যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং আরও জোরদার করেছে জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার বিচারকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরকম সময়ে জামায়াত তাদের বিদেশি মিত্রদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রবাসী জামায়াত নেতাদের উদ্যোগে গঠিত 'সেইভ বাংলাদেশ' নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কথিত মানবাধিকার সংস্থার ব্যানারে এসব তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এরকম চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত মনে করে, বিচারে শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের জন্য দণ্ডিত হতে হবে। বিদেশি সরকারগুলো চাপ দিলে সরকার তার অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে। এমনকি আপসও করতে পারে সরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের
'গতি-প্রকৃতি' পরিবর্তন হতে পারে। পঞ্চাশের দশকে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর মৃত্যুদণ্ড একই প্রক্রিয়ায় বৃহৎ শক্তির চাপে ধাপে ধাপে বাতিল করা হয়।
জামায়াত কার্যত মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড) ঘরানার রাজনৈতিক দল। উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশের ২৪টি দেশে ইখওয়ানের মতাদর্শে পরিচালিত মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। অভিন্ন মতাদর্শের এসব দল একেক দেশে একেক নামে পরিচিত। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় জামায়াতে ইসলামী নামে সংগঠিত এসব দল।
মিসর, তুরস্ক ও তিউনিসিয়ায় ক্ষমতাসীন দলগুলো ইখাওয়ানপন্থি। তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট_ এ কে পার্টি, মিসরের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, তিউনিসিয়ার শাসক দল আন্নাহাদা ও বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামী একই মতাদর্শের। এসব দেশ থেকে চাপ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসান আল বান্না ১৯২৮ সালে মিসরের কায়রোতে প্রতিষ্ঠা করেন ইখওয়ান। এর ১৩ বছর পর জামায়াতের প্রতিষ্ঠা করেন সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। ইতিহাসবিদ ফিলিপ জেনকিন্সের গবেষণা অনুযায়ী, হাসান আল বান্না ও সাইয়েদ কুতুব প্রথমে মওদুদীর রচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার মতাদর্শ অনুযায়ী গঠন করেন 'অগ্রগামী ইসলামী বিপ্লবী দল' ইখওয়ানুল মুসলিমিন। পরে শিষ্যদের অনুপ্রেরণায় মওদুদী গঠন করেন জামায়াত, যা ইখওয়ানের ভারতীয় সংস্করণ।
জামায়াত এসব দেশের ইখওয়ানপন্থি ইসলামিক সরকারগুলোর কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। জামায়াত অভিযোগ করছে, তারা নির্যাতনের শিকার। তারা দাবি করছে, তারা একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ করেনি।
সম্প্রতি তুরস্কের কাদিকয় স্কোয়ারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামপন্থি সাদা'ত পার্টি এ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সমাবেশ প্রবাসী জামায়াত নেতাদের ইন্ধনেই হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সমকালকে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী জামায়াতের অব্যাহত প্রচার ও দেশগুলোতে লবিংয়ের কারণেই মুসলিম বিশ্বের কিছু নেতা একে মুসলিম নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করছেন। এটা সরকারের এক প্রকার ব্যর্থতা হিসেবেই মনে করছেন তিনি। তার মতে জামায়াতের সংগঠনগুলোর অপপ্রচারের পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নেই সরকারের। সরকার মুসলিম বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে পারেনি যুদ্ধাপরাধের বিচার মুসলিম দমন নয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কৃতকর্মে বিচার।'
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিংয়ের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও জামায়াতের একাধিক নেতা আলাপচারিতায় এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তুরস্কের সঙ্গে জামায়াতের সুসম্পর্কের কথাও বলেন তারা। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তিনবার তুরস্ক সফর করেন। নিজের একটি লেখাতেও এ তথ্য স্বীকার করেন তিনি। অবশ্য বিদেশে লবিং জোরদার করার কথা অস্বীকার করেন দলটির মজলিসে শূরা সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারে জামায়াতের ১০০ প্রবাসী নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে জামায়াতকে দমন করা হচ্ছে
Click This Link