somewhere in... blog

এজেন্ট রায়ান।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দূর থেকে একটা মৃদু শব্দ শোনা যেতেই সচকিত হল জেসন। যদিও জেসনের বস কখনও লেট করেনি, কিন্তু আজ লেট করেছে। সেইজন্যই কিছুটা টেনশনে ভুগছে জেসন। দিগন্তে লাল আকাশে সেসনা বিমানটা দেখা যেতেই নিজেকে মনেমনে প্রস্তুত করে নিল। সিগারেটটা নিচে ফেলে জুতোর তলা দিয়ে মাড়িয়ে দিল। মাঝ আকাশে থাকতেই বিমান থেকে একজন জাম্প করল নিখুঁতভাবে। সেই পাথরের মতো অবয়ব দেখে এই সাঁঝের আলোতেও নিজের বসকে চিনতে ভুল হল না মেজর জেসনের। কিছুক্ষনের মধ্যেই লস এঞ্জেলেসের মাটিতে পা রাখল ব্ল্যাক ফাইটারস এর চীফ সৌরভ রায়ান। দৌড়ে তার কাছে পৌঁছেই স্যালুট করল জেসন। হাল্কাভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে পার্ক করে রাখা নিজের ল্যাম্বরজিনি অ্যাভেন্টাডোর এল পি সেভেন হান্ড্রেড এর দিকে এগিয়ে গেল রায়ান। গাড়িতে উঠার পর জেসন তাদের এজেন্সির লস এঞ্জেলেস শাখার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাতে শুরু করল রায়ানকে। আর রায়ান চুপচাপ শুনে যেতে লাগলো। আধা ঘণ্টা পর পৌঁছুল ওরা হোপ স্ট্রীট এর মাথায়। কানে তালা লাগান আওয়াজ তুলে ওদের পাশ কাটিয়ে ছুটে গেল এলএপিডির কয়েকটা গাড়ি। তাদের মাঝে একটি ফায়ার সার্ভিসের ইঞ্জিনও ছিল। রায়ানের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ওকে সতর্ক করে তুলল। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেল ওদের ব্ল্যাক ফাইটারস এর লস এঞ্জেলেস ব্রাঞ্চ অফিসের সামনে। অথবা বলা ভাল ব্রাঞ্চ অফিসের ধ্বংসাবশেষের সামনে!
অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল জেসন অফিসের দিকে। হঠাৎ নজর গেল তার রায়ানের মুখে। সেখানে সে যেন ক্ষণিকের জন্য দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পেল। ইঙ্গিতে রায়ান জেসনকে নির্দেশ দিল দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে সব ঘটনা জানতে। জেসন মাথা ঝাঁকিয়ে এগিয়ে গেল পুলিশ কারগুলোর দিকে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জানাল,
-ওরা কেউই তেমন কিছু বলতে পারছে না। জাস্ট একটা ইমারজেন্সির জন্য কল পেয়ে এসে দেখে এই অবস্থা।
রায়ান হঠাৎ জেসনের কাঁধের উপর দিয়ে তাকাল। কেউ আছে বুঝতে পেরে জেসনও ঘুরে তাকাল। ওদের কাছে আসছে আপাদমস্তক ভেজা ব্ল্যাক ফাইটারের এই লস এঞ্জেলেস শাখার সহকারী প্রধান শায়খ। ওকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখে ওরা বুঝতে পারল যে শায়খ আহত। তাই জেসন এগিয়ে গেল সাহায্য করার জন্য। শায়খকে ধরে ধরে নিয়ে আসল রায়ানের সামনে। জেসন জানতে চাইল,
-আর সবাই কোথায়?
-স্যার ওরা কেউ বেঁচে নেই স্যার, সবাই মারা গিয়েছে।
-কিভাবে হল এসব?
