সব প্রশংসা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।
মুমূর্ষু রোগীর জন্য জীবন বাঁচানো রক্ত নিয়ে চলছে অন্যরকম এক বাণিজ্য। জরুরি সময়ে প্রয়োজনীয়, নিরাপদ রক্তের পরিবর্তে মিলছে পেশাদার রক্ত দাতার অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ রক্ত। শুধু তাই নয়, বেশি মুনাফার আশায় ব্লাড ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত রক্তে মেশানো হচ্ছে স্যালাইন, লবণ ও পানি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ আদালত ধানমন্ডির শংকর প্লাজা এলাকার সিটি ব্লাড ব্যাংক, লেক সার্কাস কলাবাগানের ক্রস ম্যাচ ব্লাড ব্যাংক, মোহাম্মদপুর রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক, মহাখালীর রোগী কল্যাণ ব্লাড ব্যাংক ও ডে কেয়ার সেন্টারে অভিযান চালায়। সেখানে স্যালাইন মিশ্রিত রক্তের প্যাকেট জব্দ করে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়।
প্রতি ব্যাগে ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে ৫৫ ভাগ প্লাজমা (পানীয় অংশ) ও ৪৫ ভাগ সেল ( (কোষ) থাকে। দেখা গেছে, অসৎ ব্লাড ব্যাংকগুলো অধিক লাভের আশায় রক্ত ও প্যাকেটের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত পানি মেশায়। যদি একটি প্যাকেটে ২২ দশমিক ৫০ মিলিলিটার স্যালাইন বা লবণ পানি মেশানো হয় তাহলে ২২ দশমিক ৫০ মিলিলিটার সেল (কোষ) কমে যাবে। ফলে একদিকে বেশি দামে রক্ত কিনে ক্রেতা যেমন প্রতারিত হবে, তেমনি এই রক্ত যে কারও শরীরে ঢুকলে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছে, রক্তে কোন কিছু মেশানো হলেই তা মানবদেহের জন্য হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের কোন রক্ত কাউকে দেয়া হলে তা রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে পড়ে। এজন্যই কারও রক্ত নেয়ার আগে রক্তের ৫টি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। রক্ত দাতার রক্ত গ্রহণ করার আগে এইচবিএজি ‘হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাস, এইচসিভি বা ‘হেপাটাইটিস সি’ ভাইরাস, ‘এইচআইভি’ এইডস, সিফিলিস বা কোন যৌন রোগ ও ম্যালেরিয়াল প্যারাসাইটের জীবাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। রক্তের গ্রুপিং (এবিও) ও ক্রস ম্যাচিংও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রক্ত দাতা শেষ কবে রক্ত দিয়েছে সেই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখা হয়। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের যে কোন মানুষ যত সুস্থ সবল হোক না কেন, বছরে সর্বোচ্চ ৩ বার রক্ত দিতে পারে।
স্ক্রিনিং টেস্টবিহীন জীবাণুবাহী কোন রক্ত যদি গ্রহীতার শরীরে প্রবেশ করে তাহলে অন্যূন দেড় মাস ও অনূর্ধ্ব দেড় বছরের মধ্যে এই রোগের জীবাণু তার শরীরে স্থায়ী হয়ে যাবে এবং রোগী অনুমিতভাবেই সেই রোগ বহন করবে। রক্তের প্যাকেটে স্যালাইন মিশ্রিত থাকলে রক্তের নির্ধারিত প্লাজমা (জলীয় অংশ), সেল (কোষ) ও রক্তে হিমোগ্লোবিন-এর যে কোন একটির পরিমাণ কমে যাবে। এই রক্ত যার শরীরে প্রবেশ করবে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হবে।
রক্ত বিক্রির এসব প্রতারণার মাধ্যমে অনিরাপদ ও ঝুকিপূর্ণ রক্ত সংগ্রহ করে বিক্রি হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে। ফলে অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ, স্যালাইন ও লবণ পানি মিশ্রিত রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ঢুকে যাচ্ছে মুমূর্ষু রোগীর শরীরে। বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। সেই সঙ্গে বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক (বেসরকারি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র)’ সংখ্যা ৬৯টি। রাজধানীতে এই সংখ্যা ৫০টি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে অবৈধ ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রক্ত কেনা-বেচায় তাদের প্রতারণা ও অপকৌশল।
ব্লাড ব্যাংকের রক্ত গ্রহণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। দেশে গত ৯ বছরে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার ব্যাগ দূষিত রক্ত শনাক্ত হওয়ার পর তারা এ সতর্কীকরণ বার্তা দিলো। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানায়, শনাক্তকৃত ওই ২৮ হাজার ব্যাগ দূষিত রক্তে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সির মতো মারাত্মক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র। ব্যক্তিমালিকানাধীন রক্তদান কেন্দ্রগুলোর ৪৭ ভাগ কেন্দ্রে কোন পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ চলে বলে অভিযোগ করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু এক্ষেত্রে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করার যে কী ফযীলত তার পবিত্র দ্বীন ইসলামী চেতনা প্রসারিত থাকলে পেশাদারদের রক্তের বিভীষিকা থেকে মুক্ত থাকতে পারতো মানুষ। মুক্ত থাকতে পারতো সমাজ।
উল্লেখ্য, ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে, “মৃত্যুপথযাত্রী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর উছীলায় এক দেহব্যবসায়ী মহিলা জান্নাতে গিয়েছে।”
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত- মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচাতে সাহায্য করা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কত মহান কাজ তথা নিশ্চিত জান্নাতে যাওয়ার কত বড় উছীলা তা যদি ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসার করা যেতো; তাহলে ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশে সহজেই স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা প্রবলভাবে তৈরি হতো।
বলাবাহুল্য, এসব অনুভূতি জাগরূক ও জোরদারের জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত, নেক সংস্পর্শ তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে সুমহান নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)