এবং নিউট্রিনো।প্রোটন এবং নিউট্রনই হচ্ছে সেই ব্যারিয়ন যারা পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং এদের দ্বারাই মহাবিশ্বের সকল স্বাভাবিক বস্তুসমূহ গঠিত।
এছাড়া তিনটি প্রতি-কোয়ার্ক মিলে ব্যারিয়নের প্রতিকণিকা সৃষ্টি করে যেমন এন্টিইলেক্ট্রন (পজিট্রন) ,এন্টিপ্রোটন ইত্যাদি।একটি ইলেক্ট্রন ও একটি প্রোটন মিলে যেমন একটি হাইড্রোজেন পরমানুর ম্যাটার তৈরি করে ঠিক তেমন করে একটি এন্টিইলেক্ট্রন ও একটি এন্টিপ্রোটন মিলে তৈরি করে এন্টিহাইড্রোজেন নামের এন্টিম্যাটার ।
বর্তমানে সার্নের এবং ফারমি ল্যাবের বিজ্ঞনীরা এন্টিহাইড্রোজেন তৈরি করতে পেরেছেন ল্যাবে বসেই।কনিকা তৃরান্বিত কারক (পার্টিকেল এক্সিলারেটর ) যন্ত্রে সোডিয়াম ২২ কে টার্গেট করে উচ্চ শক্তির প্রোটন বিমকে ব্লাস্ট করা হয় ফলে কনিকা গুলো সাব এটমিক পার্টিকেলে ভেংগে পরে ধীর গতির এন্টিইলেক্ট্রন ও এন্টিপ্রোটন সৃষ্টি করে ।যেখানে দেখা গেছে একটি এন্টিইলেক্ট্রন একটি এন্টিপ্রোটনকে ঘিরে চক্রাকারে ঘুরছে ফলে এন্টিহাইড্রোজেন তৈরি হচ্ছে।
যদিও তাত্ত্বিক ভাবে শুন্য মাধ্যমে এ কাজটি করা গেলে এন্টিহাইড্রোজেনকে আজীবন স্থিতিশীল রাখা যেত কিন্তু এর সবচেয়ে সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্যের কারনে এদের বস্তু জগতে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়না।কেননা এন্টিম্যাটার কোনো ম্যাটারের সংস্পর্শে আসা মাত্রই দুজনে মিলে পারমানবিক বিষ্ফোরনের মাধ্যমে আইনেস্টাইনের বিখ্যাত E=mc^2 সু্ত্রানুযাই পিউর এনার্জিতে তথা bosn particle (আলফা,বিটা,গ্যামা )পরিবর্তন হয়।একারনে এদের কে বাস্তব কোন পদার্থের তৈরি পাত্রে রাখা যায়না কেনানা সেটা সুইসাইড করার শামিল।
১৯৯৫ সালে cern এর বিজ্ঞানীরা প্রথম ৯টি এন্টিহাইড্রোজেন তৈরি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে ঘোষনা দেন ।fermi lab এর বিজ্ঞানীরা পরবর্তিতে একই পদ্ধতি প্রোয়োগ করে ১০০ এন্টিহাইড্রোজেন তৈরির গৌরব অর্জন করেন ।এভাবে একের পর এক পৃথিবীর বিভিন্ন ল্যাবে নিত্যনতুন ভারি ভর বিশিষ্ট এন্টিম্যাটার তৈরি করা হচ্ছে।
কিনতু সমস্যা টা বাজেট নিয়ে ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ি কয়েক ট্রিলিয়ন গ্রাম এন্টিম্যাটার তৈরি করতে cern এর খরচ হয়েছে প্রায় ২,০০,০০,০০০$
সেহিসাবে এন্টিম্যাটার পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি জিনিস!!!