কিছুকাল ব্যাপিয়া চিন্তা করিতেছি যে একখানা পোষ্ট প্রসব করিব। কিন্তু পোষ্টের বিষয় বা রাজধানী কি হইবে তা নিয়া আমার গোবর ভর্তি মস্তিস্কে আলোড়ন চলিতেছে। ইহা নিয়া আমি যারপনাই ত্যক্ত ও বিরক্ত। ব্লগ নামক আজব দুনিয়ার এহেন শিল্প সম্মৃদ্ধ জায়গায় চোরা নাম (নিক) এর একজন গর্বিত মালিক হইলেও চার খানার বেশি যে পোষ্ট দিতে পারিনাই, তা নিয়া আমার আফসোস ও সুযো এর চেয়ে অযোগ্যতাই বেশী। বিধাতার বসুন্ধরায় সৃষ্টি হাজার হাজার অতিক্রম করিলেও লেখিবার জন্য আমার কোঠা শূন্য অতিক্রম করিল না।
অবশেষে কিছু খুঁজিয়া পাইলেও এহেন ভূমিকার নিমিত্তে অনেক বিরক্ত অথবা মনে মনে কিছু বলিয়াছেন তা আমি ঢের অনুভব করিতেছি।
ইদানিং লক্ষ্যে করিতেছি যে ঢাকা নামক ছোট নগর (আয়তনের দিক হইতে) যাতায়াত ও গন্তব্যে গমন ক্রমেই সাধ্যের অতিক্রম করিতেছি এই ছাপোষা মধ্যম নাগরিকদের কাছে। আমরা না পারি কিছু কহিতে না পারি সহিতে। কেবল বড়বাবুদের গাড়িদের নব্য হাল হাকিকত এর দিকে চাহিয়া আফসোস এর দৃষ্টি প্রেরণ অথবা ঘামে ভিজিয়া বাসের চৌহদ্দিতে দাড়ায়ইয়া নিজের ভাগ্যকে অভিশাপ দিতে ব্যস্ত থাকি। চিন্তা করিতে থাকি আমিও হয়ত একদিন বড়বাবুদের ন্যায় বড় হইবো, ভো ভো করিয়া গাড়ি চালাইবো আর বাস এ ঝুলিয়া থাকা আজব জন্তুদের দিকে তাকাইয়া এসিতে হিমেল বাতাস শুষিয়া বদনে মুচকি হাসি আনিব। ক্ষাণিকটা বাদে জ্যামে এফএম শুনিব, মাঝে মাঝে কাগজ পড়িব, রাতের নিদ্রা পূরণ না হইলেও গাড়িতে তা মিটাইয়া দিবো। এ সুখ স্বপ্নের বিনাস ঘটে কন্ডাকটরের কর্কশ ধ্বনিতে। ভাড়া নামক কী যেন আদায় করিতে তাহাদের কর্মব্যস্ততায় কোন সময় ভাটা পড়তে দেখিনায়। অগ্নিদৃষ্টি আরোপ করিয়া তৃতীয়বার ন্যায় ভাড়া চাহিলেও স্বভাব এর কারণে তাহার গন্ডদেশ এ সুযোগ্য নজরানা অথবা কটুবাক্য শুনাইয়া দ্ওেয়ার অদম্য ইচ্ছা থেকে নিজেকে বিরত রাখিলাম। রাগ পড়িয়া যাওয়ার জন্য কিছু না বলিয়া চুপ করিয়া থাকলাম। আমার এহেন রুপ ও চোরা মুখ এর অভিব্যাক্তি দেখিয়া কন্ড্যাকটর এর বুকে সাহসের উদয় হইল। বেচারা শক্তির জোরে আমার সাথে কুলাইয়া উঠতে পারিবে না জানিয়াও দুটো কথা শুনাইয়া দিলো। আমার পাশের ভাই এ যাত্রায় আমার পক্ষ হইতে দুচারটা ধমক দিয়া তাকে নিবৃত্তি করিলেও আমার রাগ তখন সীমা অতিক্রম করবার চেষ্টা করিতেছে। একটা দুটাকা নিয়া খসখসানি অথবা ভিতরে গিয়া দাড়াইবার জন্য হেল্পারের বক্তৃতা আমি পাশ কাটাইয়া যাইতে অভ্যস্ত। বাসে চলাচল এর এহেন বাস্তবিক সুখ অনুভূতি অর্জন অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অনেক পুড়িয়াছেন তা বেশ জানি। দুরত্বের হিসাবে এক ক্রোশ না হইলেও সেটুকু যাইতেও যে মাঝে মাঝে ১ -২ দুঘন্টা লাগিয়া যায়।
