'এই ছকাল ছকাল কে আবার ফোন করে'- বলেই মোবাইল হাতড়ায় শামীম। আরামের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়াতে মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে যায় তার। বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো সি.টি.এন.। কিন্তু স্ক্রিনে নাম ভেসে ওঠে নাতাশা।
- হ্যালো নাতাছা। এতো ছকালে কি মনে করে!
-- শামীম ভাইয়া, আজ আমরা সবাই মিলে ফ্যান্টাসি কিংডমে যাবো। খুব মজা হবে, তুমিও চলো, খুব মজা হবে।
- না নাতাছা, আমার ছরীরটা আজকে বিছেছ ভালো নেই। তাছাড়া ফ্যান্টাছি কিংডম বাচ্চাদের জায়গা। তোমরা যাও। আমি একটু রেছ্ট নিই।
-- তাতে কি? তুমি বড়ো হয়েছো নাকি? তুমিতো বাচ্চাই। চলো চলো, খুব মজা হবে।
- না আমার আজ জরুরী কাজ আছে। আমি ছাপা'র ওখানে যাবো।
-- ছাপার ওখানে মানে? তুমি কি বই টই বের করছো নাকি?
- না না। ছাপা মানে আমার বন্ধু মোছতফা নুর ছাপা, ওই যে ছাইবার ক্যাফে আছে গুলছানে, ছেখানে যাবো।
-- ওহো, সাফা ভাইয়ের দোকানে যাবে? আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তাহলে এখন ঘুমোও। বলেই লাইন কেটে দেয় নাতাশা।
ফোন রেখে দিলেও আর ঘুম আসে না। এপাশ ওপাশ করতে থাকে সে। শেষে বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ে। অনেকক্ষণ ধরে আয়েশ করে নাস্তা খায়। কিছুক্ষণ পত্রিকার পাতা উল্টায়, পত্রমিতালীতে মেয়েদের ঠিকানা খোঁজে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে 'পাত্র চাই' বিজ্ঞাপন পড়ে। এইভাবে দশটা পর্যন্ত পার করে শামীম সাফার সাইবার ক্যাফের দিকে রওনা দেয়।
শামীমকে দেখে সাফা বেশ উল্লসিত হয়।
-- আরে দোস্ত এতোদিন পরে। তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না।
- আর বলিছ না। ব্যবছা, জি.আর.ই প্রিপারেছন এছব নিয়ে এতো বিজি থাকি ছময় হয়ে ওঠে না।
-- হুম। তোর উপর বেশ ধকল যাচ্ছে তাহলে। তার উপর নিশিতা এমন পল্টি দিলো।
কেউ যেন শামীমের বুকে দশ মণ ওজনের হাতুড়ি দিয়ে গদাম করে একটা বাড়ি দিলো। সত্যি সত্যি দিলেও বোধহয় এতো কষ্ট লাগতো না তার।
- বাদ দে তো ওছব। পাছ্ট ইছ পাছ্ট। এখন ভবিছ্যতের কথা ভাবতে হবে। এক নিছিতা গেছে কতো নিছিতা আছবে?
-- তা ঠিক। তা ঠিক। ভাত ছিটালে কাকের অভাব নেই বটে তবে কাক বাড়লে যে ভাত মিলবে তার গ্যারান্টি কি।
শামীম ঠিক বুঝতে পারে না সাফার কথা। তবুও বরাবরের মতো স্বভাবানুযায়ী মাথা নাড়ে ছাগলের মতো। দুই বন্ধুর আলাপ চলতে থাকে। বর্তমান আই.টি-র অবস্থা, সরকারী ওয়েবসাইটের দূরাবস্থা, ছাগল-ডট-কমের ভবিষ্যত এসব নিয়ে বেশ গুরুগম্ভীর আলোচনা হয়। সাফা জিজ্ঞেস করে - কি খাবি বল। কেক আর কোক দিতে বলি?
- না। কেক খাবো না। ঝাল কিছুর ব্যবছতা কর। ছিঙ্গারা-ছমুছা পাওয়া যায় কিনা দেখ।
-- আরে পাওয়া যাবে না মানে। অবশ্যই যাবে। বলেই দোকানের ছেলেটাকে হাঁক পারে সাফা।
- তুই একটু ছর তো। আজ মেইলটা চেক করা হয়নি। চেক করে দেখি।
সাফা উঠে গিয়ে শামীমকে বসতে দেয়। শামীম মেইল চেক করে। উঠতে গিয়ে আবার এম.এস.এনে লগ-ইন করে যদিও সে সংকল্প করেছিলো, আর কখনো এম.এস.এন-এর ছায়া মারাবে না। ছাগল যতই বলুক আমি আর কাঁঠাল পাতা খাবো না, সামনে কেউ নাড়ালে সে যে লোভ সামলাতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। একটু পরেই সে নড়েচেড়ে বসে। শাওন নামে একজন নক করেছে। শাওন নামটা হেভি কনফিউজিং, ছেলেও হতে পারে, মেয়েও। তবে চ্যাট স্পেশালিস্ট শামীম দু'মিনিটের মধ্যে বুঝতে পারে ওটা ছেলে, মেয়ে সেজে তার সাথে ফটকাবাজি করছে। মেজাজ ফরটি-ফাইভ হয়ে যায় শামীমের। সে সি.টি.এন. লিখে এন্টার চাপে, তারপর সাইন-আউট করে।
শামীমের সামনে প্লেটভর্তি শিঙ্গারা রাখা কিন্তু তার সবকিছু বিষ মনে হচ্ছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে একটা শিঙ্গারা নিয়ে মুখে দেয়।
দুপুরের দিকে শামীম বিদায় নেয় সাফার কাছ থেকে। বাইরে তখন বেশ কড়া রোদ। শামীম ট্যাক্সির সন্ধান করে। 'এই ট্যাকছি, এই ট্যাকছি। ছব দেখি ফিলাপ। আজ বাছেই (বাসেই) যেতে হবে দেখছি।'- মনে মনে বলে আর গাল পাড়ে সে।
বাস স্টপে এসে সে টিকিট কাটে। মিনিট পাঁচেক পরে বাস এসে থামে। শামীম বাসে উঠতে যাবে, ঠিক সেসময় তার চোখে পড়ে- টকটকে লাল কালিতে লেখা "নিশিতা পরিবহন"। তার মনে হলো, লেখাটা যেন কেউ ছুরি দিয়ে তার হৃদপিন্ড ফালা ফালা করে লিখেছে। সে ক্রোধে অন্ধ হয়ে যায়। ছুটে গিয়ে লেখাটা বরাবর লাথি কষে, একটা-দুইটা-তিনটা। সবাই অবাক হয়ে তার কান্ড দেখে। এরই মাঝে কে যেন পিছন থেকে তার কাঁধে হাত রাখে। সে মুখ ফিরিয়ে দেখে- শুভ। ঠিক তার পিছনেই নিশিতা। তার ঠোঁটে তখনো হাসির রেখা মুছে যায়নি।