-সম্ভবত সারফেস টু সারফেস মিসাইল ইউজ করা হয়েছে স্যার।
-খুলে বল।
-আমি স্যার আমার অফিসে বসে কাজ করছিলাম। আর সবাইও যার যার কাজ করছিল। বস আসবে সেজন্য সবাই মিলে কাজ গুছিয়ে রিপোর্ট তৈরিতে ব্যস্ত ছিল। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পিছনের বিল্ডিঙের সুইমিং পুলে বাচ্চাদের খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনলাম! তার সাথেসাথেই কোন একটা অদৃশ্য হাত যেন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ভাগ্যটা তেমন বোধহয় খারাপ না আমার, তাই নিচের সুইমিং পুলে গিয়ে পড়ি। পুলের বাচ্চাগুলো আমাকে পানি থেকে তুলে দেয়। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে আমি এদিকে চলে আসি।
-ভাগ্য সত্যিই ভাল তোমার।
এতক্ষণে মুখ দিয়ে কোন কথা বলল রায়ান।
জেসনের প্রশ্ন,
-স্যার এখন আমরা কি করব ?
-সেফ হাউজ কাছাকাছি কোনটা আছে ?
-এইতো স্যার, সামনের ব্লকেই আছে একটা। বার্ড।
-হু। এত কাছাকাছি থাকা যাবে না।
-কিন্তু স্যার অন্য সেফ হাউজটা বেশ দূরে।
-চল। আমি ড্রাইভ করছি।
ওরা এরপর গাড়িতে উঠল তিনজন। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হুঁশ হল জেসনের।স্যার আমরা তো সেফ হাউজের দিকে যাচ্ছি না! হুম। আমরা আমার পরিচিত এক বাসায় যাচ্ছি।বা সাটা সেফ কিনা এই প্রশ্ন করতে গিয়েও করল না জেসন। এজেন্ট রায়ানের উপর তার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।
কিছুক্ষণ পর একটা পরিত্যাক্ত ২তলা বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল রায়ান। গাড়িটা বাড়ির পিছনে নিয়ে এল সে। হঠাৎ যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এল ৫ জন লোক। তাদের সবার হাতেই শোভা পাচ্ছে একটি করে হেকলার এন্ড কচ। রায়ানকে চুপ থাকতে দেখে জেসনও কিছু করল না। তবে শোল্ডার হোলস্টার থেকে বেরেটা বের করে ফেলল শায়খ। হাত তুলে ওকে নিস্ক্রিয় করল রায়ান। বাইরের লোকগুলো নিরাপদ দূরত্ব থেকে গাড়ির ভিতর কে আছে দেখে নিল। রায়ানকে দেখে নড করল তারা। এরপর একজন পকেট থেকে রিমোট বের করে অপারেট করতেই মাটির কিছু অংশ গায়েব হয়ে গেল। সেখানে গাড়ি নিয়ে ঢুকে গেল রায়ান। নিচে ওটা একটা গ্যারেজ। গাড়ি পার্ক করে একপাশের একটি দেয়ালের বাতির সুইচ টিপে দিতেই একটা স্ক্যানার প্যানেল বের হল। রায়ানের হাতের প্রিন্ট পেয়ে সামনের একটি আলমারির দরজা খুলে গেল। দেখতে আলমারি মনে হলেও আসলে ওটা একটি সিকিউরিটি ডোর। এর ভিতর দিয়ে এসে ওরা প্রবেশ করল একটি সিঁড়ি ঘরে। সেখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠে সোজা মূল বাড়িতে। বাহির থেকে দেখা পোড়া বাড়িটার ভিতরের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেল জেসন আর শায়খ। ভিতরে বর্তমানের সবচেয়ে ভাল ফ্যাসিলিটি দিয়ে সাজানোগোছান একটি সেফ হাউজ এই বাড়িটা। ব্ল্যাক ফাইটারস এর হেডঅফিসে কল করে রিইনফোর্সমেন্ট পাঠাতে বলল রায়ান। এরপর সে জেসন আর শায়খকে বাড়িটা সম্পর্কে হালকা ব্রিফ করল। তারপর নিজেদের জন্য বরাদ্ধকৃত ঘরে ঘুমোতে চলে গেল সবাই। নিজের ঘরে এসে জামাকাপড় ছাড়ল রায়ান। এরপর বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো কয়েকঘণ্টা আগের কথা...
এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে রায়ান। ভিআইপি ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছিল সেসনার ল্যান্ড করার জন্য। হঠাৎ পিছনে আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকাল। ওর পিএস রিজন এসে দাঁড়িয়েছে। ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল রায়ান। রিজন বলল,
-স্যার! আপনার ফোনকল... স্পেশাল নাম্বার ৫১২ থেকে। এই নিন।
রিজন মোবাইলটা বাড়িয়ে দিতেই হাত বাড়িয়ে নিল রায়ান। বাঁধাধরা যান্ত্রিককণ্ঠে বলে উঠল,
-রায়ান! এজেন্ট রায়ান।
-রেড এলার্ট। কোড ৪৬, আই রিপিট ৪৬। ক্লিয়ার ?
সাথে সাথে রায়ানের মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেল। এই কোডের মানে ওর জীবনের উপর বড় মানের ঝুকি আছে। সামনে এগোলে সরাসরি বিপদে পড়বে। ক্লিয়ার বলে জানতে চাওয়া হল ও যাচ্ছে নাকি যাচ্ছে না।
রায়ান জবাব দিল,
-ইয়েস স্যার। আই এম গোয়িং ইন।
-বেস্ট অব লাক।
সেসনায় উঠে ল্যান্ডিং জোনে পৌঁছা পর্যন্ত ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছে রায়ান। কিন্তু প্রায় কিছুই বুঝতে পারেনি। ওর শত্রুর অভাব নেই। কিন্তু বেশ কিছুদিন তাদের কোন এক্তিভিটিও ছিল না। তাহলে কি এরা সবাই প্ল্যান করে ওকে মারার জন্য চেষ্টা করছে ??? কিন্তু এর পিছনে কোন কারণ খুঁজে পায়নি রায়ান।
তাছাড়া ওর প্রতিটি শত্রুর কাজকর্ম সম্পর্কে জানার জন্য ও কিছু দক্ষ লোক লাগিয়ে রেখেছে। তাই তারা কোন মুভমেন্ট নেওয়ার সাথে সাথেই জানার কথা রায়ানের। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই রায়ান ব্যস্ত রইল হোপস্ট্রিটে পৌঁছার আগ পর্যন্ত। সন্দেহ নেই রায়ানকে মারার জন্য কেউ ঐ এটাকটা করে। সবাই জানে রায়ানের সময়জ্ঞানের কথা। জেনারেলের ফোনকলটা না আসলে রায়ান এতক্ষনে ঐ অফিসের সাথে ছাই হয়ে যেত। আর কিছু ভাবতে পারল না রায়ান। শরীর বিশ্রাম চাইছে। শরীর ঢিল দিল রায়ান। ঘুমিয়ে পড়ল সব ভুলে। এই মুহূর্তে কেউ ওকে দেখলে কেউ বলতেই পারবে না যে ও সেই দুর্দান্ত এজেন্ট রায়ান। নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমিয়ে পড়ল ও...
সামনে রাখা ফাইল ৩টার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মিয়ান। ফাইলগুলোর মধ্যে একটি তার দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ। সামনে বসা কাদান এর দিকে ঠেলে দিল ফাইলটা। ফাইলটা পড়ল কাদান,
এজেন্ট রায়ান।
-রায়ান! সৌরভ রায়ান। পৃথিবীর সেরা ১০জন এসপিওনাজ এজেন্টদের মধ্যে একজন। সে কে ? কেউ জানে না। বলা যায় ইনভিজিবল ম্যান। কথিত আছে সে একটি পিনহীন গ্রেনেডের চেয়েও বেশী ভয়ংকর। কারও হুকুম মানতে অভ্যস্ত নয়। জীবনীশক্তিতে ভরপুর এই রহস্যময় যুবক। মৃত্যুকে সামনে পেলেও ভয় পায়না। তার লড়াই সকল অপরাধের বিরুদ্ধে। অপরাধ আর অপরাধী এর কোনটাই রায়ানকে নত করতে পারে না। প্রতিনিয়ত সে লড়ে যায় অপরাধ নির্মূলের জন্য। সে লড়াই করে সত্য, সুন্দর ও ন্যায় এর পক্ষে। কিন্তু আসলে সে কে ? সে একজন সৌরভ! তেমন কেউ না, অতি সাধারণদের মাঝে শুধুই একজন অসাধারণ...