গন্তব্যে পৌছানের শত বাধার মুখে পড়িয়া রিকশা নামক তিন পায়া যন্ত্র দিয়ে যাতায়াত এর চেষ্টা আমার বাল্যকালের। কাজ পড়িয়া গেলে কিংবা কোচিং এর সময় হইয়া গেলে প্রাত:কালে রিকশা ভ্রমণ অতীব দরকারী হইয়া পড়ে। টাকার গুষ্টি উদ্ধার করিয়া তখন রিকশা চাপিয়া বসি এই ভাবিয়া যে ফিরিবার সময় বাবু আমি কিন্তু হাটিয়া ফিরিব। বার মাসের মতো শীত জাঁকিয়া বসিয়া হিমালয় পর্বতে যেমন বরফ জমিয়া যায়, আমার মানিব্যাগ এর স্বাস্থ্য তেমনি রুগ্ন হইয়া পরিলেও মাস্টার মশাইয়ের রুদ্র রুপ চোখের সামনে ভাসিয়া উঠতে দেখিয়া রিকশা ভাড়া করিতে আমি ব্যস্ত হইয়া যাই। বুকের মাঝখান দিয়া যার দু চারটা বুলেট অতিক্রম করিলেও দু আনা খরচ করিবার সামর্থ হইয়া উঠে না, সেই আমিই ২ - ৩ টাকার বাসভাড়া ২০ - ৪০ টাকা দিয়া জলে ফেলিবার সাহস অর্জন করি। শত হইলেও দেরি হইলে খধঃব হইয়া যাবে এ নীতিতে আজীবন অটল থাকিয়া যথা সময়ে উপস্থিত হইবার জন্য আমি আমার রাজ কোষাগারও শূন্য করিতে তৈরি আছি একথা আমি জোর দিয়া বলিতে পারিব। কিন্তু পথের রাজা রিকশা ভাইদের ইদানিং কিছু কর্মকান্ড আমার জীবনকে দু:সহ করিয়া তুলিছে। মিষ্ট কন্ঠে মামা বা চাচা বলিয়া ডাকিলেও তারা বর্তমানে দারোগার মতো গারদে পুরিবার ভাব নিয়া বসিয়া থাকেন। ভাড়া কম লইবার কথা দূরে থাক জায়গার নাম শুনিয়া পছন্দ না হইলে বলিয়া উঠে ”যামু না”। বিরক্ত হইয়া ”কোথায় যাইবা” জিজ্ঞেস করিলেও প্রত্যুত্তরে ”যামু না”। লাইনের লাইনের পর রিকশা দাড়াইয়া থাকিলেও তাদের এই যুদ্ধ বিরতির কারণ অনুসন্ধান এ আমার কালো চুলে পাক ধরিতেছে। না হয় আমার মত দু দিনের তরুন হাটিয়া যাইতে পারিবে কিন্তু ওই চল্লিশ বা পঞ্চাষ বছরের প্রবীন চাকুরিজীবি কী করিয়া অফিস গমন করিবে ?। তাহাদের তো আমাদের ঠেলিয়া, গুতাইয়া, লাফ দিয়া, দৌড়াইয়া বাসের উঠার সামর্থ নাই। মায়ের বয়সী খালাম্মারা বা আন্টিরা তাহাদের ফুটফুটে বাচ্চাদের নিয়া ইদানিং আসা যাওয়ার বিরাট ঝামেলাই পড়িতেছেন তাহা পত্রিকার মারফত জ্ঞাত হইয়াছি। স্কুল বা অফিস টাইমে তাহাদের দেখিলেই যে চালক ভাইয়েরা ১০ - ২০ টাকা ভাড়া বাড়াইয়া দেন তা আর নতুন কি ?? তাহাদের কথা না হয় বাদই দিলাম বৃষ্টির সময় বা রাত এ অসুস্থ যাত্রীকে নিয়া যাওয়ার সময় তাহারা রাজা হইতে মন্ত্রী এমনকি প্রেসিডেন্ট হইয়া যান তা আমার মত ভুক্তভোগীরাই দেখিয়া থাকি। যে পথ এ দু বছর আগেও ১০ টাকা দিলেও তাহারা সন্তুষ্ট থাকিত তা এখন ২০ টাকা বলিলেও মুখ ফিরাইয়া লয়। দেশে এমন কী যুদ্ধ বাধিয়া গিয়াছে যে ভাড়া দ্বিগুণ হইয়া তিনগুণ এ গিয়া ঠেকে ??
