১.
-------------------------------
হঠাত সেদিন বিকেল শামীম ফোন করে ইয়ার দোস্ত শুভকে। ফোন করেই বলেই- দোছতো ছুভ, তোর একটু হেল্প লাগবে। খুব ইমপরট্যান্ট।
শামীমের এই একটা সমস্যা, তার বংশের লোকজনের 'ছ' বর্ণের উপর আলাদা দুর্বলতা রয়েছে। তাই 'স','ষ','শ' তিনটাকে তারা 'ছ' দিয়েই চালিয়ে দেয়। বাংলা ভাষার সরলীকরণের পথিকৃত বলা যেতে পারে।
শুভ বুঝতে পারে না, কি এমন জরুরী কথা। সে জিজ্ঞাসা করে, তাড়াতাড়ি বল, আমি বিজি আছি।
শামীম আমতা আমতা করে বলে- তোকে একটা ফোন নাম্বার দিচ্ছি। মেয়েটার নাম নিছিতা, এম.এছ.এনে কথা (চ্যাট) হয়েছে।
শুভ বলে- কি নাম বললি? নিছিতা? এরকম বিশ্রি নাম কারো হয় নাকি?
শামীম বলে- নিছিতা তো ছুন্দর নাম। নিছি থেকে নিছিতা। এইবার ক্লোজাপ ওয়ানেও তো একটা গায়িকা ছিলো, ওই নিছিতা বড়ুয়া নামে।
শুভ এবার বুঝতে পারে মেয়েটার নাম নিশিতা। সে বলে- আচ্ছা ফোন নাম্বার পেয়ে কি করবো বল?
তুই ওকে ফোন করবি। বলবি তোর নাম ছামীম। যেভাবেই হোক আমার ছাথে একটা ডেটিং-এর ব্যবছ্থা করে দিবি। কল করার ছময় নাম্বার হাইড করে কল করবি।
আচ্ছা। কিন্তু আমার লাভ কি তাতে? তুই নিশিতার সাথে ডেটিং করবি আর আমি ডবডংকা।
দোছত, তোর জন্য এছপেছাল (স্পেশাল) ডিনারের ব্যবছথা হবে ছ্নুপিতে (স্নুপিতে)।
বেশ বেশ। তাহলে কুইক নাম্বার দে।
শামীম এস.এম.এস করে শুভর নাম্বারে।
২.
------------------------------
অঘটন-ঘটন-পটিয়সী শুভ ইতিমধ্যে নিশিতার সাথে শামীম সেজে ভাব জমিয়ে ফেলে। অবশেষে ঠিক হয় সামনের শনিবার তারা দুজন দেখা করবে । নিশিতার পরনে থাকবে সাদা শিফন শাড়ি আর শামীমের পরনে থাকবে নীল টি শার্ট।
৩.
------------------------------
গতকাল রাতে টেনশনে শামীম ঠিকমতো ঘুমোতে পারেনি। সকাল থেকে এই পর্যন্ত তিনবার দাঁত ব্রাশ করেছে, কমপক্ষে সাতবার পন্ডস মেখেছে মুখে। 'ইছ্
আরেকটু যদি ফরছা হতাম। লিজান জেন্টছ উপটানটা এবার কিনতেই হবে। রূপচর্চা ছুধু মেয়েদের জন্য এ ধারণা ঠিক না। ছেলেদেরও ছরীরের ছৌন্দর্যের দিকে খেয়াল রাখা দরকার' । আপন মনে বিড়বিড় করে সে আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একেকবার একেক রকম চুলের স্টাইল করে। সময় যেন পেরুতেই চাই না।
৪.
-------------------------------
ঘড়িতে এখন বারোটা বেজে পনের। শামীম চটজলদি বেরিয়ে পড়ে। একটু আগে ভাগে যাওয়াই ভালো। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় যখন একটা তখন নিশিতাও এসে পৌঁছে নির্ধারিত স্থানে। চিনতে বেগ পেতে হয়না কারোই। সাদা শিফন, নীল টিশার্ট মিলিয়ে নেয় দুজন।
নিশিতাই প্রথম কথা বলে-
আপনি নিশ্চয় শামীম।
হ্যাঁ আমি ছামীম। আপনি নিছচয় নিছিতা।
নিশিতা একটু থতমত খায়, তড়িৎ সামলে নেয় নিজেকে। হ্যাঁ আমি নিশিতা।
চলুন কোণার টেবিলে গিয়ে বছি। তারা দুজনে কোণার টেবিলে গিয়ে বসে।
নিশিতার মনে ঘুরপাক খায় অজস্র প্রশ্ন। টেলিফোনে যে কথা বলেছে তার সাথে সে তো এভাবে কথা বলেনি। নাম্বার হাইড করে কথা বলার দরুন এখন সে যাচাইও করতে পারছে না। তার মানে একটা গরমিল আছে।
শামীম বলে- আপনাকে একটা কথা বলি? উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই সে বলে, ছাদা ছাড়িটাতে আপনাকে যা ছুইট দেখাচ্ছে না, কি আর বলবো। আপনি আছলেই খুব ছুন্দর।
এতোগুলো 'ছ'-এর ধাক্কা সামলানো নিশিতার জন্য বেশ কষ্টকরই হলো। তবুও ভদ্রতা করে বললো, আপনাকে ধন্যবাদ। দেখা হলে আপনার সম্পর্কে বলবেন বলেছিলেন। দেখাতো হলো, এবার বলুন।