অন্য ফাইল দুটোও একেএকে পড়ল কাদান। একটি মেজর জেসন স্ট্যালিয়ন এর। আরেকটি লেফটেন্যান্ট শায়খ রায়ান। মেজর জেসনকে এজেন্ট রায়ানের ডানহাত বলা হয়। আর লেফটেন্যান্ট শায়খ ? সে হল এজেন্ট রায়ানের আপন ছোট ভাই। এটা দেখে ভুরু কুঁচকে উঠল কাদারের। গর্জে উঠল মিয়ান,
-যাকে মারার জন্য এতো টাকা খরচ করলাম সেই বেঁচে গেল?
আন্ডারগ্রাউন্ড এর একছত্র রাজার হুংকারে কেঁপে গেল ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র।
-দোষ আপনার লোকদের। সবাই আমাকে জানিয়েছে সময়ের কোন হেরফের করে না এই লোক। অথচ পুরো আধাঘণ্টা লেট করে পৌঁছায় সে। আমার লোক তার কাজ করেছে। ঠিক টাইমে ঠিক জায়গায় আক্রমন করেছে। কিন্তু আপনার লোকেরা যে সামান্য একটা তথ্যও ভুল জানাবে সেটা কি আমি জানি ?
একদমে কথাগুলো বলে থামল কাদান।
ব্যাপারটা ২মিনিট ভেবে দেখল মিয়ান। কথা ভুল বলেনি কাদান। অবশ্য কে জানত যে এজেন্ট রায়ান জীবনের প্রথমবারের মতো দেরি এইবারেই করবে!!! ভেবেচিন্তে মুখ খুলল আবার মিয়ান,
-তুমি এখন কি কি ব্যাবস্থা নিয়েছ কাজটা শেষ করার জন্য ?
-আমার লোকেরা দিন রাত ওদের উপর নজর রাখছে।
-তারমানে ওরা কোথায় আছে জান তুমি ?
-জী জানি, আপনার লোক আমাদের জানিয়েছে।
-তাহলে সেখানে গিয়ে ওদের মেরে আসছ না কেন ?
-ওরা খুবই সিকিউরড একটা বাড়িতে আছে। শুধু ঐ বাড়িটা না! গোটা এলাকাটাই ওদের লোক পাহারা দিচ্ছে। খবর পেয়েছি পালের গোদাটা আরও লোক আনাচ্ছে পরশু।
-সর্বনাশ! আরও লোক। তোমাদের আজকেই ঝামেলা শেষ করতে হবে। যেভাবেই হোক!
-কেন ? আমাদের লোক তো কম নেই! আমরা চাইলে ওদের পুরো হেডকোয়ার্টারকেই ধ্বংস করতে পারি।
-ওদের সম্পর্কে জান না তুমি তাই এ কথা বলছ।
বিরক্ত বোধ করল কাদান। একটু ঝাঁজের সাথে বলল,
-তাহলে আপনি কি জানেন সেটাই জানান।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল মিয়ান,
-এজেন্ট রায়ান। দা লিডার অব ব্ল্যাক ফাইটারস। রায়ান কি জিনিস সেটা ও নিজেও বোধহয় জানে না। যে কাজে আজ পর্যন্ত ও হাত দিয়েছে সেই কাজেই ও জিতেছে। আর ওর টীম ব্ল্যাক ফাইটারস! ৫ বছর ধরে বাছাই ও ট্রেনিং দিয়ে একেকজন এজেন্টকে নিয়োগ দিয়েছে। ওদের প্রতিটা কাজে আছে এজেন্ট রায়ানের নজর। ওদের একজন এজেন্ট তোমার ১০জন এজেন্টের বরাবর। আর তুমি যেটা বললে যে ওরা কয়জন আর হবে! ওরা যে কতজন তার হিসেব দুনিয়ার কোথাও নেই, শুধুমাত্র ঐ রায়ানের মাথায় ছাড়া। এইবার তোমাকে বাস্তব উদাহরণ দেই, ৩ বছর পূর্বে রায়ানের এক এজেন্টকে পুলিশের লোক মনে করে আমাদের কিছু লোক ধরে