চালক ভাইদের সাথে যাত্রীদের সাথে এ আচরণ সবাই যে মানিয়া লই তাহা নহে। আমার মত যাহারা বুকের কষ্ট বুকেই সঞ্চিত করিয়া না রাখিয়া সমাজ কে নিজের বীরত্ব এক আধটু দেখাইয়া দিতে চায় তাহারা এর জোরালো না হইলেও যথেষ্ট প্রতিবাদ করিয়া থাকেন। ”যাবা না কেন ?” প্রশ্ন জিজ্ঞেস করিলে তাহারা আহারাদি ভালোরূপ হই নাই কিংবা বিশ্রাম এ ব্যস্ত আছি বলিয়া পাশ কাটাইয়া থাকেন। কিন্তু না যাইবার পিছনে যে অকর্মণ্য অদ্ভুত রহস্য লুকাইয়া আছে তাহা আমার মত অনেক এর বুঝিতে পারে। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা চাহিলে যখন অপরাধীর মতো জানিতে চাই,”এত ভাড়া কেন?” তখন বলিয়া উঠে, ”সব কিছুর দাম বাইরা গেছে। ভাতের কেজি এখন ” ” টাকা, তেলের দাম বাইরা গেছে..... জমা বাইরা গেছে” । রাগে স্তম্ভিত হইয়া একদা চরম বিরক্তে বলিয়া উঠি” ওই মিয়া আমনেরা ভাত খান আমরা কি মাডি খাই ??? দোকানদার রা কী আমাদের দুলাভাই লাগে না আমরা ফ্রি তে চাইল কিনি ??”"ক্ষোভের মাত্রা চরমে উঠিলেও তা অতিক্রম করিয়া তাহাদের বিখ্যাত উক্তিতে ” পোষাইলে যাইবেন, না হইলে যাইবেন না ”
ইহাতেই শেষ হইয়া যায় আমার যুদ্ধ জয়ের আকাঙক্ষা। যাহারা ভাড়া ঠিক না করিয়া গমনে ব্যস্ত হইয়া পড়েন তাহারা যে নতুন ঢাকায় আসার মত বিড়ম্বনার স্বীকার হন তা অস্বীকার করিতে পারি না। গল্পের মত ঘটিতে থাকে ঘটনাগুলো। ভাড়া ঠিক না করিয়া একদিন রিকশা হইতে নামিয়া ন্যয্য ভাড়া ১০ টাকা আগাইয়া দিতেই মামা বলিয়া উঠে, ”ঢাকা শহরে নতুন আইসেন মনে হয়! ২৫ টাকা দেন”। ন্যয্য ভাড়ার এই রকম অস্বাভাবিক মূল্যহানি দেখিয়া হয়ত বাসওয়ালারাও ভাড়া বাড়াইয়া দেয়ার ফন্দি আটেন! না হয় যেখানেই আমার জন্ম, এতটুকু জীবনের কুড়িটা বসন্ত যেখানে পার করিলাম সেইখানে আমি কী না নতুন!। আমার প্রতিবাদ টুকু মামার কর্ণকুহুরে পৌছাবার মাত্রই তিনিই বজ্র কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণার মত বলিয়া উঠেন,”খালি রিকশা দেখলেই কি লাফ দিয়া উঠতে মন চায় ?””
