ছোটবেলায় হঠাৎ করে আমার নাদুস-নুদুস শরীরটা কোনও রকম বিপদ সংকেত ছাড়াই চিকন আলীকে অনুসরণ করা শুরু করলো ৷ পরিবারে বিষয়টা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেল ৷ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন নানি ৷ তার পরামর্শে মা-বাবা দুইজন মিলে উত্তরবঙ্গের ডাক্তারদের শান্তি হারাম করা শুরু করলেন ৷ কোনও প্রকার ফলাফল না পাওয়ার প্রেক্ষিতে তারা ঢাকাতে হানা দিলেন ৷ সকল ডাক্তারের একই কথা,কোনও সমস্যা হয়নি ৷ নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই স্বাস্থ্য ঠিক হয়ে যাবে ৷ ডাক্তারদের পরামর্শে আমার ঘাড়ে পুষ্টির পাহাড় চাপিয়ে দেয়া হলো ৷ কিন্তু শরীরটা চিকন আলীকেই আইডল ভেবে বসে থাকলো ৷ আমার এই উচ্চমানের স্বাস্থ্যহীনতার কারণে গ্রামের সবাই মিলে আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে দিল ৷ যেন তেন কোনও মন্ত্রী নয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রী ৷ কত বছর এই উপাধি ছিল মনে নেই ৷ তবে এখনও একটা উপাধি গ্রামের মুরুব্বিদের মুখে টিকে আছে ৷ "গুটু" ৷ আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় যার অর্থ বেঁটে ৷ আমার এই ৫ ফিট ১১ইঞ্চি দেহটার সাথে এরকম একটা উপাধি কীভাবে যোগ হলো বুঝতে পারলাম না ৷ রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করলাম ৷ জানতে পারলাম,আমার দাদার নাকি এই উপাধি ছিল ৷ কিন্তু দাদাও তো যথেষ্ট লম্বা ছিলেন ৷ তাহলে তাকে কেন গুটু বলা হতো?প্রশ্নটা মনের মাঝেই রেখে দিয়েছিলাম ৷ উত্তর খুঁজতে গিয়ে যদি তার দাদার ইতিহাস চলে আসে তাহলে ব্যাপারটা ভয়ানক হয়ে যাবে ৷ ক্রীকেট খেলার সময় ব্যাটিং-এ নিয়মিত লিটন দাসের মতো পারফর্মেন্স করলেও ফিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে আমি দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলাম ৷ উইকেট কিপার হিসেবে এলাকায় মোটামুটি নাম ডাক ছিলো ৷ বন্ধুরাতো সাঙ্গাকারা বলে ডাকতো ৷ বিষয়টা মাঝে মাঝে আমাকে বেলুন মতো ফোলাতো ৷ কিন্তু আমি বুঝতে পারি নাই যে আমার ক্যারিয়ারে আরেকটা উপাধি যোগ হতে যাচ্ছে ৷ সাঙ্গাকারা নামটাকে সংক্ষেপ করে সবাই সাঙ্গা ডাকা শুরু করলো এবং পরিশেষে বিবর্তনের ধারায় সেটা হয়ে গেলো "ছ্যাঙ্গা" ( শুয়োপোকা ) ৷ হাইস্কুল লাইফের পুরোটা সময় এই কীটের নামটা আমার সাথে জড়িয়ে ছিল ৷ ফলাফল স্বরুপ,রাগে দুঃখে ক্রীকেট থেকে অবসর নিলাম ৷ কলেজ লাইফে প্রিয় ফিজিক্স স্যার পঙ্কজ সাহা স্যার একটা উপাধি দিয়েছিলেন ৷ কোনও একদিন ক্লাশে বাঁদড়ামি করার সময় স্যার দেখে ফেলেন ৷ দাঁড় করিয়ে তার চলমান লেকচার থেকে একটা প্রশ্ন করলেন ৷ প্রশ্ন শুনে হা করে স্যারের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিচ্ছু করার ছিল না ৷ স্যার অবশ্য আমাকে কিছু বলেননি ৷ শুধু গোবর গনেশ বলে বসতে বলেছিলেন ৷ বন্ধুরা যতটুকু না এই নামে সম্বোধন করতো তার চেয়েও কয়েক গুণে বেশী সম্বোধন করতো বান্ধবীরা ৷ কলেজের ঐ শেষ বছরটাই এই উপাধির স্থায়িত্ব ছিল ৷ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনও উপাধি পাইনি ৷ নতুন উপাধি পেলাম বিবাহিত জীবনে ৷ যদিও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এবং বিবাহিত জীবন প্রায় একসাথেই শুরু হয়েছে ৷ তবে উপাধিটা পেয়েছি পড়ালেখার জগৎ ত্যাগ করার পর ৷ একদিন এশার নামাজ পড়ে বাসায় এসে দেখি মালি চাচা বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত ৷ পরেরদিন বীজ লাগাবেন ৷ আমার ছোটবেলা থেকেই কোদাল দিয়ে মাটি কোপাতে খুব ভালো লাগে ৷ লেগে গেলাম তার সাথে কোপাকুপিতে ৷ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে কাজ করলাম ৷ অবশেষে রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই বউ ধাক্কায়া তুলে দিল খাবার খাওয়ার জন্য ৷ খাওয়া-দাওয়া না করে এতক্ষণ মাটি কোপাকুপি করায় সে চরম লেভেলের ক্ষেপছে ৷ কিন্তু পরক্ষণেই চুপ হয়ে গেল ৷ কাছে এসে আমার শরীর শুঁকে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো ৷ আমি কিছু বুঝলাম না ৷ দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড চুপ থেকে হুকুম ছাড়লো গোসল করার জন্য ৷ আমি অসময়ে গোসলের হুকুম দেওয়ার কারণ জানতে চাইলাম ৷ সে জানালো,আমার শরীর থেকে নাকি মশার কয়েলের গন্ধ বের হচ্ছে ৷ এরপর থেকে সে যতবারই আমার শরীর থেকে গন্ধ পেয়েছে ততবারই সেটা হয়েছে কয়েলের গন্ধ এবং তৎক্ষণাত গোসল করা ছিল বাধ্যতামূলক ৷ সামুতে এ্যাকাউন্ট খোলার সময় কী নাম দেব খুঁজে পাচ্ছিলাম না ৷ বউ চা দিতে এসে বলে গেল আমার শরীর থেকে মশার কয়েলের গন্ধ বের হচ্ছে এবং অতি তাড়াতাড়ি যেন গোসল করে ফেলি ৷ তখন ভাবলাম,এতদিনতো অন্য লোকেরা আমার উপাধি দিয়েছে,আজ আমার উপাধি আমি নিজে দেব ৷ সামুতে লিখে ফেললাম,'মশার কয়েল' ৷
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:৪১