আনে। যারা ধরে আনে তাদের কারই চেহারা ঠিক রাখেনি ঐ এজেন্ট। তারপরও আমাদের লোকের সংখ্যা বেশী হওয়ায় ঐ লোককে ধরে আনা যায়। এখানে আনার পর অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সবরকমের উপায়ে কথা বের করার চেষ্টা করি ওর মুখ থেকে। কিন্তু কিছুই বের করা যায়নি। ক্ষান্ত দিয়ে যখন আমার লোকেরা দম নিচ্ছিল তখন ঘটে আসল ঘটনা। রাত ঠিক বারটায় আমার মিয়ানমারের বাড়িতে আকাশ ভেঙ্গে পরে। ব্ল্যাক ফাইটারস এর ৫০ জন সদস্য নিয়ে আমার বাড়ি পুরো সাফ করে চলে যায় ঐ এজেন্ট রায়ান। পরে জানতে পারি ধরে আনা ঐ লোকটা ছিল এখনকার মেজর জেসন, রায়ানের ডান হাত। ঐ রাতে আমি জরুরি কাজে হঠাৎ অস্ট্রিয়া যাওয়ায় বেঁচে যাই। আর আমার বাড়ির ১৫০ জন অস্ত্রধারী প্রহরীকে মেরে চলে যায় ওরা। মাত্র ১ঘণ্টায়। এবার বুঝেছ তোমার কপালে কালকে কি জুটবে ?
হতভম্ব কাদান মুহূর্তেই রেডিও তুলে নিল। খেকিয়ে উঠে তার লোকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল।

সেফ হাউজ পুমা। সকাল ৮টা।
সবেমাত্র ব্রেকফাস্ট করেছে ওরা ঠিক তখনই বলল শায়খ,
-ভাইয়া আমরা বসে না থেকে একটু বের হলেও তো পারি।
-কেন ?
-না এভাবে হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে ভাল লাগছে না।
-বেশিক্ষন বসে থাকতে হবে না। একটু পরেই আমরা বের হব।
-কোথায় যাবি ?
-এফবিয়াইয়ের অফিসে।
জেসন ঢুকল এইসময়,
-কেন স্যার ?
-ওদের সাথে একটা কাজের ব্যাপারে কথা বলার ছিল। আমিই যাচ্ছি। তবে তোমরা কেউ যেতে চাইলেও সমস্যা নেই।
-নিশ্চয়ই যাব স্যার।
শায়খও মাথা ঝাঁকাল।
কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে ল্যাম্বরজিনিতে উঠল ওরা ৩ জন। বরাবরের মতো ড্রাইভ করল রায়ান। আসলে জেসন ও শায়খ খুব ভাল করেই জানে যে ল্যাম্বরজিনি রায়ান অন্য কাউকে কখনই চালাতে দেয় না। মাঝেমাঝে মনে হয় গাড়িতো না যেন ওর নিজের গার্লফ্রেন্ড। অবশ্য গাড়িটাকে ওর গার্লফ্রেন্ড বললে মাইন্ড করে না রায়ান। ওর মতে রক্তমাংসের মানবীর চেয়ে লৌহমানবীই ওর জন্য ভাল। যাইহোক, গ্যারেজ থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তা ধরে ছুটল ল্যাম্বরজিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সিকিউর জোন থেকে বের হয়ে এল। হঠাৎ পিছনে একটা গাড়িকে দেখতে পেল রায়ান। অনেক্ষণ পার হওয়ার পরেও যাচ্ছে না গাড়িটা। রায়ানের বুঝতে বাকি রইল না যে গাড়িটা ওদের পিছু নিচ্ছে। সে ধীরে ধীরে স্পীড বাড়াতে শুরু করল। ল্যাম্বরজিনির সাথে পাল্লা দিয়ে পিছনের গাড়িও স্পীড