সেই প্রথম যেদিন স্কলারশিপের টাকা পেয়ে ওকে নুপুর বানিয়ে দিয়েছিলাম সে কি খুশি তার। ছোট্ট দু'পায়ে রুমুঝুম রুমুঝুম শব্দ তুলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছিলো। কতোবার যে আমাকে বলেছে, 'মামা আমাকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দাও। আমি নাচ শিখব।' আমি মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছি, 'হ্যাঁ মামুনি, দেবো। এই তো কয়দিন পরেই পরীক্ষা শেষ হবে তখন ভর্তি করিয়ে দেবো।' এভাবেই বছর পেরিয়ে যায় কিন্তু নাচের স্কুলে ভর্তি করানো হয় না। ওকে নিয়ে যখন ঘুরতে বেড়োয় তখন আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরতো। কিন্তু আপার কড়া নির্দেশ ছিলো, ওর টনসিলের প্রবলেম আছে, আইসক্রিম যেন কোনমতেই খেতে না দেই। কয়েক বছর পরে অপারেশন করা হলে তখন খেতে পারবে। সেই কয়েক বছর আসবে কিনা আমার জানা নেই। টিভিতে কার্টুন দেখার সময় ভলিউম বাড়িয়ে দিতো, পড়ার ডিস্টার্ব হতো বলে মাঝে মাঝে এসে বকা দিতাম। 'জিম, তোমাকে এতোবার করে বলেছি, এত জোরে টিভি চালাবে না। তবু তুমি কথা শোন না কেন? আর এখন কি টিভি দেখার সময়। যাও পড়তে বসো। ' অহেতুক অকারণ মামাগিরি ফলানো, কখনো বা অযথা বাড়াবাড়ি। তখন তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেত, তার প্রিয় বন্ধু মামাটা মাঝে মাঝে কেন ব্যাখ্যাতীত কিছু কাজ করে তার ছোট্ট মাথায় সেটার কূলকিনারা করা সম্ভব হতো না। সে গুটিগুটি পায়ে একবুক কান্না নিয়ে তার ঘরের দিকে চলে যেত।
আমি যখন এসব পুরনো স্মৃতিগুলো, সুখগুলো, বেদনাগুলো নিয়ে ভাবছি তখন জিম হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। জানি না, সে বাঁচবে কিনা। হয়তো একদিন আমার হাতে অফুরন্ত সময় হবে তার সব আব্দার পূরণের কিন্তু তখন সে হয়ে যাবে দূর আকাশের তারা। শত আহ্বানেও সে আর আমার কাছে আসবে না তখন। দূর থেকে ক্রমশ: বহুদূরে চলে যাবে। এভাবেই বুঝি মানুষ হারিয়ে যায়!
বিস্তারিত জানতে নীচের লিংক দুটি পড়ুন।
ছোট্ট জিম
জিম-একটি স্বপ্নকে বাঁচান