হুম বলছি। তার আগে খাবারের অর্ডার দেই। আপনি কি খাবেন? আমি রাইছ আর এছপেনিয়ান ফিছ কারি নেবো। ওরা এটা খুব ভালো রান্না করে। একেবারে ছুপার্ব।
এখন নিশিতা শামীমের কথাগুলো উপভোগ করছে। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে সে বললো, ঠিক আছে। আমার জন্যও একই অর্ডার দিন।
অর্ডার দিয়ে শামীম শুরু করে, আমি আছলে একটা প্রাইভেট ভার্ছিটি থেকে বি.বি.এ কমপ্লিট করেছি। ছফটওয়্যারের বিছনেছ করি। ভাবছি এবার মাছর্টাছটা করবো। তবে এম.বি.এ না। মাছটার্ছ করবো কম্পিউটার ছায়েন্ছে। শুধু মাছর্টাছ না পি.এইচ.ডিও করবো ঠিক করেছি। তা আবার দেছে না বিদেছে, আমেরিকায়। আই.ই.এল. টি. এছ করেছি, কিন্তু জি.আর.ই করতে হবে। ইনছাল্লাহ পারবো।
অবশ্যই পারবেন। আপনি না পারলে কে পারবে। নিশিতা দৃঢ়কন্ঠে বলে। তবে আমার জানা মতে আমেরিকা বা ইউরোপের বেশির ভাগ ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার সায়েন্সে মার্স্টাস অ্যাডমিশন নিতে হলে প্রি-রিকুইজিট কোর্স করা থাকতে হয় ব্যাচেলরে। তাই একটু ভালো করে খোঁজ খবর নেবেন।
এটাতো ভালো কথা বলেছেন। আমি তো আগে এটা ভাবি নাই। শামীম চিন্তায় পড়ে যায়।
আরো বেশ কিছু কথাবার্তা হয়। কিন্তু কোনটাই জমে না। শামীম মারাত্মক রকমের ভোদাই টাইপের। নিশিতার নিস্পৃহতা সে বুঝতে পারে না। শুধু নিজের সম্পর্কেই লেকচার দিতে থাকে।
বিদায়ের সময় শামীম বলে- রাতে ফোন করবো। ওহো, আরেকটা কথা। আপনি একটা নতুন ছিম নিয়ে ফেলেন। গ্রামীণ ডিজুছ নিলে খুব ভালো হবে। কম রেটে কথা বলা যায় ছারা রাত।
আচ্ছা দেখি। এখন আসি তাহলে। বলে নিশিতা পা বাড়ায়।
এরই মাঝে নিশিতা করণীয় ঠিক করে ফেলেছে। সে বাসা থেকে সিমের ডকুমেন্ট নিয়ে গ্রামীণ অফিসে যায়। তাকে যে আননোন নাম্বার থেকে ফোন করা হয়েছে সেটা বের করে।
৫.
------------------------------
বাসায় ফিরেই ফোন করে তবে নিজের নাম্বার হাইড করে। গলাটা একটু অন্যরকম করে সে শুভর সাথে কথা বলে। একটা রহস্যময়তা সৃষ্টি করে ফোন রেখে দেয়। আবার রাতের দিকে ফোন করে শুভকে। শুভও অজানা কৌতূহলে বিভোর হয়ে পড়ে। এদিকে শামীম ফোন করে বিজি পায়। অধৈর্য্য হয়ে ওঠে। নিশিতা শুভর সাথে কথা শেষ করে ফোন অফ করে দেয়।
৬.
-------------------------------
একসময় শুভ অস্থির হয়ে ওঠে নিশিতার সাথে দেখা করার জন্য। নিশিতা মনে মনে প্ল্যান ঠিক করে আর কয়েকদিন ধরে প্র্যাকটিস সেরে নেয় পরিচয়পর্বের। 'আমি নিছিতা, আপনি নিছছয় ছুভ।ৎ হঠাত একদিন শুভকে ফোন শেষে ফোন অফ করতে যাবে সেসময় শামীমের ফোন আসে। নিশিতা রিসিভ করে।
শামীম বলে- নিছিতা বলছেন?
হ্যাঁ।
হ্যাঁ, নিছিতা বলছি। আপনি কি ছামীম ছাহেব?
শামীম ভ্যাবাচ্যাকা খায়, তোতলাতে থাকে। হ্যাঁ, কি-কি-কিন্তু কয়দিন ধরে আপনার কোন খবর নেই। খুব টেনছনে ছিলাম। ফোন করলে বিজি নয় বন্ধ, এম.এছ.এনেও আছেন না। কি হয়েছে আপনার?
নিশিতা হাসে। আমার কিছু হয়নি ছামীম ছাহেব। আমি আছলে ভাছার উপর একটা কোর্ছ করছি। তাই একটু বিজি আছি। কোর্ছ ছেছ হলে আপনাকে ফোন করবো। বলেই লাইন কেটে দেয়।
৭.
-------------------------------
শুভ আর নিশিতা এখন সেই কোণার টেবিলে বসে গল্প করছে। নিশিতা বলছে- ছুভ আপনি খুব এছমার্ট।
কিন্তু আমি যে নিছিতা ছেটা এখনো বুঝতে পারেননি।
শুভ চমকে ওঠে। তাকে পালাতে হবে। কিন্তু কোথায় পালাবে? সে যে ইতিমধ্যে নিশিতার দু'চোখের মায়ায় বন্দি হয়ে গেছে।
** সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে নিতান্তই কাকতাল।