মোলা, মোয়া, মলা, মরারু, মৌচি, মোওয়া বা মওয়ালীঃ এই অতি পরিচিত ছোট মাছটি নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ডোবা সর্বত্র পাওয়া যায়। ইহা ২-৪ ইঞ্চি দীর্ঘ; পানির উপরের স্তরের বাসিন্দা এবং উপরের এলাকার খাদ্যের খাদক। স্থানান্তর দ্বারা এই মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।
ছবিঃ
ঢেলা, মাউয়া, কোটি বা গুনতাঃ এটি নদী-নালা, ও বিল-ঝিলের মাছ। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। এদের আকৃতি চৌকনা ধরনের, মাথা চাপা, মুখ ছোট, ঠোঁট পাতলা, পিঠের দিকে উঁচু। দেহ রূপালী কিন্তু পৃষ্ঠভাগ কালো এবং ডানা বা পাখনা সবুজাভ। এই মাছটিও মলার মত ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ বলে কথিত।
ছবিঃ
চেলা, বনস্পতি বা কাটারিঃ এটি ছোট, দীর্ঘাকৃতি ২-৪ ইঞ্চি দীর্ঘ মাছ। এগুলো উপরের স্তরের খাদক এবং শুককীট নাশক হিসেবে পরিগণিত। এগুলো নদী, বিল ও বন্যা প্লাবিত খালে পাওয়া যায়।
ছবিঃ
বাইলা, বেলে, বেলিয়া, ভালিয়াঃ এই ছোট হতে মাঝারী আকারের মাছ কিছুটা চোংগা আকৃতির। মাথার প্রায় পিছন দিকের কাছাকাছি চক্ষুযুক্ত মাছটি হলুদাভ-ধূসর বর্ণবিশিষ্ট ও প্রায় হাড় বিহীন ও মোলায়েম। এটি বিভিন্ন শ্রেণীর শৈবাল থেকে শুরু করে ছোট পোকা মাকড় ও মাছকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এগুলো সাদু ও লোনা উভয় প্রকার পানিতেই পাওয়া যায়। এই মাছ সাদু পানি থেকে লোনা পানিতে গিয়ে ডিম পাড়ে। এই মাছ বড়শি দ্বারা ধৃত হয় এবং ছোট চিংড়িকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ছবিঃ
বাইমঃ এই মাছ দীর্ঘ ও খানিকটা চোংগাকৃতি, ১০-১৫ ইঞ্চি লম্বা, সবুজাভ দেহ-বর্নযুক্ত ও সুস্বাদু। পিঠের দিকে জলপাই-সবুজাভ ও নিচের দিকে সাদাটে। দেহের পাশে বহু ধূসরাভ সাদা স্পট দেখা যায়। এটি নদী-নালা ও খালের পরিষ্কার ও ঘোলাটে উভয় প্রকার পানিতেই বাস করে। এরা শ্যাওলা, মাটি, ছোট মাছ ও উদ্ভিদ ইত্যাদী খেয়ে জীবন ধারন করে। এদের দিম আঠার মত কোন কিছুকে অবলম্বন করে আটকে থাকে।
ছবিঃ
বামঃ এরা দেখতে বাইমের মত এবং বাইমের গণভুক্ত কিন্তু আকারে অনেক বড়; ১৫-২৫ ইঞ্চি দীর্ঘ। বাদামী বর্ণে, পৃষ্ঠ এলাকায় ও পাশে গভীর বাদামী স্পট ও ডোরা দেখা যায়। ডানা লেজের কাছাকাছি বিস্তৃত এবং বিভিন্ন প্রকার স্পটযুক্ত। এই মাছ বদ্ধ পানিতে কাদায় তথা তলদেশে বাস করে। পানি শুকালে এই মাছ নিজেকে কাদায় ডুবিয়ে দেয়। এগুলো অন্য মাছের পোনা, দিম ও ব্যাঙাচি খায়। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
ছবিঃ
তারা বাইম, কোটা বাইম বা গাইচিঃ উপরোক্ত দুই প্রকার বাইমের মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট (১২-১৮ ইঞ্চি)। এই বাইমের পৃষ্ঠ এলাকায় কককগুলি কাঁটা থাকেযার আকার লেজের দিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত। বর্ণ বাদামী ধরণের। এগুলো কর্দমাক্ত খালে বাস করে। জোয়ার ভাটা এলাকার লোনা পানিতেও এদের দেখা মেলে। এমনকি বর্ষাকালে ধান বা পাটক্ষেতেও দেখা যায়।
ছবিঃ
খললা বা হাল্লাঃ ছোট হতে মাঝারী আকারের এই মাছ, বাংলাদেশ, পশ্চিমবংগ ও মায়ানমারে পাওয়া যায়। দৈর্ঘে ৭-১৫ ইঞ্চি, উপরের দিকের বর্ণ হালকা বাদামী এবং নিচের দিকে তথা পেটের দিকে ক্রমশ সাদাটে ভাবাপন্ন। পিঠের ও লেজের পাখনা ধূসর বর্ণ। এই মাছ প্রধানত নদী ও মোহনার মাছ এবং পানির উপরের দিকে সাঁতার কেটে বেড়ায়। কিন্তু চমকিত হলে নিমেষে গভীর পানিতে ডুব মারে। বড় বড় নদীতে টানা জালের সাহায্যে এই মাছ ধরা হয়।
ছবিঃ
ভেদা বা মেনীঃ মাছটি ৫-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, গাত্রবর্ণ সবুজাভা বাদামী পিতলাভ চমক বিশিষ্ট। মুখ উপরের দিকে ঊঠানো ও পিঠের কাঁটা দৃঢ়। লেজের পাখনা দীর্ঘ ও গোলাকৃতি। এগুলো ছোট মাছ ও শুককীট খেয়ে জীবন ধারন করে। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
ছবিঃ
ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভুল হলে ধরিয়ে দেবার জন্য পাঠকগণকে অনুরোধ করছি।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৪৯