বন্ধু কি খবর বল?
কতোদিন দেখা হয়নি !
_______________________
আমি মানুষ হিসেবে বরাবরই অর্ন্তমুখী। না শব্দটা যুতসই হলো না। আমি আসলে অনেকটা শামুক টাইপের মানুষ। নিজের খোলস ভেঙ্গে বের হতে পারি না, শুধু নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকি। আমার বন্ধু বলতেও আছে হাতে গোনা কয়েকজন। তবুও কেন জানি দেশে ফেরার পরে সেই কয়েকজনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি।
ঘটনা : ১
_____
আমার ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজন হলো আলম। অন্য বন্ধু মারফত খবর পাই, বদমায়েশটা বিয়ে করেছে। বউ তার ইয়ারমেট, চট্টগ্রাম মেডিকেলেরই। শালা যে বিয়ের দাওয়াত দেয় নাই মূলত: সেই উদ্দেশ্যে তার চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করার জন্যই ফোন লাগাই সন্ধ্যার দিকে। রিং হতে থাকে রিসিভ করে না। আবার রিং দেই। এবার একটা কোমল কন্ঠের স্বর ভেসে আসে
- হ্যালো স্লামালাইকুম।
--ওয়াইলাইকুম আসালাম, আমি আলমের ফ্রেন্ড, অভ্র।
- আমি মিসেস আলম বলছি। ওতো এখন নামাজে।
আমি তো রীতিমত আকাশ থেকে পড়লাম। যে ছেলে কথা বলার সময় প্রতি তিনটা শব্দের পরে একটা অবধারিত গালি ব্যবহার করে সে এখন নামাজ পড়ছে। এর আগে ঈদের দিনেও তাকে নামাজ পড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম-
-- ভাবী, নাউজুবিল্লাহ বলবো, না আলহামদুলিল্লাহ বলবো বুঝতে পারছি না।
- কেন? আপনার বন্ধু ভালো হয়ে যাচ্ছে সেটা কি ভালো নয়?
-- তা ঠিক। তার মানে আপনি স্বীকার করছেন, সে আগে খারাপ ছিলো?
- হ্যাঁ, তা একটু তো ছিলো।
এরপর আরো কিছুক্ষণ ভাবীর সাথে গল্প হয় কিন্তু আমার বন্ধুর নামাজ শেষ হয় না। শেষে পরে ফোন করবো বলে লাইন কেটে দিই।
----------------------------
ঘটনা : ২
_______________
রোজা তখন প্রায় শেষ দিকে। হঠাৎ করে পুরনো বন্ধুদের কাছ থেকে ইফতার পার্টির দাওয়াত পাই। এক আড্ডায় অনেক পরিচিতজনের সাথে দেখা হবে, সো এই চান্স মিস করা ঠিক হবে না ভেবে সাথে সাথে রাজী হয়ে যাই। মহাখালীর আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে ইফতারের আয়োজন হয়। অনেক পুরনো বন্ধুদের মাঝে জাওয়াদকে দেখে একটু দৃষ্টিভ্রম হয়। কারণ ভার্সিটিতে থাকতে তার মুখ ভর্তি দাড়ি ছিলো। এখন দেখি সব হাওয়া। বাবুকে জিজ্ঞেস করি,
- কি ব্যাপার, আমাদের মৌ-লোভী সাহেবের দাড়ি-টাড়ি গেলো কই? জে.এম.বি. সন্দেহে ড়্যাব-ট্যাব ধরছিলো নাকি?
-- আরে না, ঢাকা ভার্সিটির হাওয়া লাগছে না গায়ে, তাই ভেক পাল্টায়া ফেলছে। ও তো এখন ঢাবিতে এম.বি.এ. করতেছে।
- ও আচ্ছা। তা শুধু কি গেটআপ চেইঞ্জ হয়েছে, নাকি স্বভাবও চেইঞ্জ হয়েছে?
-- ওটা কি এতো সহজে বদলানো যায়?
আমরা গেলাম জাওয়াদের কাছে। বাবু প্রথমে শুরু করে-
- এসব কি শুনতাছি দোস্ত? তুমি নাকি ডুবে ডুবে জল খাইতেছ?
-- কি শুনতেছ বলো?
- শুনলাম, তুমি নাকি এক মাইয়ার প্রেমে পইড়া দাড়ি ফালাইয়া দিছো? কেন দোস্ত? চুমা খাইতে সমস্যা হয় বইলা?
-- কি সব বেত্তমিজি কথা বলতেছ। আল্লাহ তোমার হেদায়েত করুক। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেছি- তিনি তোমারে একটু হায়া শরম দিক।
- ও আচ্ছা, তুমি করতে পারো আর আমি কইতে গেলে হাজী সাহেবের মুখটা খারাপ না? তা, আল্লাহর কাছে চাইলে কি সব পাওয়া যাইবো?
-- অবশ্যই যাবে। তুমি সৎভাবে চাও, দেখো পাও কিনা।
- ধুর মিয়া, আর ভাব .....ইয়ো না। তুমি যে আমার কাছে নর্থ-সাউথের মাইয়াদের মোবাইল নাম্বার চাইছিলা! কেন, ওইটা আল্লাহর কাছে চাইতে পারো নাই?আল্লাহ তো তাইলে তোমার ফোনবুক ভরাইয়া দিতো।
আমাদের তখন হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। জাওয়াদের মুখেও মিটিমিটি হাসি।