রিকশা বাগানোর এই যুদ্ধে আমি ক্রমাগত পরাজিত হইলেও হাল ছাড়িবার পাত্র আমি নই! বাল্যকাল হইতে যত আবদারী ও আদুরে কথা বার্তা শিখিয়াছি তাহা প্রয়োগ করতে ব্যস্ত থাকিতে দেখা যায় এই অধমকে। কিন্তু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, বুকের জমিয়ে থাকা দু:খ বাড়িয়া যায় যখন কপোত কপোতি বা মুয়ান্নাসদের নিয়া আনন্দে মামারা প্যাডল মারিতে শুরু করেন। কারণ তাহারা জানেন উনাদের কাছে ”চাহিমাত্র ইহার চালককে __টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে”। ইংরেজ সেনাপতি ডিউক কিংবা কবির মতো শতবার চেষ্টা করিতে থাকি এই যুদ্ধে। দুশ্চিন্তা ও অনাবশ্যক বিরক্তির সহিত এই কর্মকান্ডে আমার মূল্যবান সময় জলে ভাসিয়া যায়। সহসা কিরুপ একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা মস্তিকে উপস্থিত হয়। স্পর্ধা, ক্ষোভ, অভিমানদের বিদায় জানাইয়া কিছুকাল হইতে অল্প দুরত্বে ব্যবধানে আমার পদযুগল এর ব্যবহার শুরু করিয়াছি। ফল প্রাপ্তি এই খানে আশ্চর্যজনক। যুদ্ধ শুরু হইবার আগে যুদ্ধ জয় করিয়া নেওয়ার চিন্তায় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ আমি। কাজ না থাকিলে, হাতে কিছুটা সময় রহিলে, মামাদের কলা প্রদর্শনের মহান ও সুবর্ণ সুযোগ টা আমি সহজে হাতছাড়া করিতে অপারগ। নীরবে সহ্য করার দিন বোধহয় শেষ হইয়াছে। পিচ্চিকাল হইতে লারা বা গাঙ্গুলী হইবার নেশায় অল্প বয়সের ফূর্তিতে সারাদিন ধরিয়া ক্রিকেট খেলিয়া গায়ের রং কালো করিবার ছাড়া আর কিছু করিতে না পারিলেও ফিটনেস নামক আজব জৈব তেল শরীরে প্রবেশ করাইয়াছি। উহার বদৌলতে দ্বিপ্রহর রৌদ্রে গমন উদ্দেশ্যে হাটা তো দূরে থাক ফ্যাশন সচেতন পুংটারা ঘরের হইতে বাহির হওয়ার দু:সাহস না দেখাইলেও এই অধম তাহার ট্রেনিং প্রদর্শনে ব্যস্ত থাকে।
তাই আমি একা চলেতেছি দূরের পথে হাটিয়া হাটিয়া, ...
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো.রে .....
[ এই পোষ্ট লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত ও পর্যবেক্ষণ। লেখক বিজ্ঞানের ছাত্র বলে তার কাছ থেকে ভুলে ভরা পোষ্ট আসা স্বাভাবিক। তাই তিনি সবার কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন।
লেখক রিকশা চালক দের সাথে কোন রকম বল প্রদর্শন বা শক্তি প্রদর্শন এর ঘোরতর বিরোধী। লেখক মনে করেন চালক ও যাত্রীদের মধ্যে ইনসাফ ভিত্তিক চুক্তিই পারে সকল সমস্যার সমাধান করতে] মাননীয় মড়ারেটর গণ দয়া করে
আমার এই পোস্টটা প্রকাশকরে বাধিত করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:৩০