বাড়াচ্ছিল। হঠাৎ হার্ড ব্রেক করল রায়ান। পিছনের গাড়িটা এই আকস্মিক ব্রেকের কারণে পাশ দিয়ে ঝড়ের গতিতে বের হয়ে গেল। এবার রায়ান আবার স্পীডে তুলল গাড়িকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনের বেন্টলি গাড়িটার ৫০ গজের মধ্যে পৌঁছে গেল। শোল্ডার হোলস্টার থেকে এফএন ফাইভসেভেনটা ডান হাতে নিল রায়ান। ধীরেসুস্থে হাতটা বাহিরে বের করে প্রথম গুলিটা করল বেন্টলির ডানপাশের পিছনের চাকায়। এরপর বাম হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ডান হাতটা আরেকটু বামে নিয়ে আরেকটি গুলি করে বেন্টলির বাম সাইডের সামনের চাকাটাও অকেজো করে দিল। বাধ্য হয়ে বেন্টলি থেমে দাঁড়াল। উদ্যত পিস্তল হাতে বের হতে চাইল জেসন। কিন্তু নিষেধ করল রায়ান। নিজের গাড়িটা পিছিয়ে নিয়ে বেন্টলির সামনে চলে এল। বেন্টলির চারজন আরহী সরাসরি সাইটে পেয়ে গুলি করল ওর দিকে। কিন্তু ল্যাম্বরজিনির বুলেটপ্রুফ কাঁচ ঠেকিয়ে দিল ওদের গুলি। এবার রায়ানের পালা। বেন্টলির সামনের বাম্পারে ল্যাম্বরজিনির বাম্পার ঠেকিয়ে ঠেলে পিছনের খাদের কিনারে নিয়ে গেল। একদম কিনারে পৌঁছার পর বেন্টলির চারজনের চিত্‍কারে কথা বলা অসম্ভব হয়ে উঠল। এবার সব কিছু ছাপিয়ে হুংকার করে উঠল রায়ান। সবাই চুপ হওয়ার পর অর্ডার দিল অস্ত্র গাড়িতে রেখে একে একে বের হয়ে আসার জন্য। বলাই বাহুল্য যে নির্দেশ পালন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করল না চারজনের একজনও। এবার জেসনকে বের হওয়ার অনুমতি দিল রায়ান। জেসন ওর ওয়ালথার পিপিকে নিয়ে কাভার দিল রায়ানকে। রায়ান দ্রুত চারজনকে সার্চ করল। একজনের কাছ থেকে একটা পকেট নাইফ পাওয়া গেল শুধু। এবার প্রশ্নের পালা। রায়ান বলল,
-দুমিনিট সময় দেওয়া হল তোমাদের। এরপর সব কথা খুলে বলবে আমাকে। একটা মিথ্যা কথা বললেই আমি বুঝতে পারব এবং তখন আমি ওকে বলব গুলি করতে। (জেসনকে দেখাল) সময় শুরু।
ঘুরে তাকিয়ে কে কোন পজিশনে আছে দেখল রায়ান। জেসন অনঢ় হয়ে ওয়ালথার হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর রাস্তায় একটি পাথরের আড়ালে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে নজর রাখছে শায়খ। এবার বলল ও,
-সময় শেষ। প্রথমে তুমি বলো।
যাকে প্রশ্ন করেছে ও সে মাঝারি সাইজের শক্তপোক্ত মানুষ। দেখেই বোঝা যায় লিডার গোছের কেউ। তাই ওকেই প্রথম প্রশ্ন করল।
লোকটা এক সেকেন্ডের জন্য চুপ থাকল। এরপর বলল,
-আমরা কিছু জানি না। আমাদের শুধু টাকা দেওয়া হয়েছে আপনাদের মারার জন্য...
এক হাত তুলল রায়ান। সাথে সাথে জেসনের গুলি প্রথম লোকটার কাঁধের মাংস ফুটো করে বেরিয়ে গেল।
ব্যথায় কাঁধ চেপে ধরে বসে পড়ল ঐ লোক। এরপর ২য় জনের পালা। সে প্রথম জনের মতো ভুল করল না। গড়গড় করে সব বলে গেল। মাঝেমাঝে তাকে সাহায্য করল অন্য ২জন। এরপর অন্য ২জনকে কিছু প্রশ্ন করে প্রকৃত ঘটনাটা বুঝতে পারল রায়ান তা হলঃ ওকে মারার জন্য সেই ৩ বছর আগের সেই আস্তানা ধংস করা আন্ডারগ্রাউন্ড ডন উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য সে ইতালির কুখ্যাত খুনে কাদানকে ভাড়া করেছে। কাদানের ফাইলটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। কাদানের নাম শুনেনি এমন লোক এসপিওনাজ জগতে নেই। ওর নামে প্রতিটা দেশে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে। কাদানের একটা দুর্বল দিক হল ওর দূরদৃষ্টি নেই বললেই চলে, এছাড়া অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও। বন্দীদের কথা মতো ২ মাইল দূরে ওদেরকে ধরার জন্য অপেক্ষা করছে কাদানের লোকেরা। আর কাদানের হেডকোয়ার্টার ঐ এমবুশ পার হয়ে আরও ৩ মাইল দূরে। চুপচাপ একটা সিগারেট জ্বালিয়ে রায়ান খাদের পারে বসে ভাবল ৫ মিনিট। এরপর জেসনকে ওদের পাহারা দিতে বলে চলে এল শায়খের কাছে। বলল,
-তোর না ঐ ৩ বছর আগে ফিক্সড করা ডনের উপর নজর রাখার কথা ?
-এতো কাজের মধ্যে কত নজর রাখব! শিহাবকে বলেছিলাম। কিন্তু ব্রাঞ্চ অফিসে ও মারা গিয়েছে।
-হুম। তোকে এখন ফিরে যেতে হবে।
-কেন ? কি ব্যাপার ?
ওকে সব খুলে বলল রায়ান। শুনে ভীষণভাবে চমকে গেল শায়খ। তবে যেতে চাইল না। কিন্তু রায়ান ওকে একরকম প্রায় জোর করেই পাঠিয়ে দিল। বলল,
-রিইনফোর্সমেন্ট আসলে ওদের সব বুঝাতে হবে তো।
এই যুক্তি দিয়ে ওকে সেফ হাউজে আবার পাঠিয়ে দিল রায়ান। ও বন্দীদের সহ বেন্টলি নিয়ে চলে যেতেই জেসনের সাথে আলোচনা করে একটা প্ল্যান তৈরি করল রায়ান।
রায়ানের ল্যাম্বরজিনি অ্যাভেন্টাডোর এল পি সেভেন হান্ড্রেড শুধু মাত্র একটি ভালমানের গাড়িই নয়। ব্ল্যাক ফাইটারস এর টেকনিক্যাল ব্রাঞ্চ এটার নানান রকমের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ফলে এর সাহায্যে এখন আরও অনেক কিছু করা যায়। এটাকে সম্পূর্ণভাবে রিমোটের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায়। গাড়ির বুটটা শুধু একটা বুট নয় , ছোট খাটো একটা অস্ত্রাগার । হালকা অস্ত্র থেকে আর পি জি পর্যন্ত আছে এবং এমনভাবে এগুলো লুকান আছে যে না জানলে গাড়ি ভাঙ্গা ছাড়া কেউ এসব বের করতে পারবে না। আর জানা থাকলে ২সেকেন্ডও লাগবে না। এছাড়া গাড়ির সামনের হেডলাইটের পাশে সুক্ষভাবে ফিটিং করা আছে ২টো মোশনগান। এছাড়া আরও কিছু সিস্টেম আছে। সব মিলিয়ে এটি বর্তমান বিশ্বের একটি অত্যন্ত ভয়ানক আবিস্কার।
বরাবরের মতো ড্রাইভ করছে রায়ান। গন্তব্যস্থলের একটু আগে নামিয়ে দিল ও জেসনকে। ডানদিক দিয়ে শত্রুদের পিছনে যেতে লাগল জেসন, আর বামদিক দিয়ে রায়ান। ২ জনেই নিজেদের পজিশনে পৌঁছার পর রায়ান ল্যাম্বরজিনির রিমোট নিয়ে কাজ শুরু করল।
এমবুশে অতর্কিতে হামলা চালাল ল্যাম্বরজিনি। সামনের হেডলাইটের পাশের মোশন গানগুলো থেকে অবিরাম গুলি বর্ষণ করল রায়ানের গার্লফ্রেন্ড। দ্রুত শত্রুর সকল বাঁধা অতিক্রম করে ছুটে আসছে ল্যাম্বরজিনি। রায়ানের মুখ থেকে অস্ফুস্টে বের হল,“কাম অন বেইবি, কাম অন!” ফাইনাল টাচ হিসেবে লাস্ট ব্যারিকেডটা ভেঙ্গে ফেলল। এরপর ল্যাম্বরজিনির অটোম্যাটিক ফায়ার অন করে পিছন থেকে হেকলার এন্ড কচ নিয়ে শত্রুদের উপর চড়াও হল রায়ান-জেসন। দেখতে দেখতে রাস্তা পুরো খালি করে ফেলল ওরা। এরপর ল্যাম্বরজিনিতে উঠে পরবর্তী লোকেশনের দিকে ছুটল ওরা। বাড়িটা গোস্ট লেনে। চারপাশে অস্ত্রধারী প্রহরীরা পাহারা দিচ্ছে। দুর থেকে বিনকিউলার দিয়ে এসব দেখছে জেসন। ইতোমধ্যেই রায়ানের দেখা হয়েছে। বাড়িটায় ঢুকার জন্য ও যে প্ল্যানটা বলল তা জেসনের পছন্দ হল না, তবে তার চেয়ে ভাল যুক্তি খুঁজেও পেল না ও। ল্যাম্বরজিনির অটোম্যাটিক মোশন ফায়ারিং অপশনটা আবার ব্যবহার করল রায়ান। ঘণ্টায় ১২০ মাইল গতিতে উড়ে চলল ল্যাম্বরজিনি রায়ানের অভিজ্ঞ হাতের ছোঁয়ায়। গেটের পিছনে ২ জন প্রহরি ছিল। তারা হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ পেয়ে দরজার ছোট কুঠুরি খুলে উঁকি দিল। তাদের একজন তখনই মারা গেল মোশন ফায়ারিং এর কারনে। অপরজনকে সহ বিশাল দরজাটা মাটিতে মিশিয়ে দিল ল্যাম্বরজিনি। দরজাটা ভূপাতিত হওয়ার সাথেসাথেই উদ্যত এম১৬এ২ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল রায়ান-জেসন। একদিকে ল্যাম্বরজিনির মোশন ফায়ার, অপর দিকে এম১৬এ২ এর আক্রমনে শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। ২০মিটার উচু এক বারান্দা থেকে ৫জন সোলজার অবিরাম গুলি ছুঁড়ছে ওদের দিকে, তাই ওরা সামনে এগুতে পারছে না। হঠাৎ তাদের একজনের হাতে একটা রকেট লঞ্চার দেখা গেল। সে লঞ্চারটা দিয়ে ল্যাম্বরজিনিকে টার্গেট করছিল। তা দেখে রায়ানের মাথা খারাপ হওয়ার দশা। এতো ঝামেলার মাঝেও রায়ানের অবস্থা দেখে হেসে ফেলল জেসন। বলল,
-বস ছেড়ে দিন, আরেকটা না হয় কিনে নিবেন। গাড়িই তো একটা।
অগ্নিদৃষ্টি হানল ওর দিকে রায়ান। তবে কিছু বলার সময় নেই কারণ উপরের রকেট লঞ্চারধারী লোকটা ল্যাম্বরজিনিকে লক করতে পেরেছে। এক সেকেন্ডও দ্বিধা না করে লাফ দিল রায়ান। ল্যাম্বরজিনির আড়ালে পৌঁছেই এম১৬এ২ এর গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে ফায়ার করল উপরের বারান্দার দিকে। মুহূর্তেই উপরের বারান্দা জ্যান্ত প্রাণীহীন হয়ে গেল। ইতোমধ্যে জেসনের গুলিতে প্রান হারাল আরও ৫ জন শত্রু। এবার ওরা ২ জন হাজির হল বাড়ির সামনের দরজার সামনে। শত্রুরা স্বাভাবিকভাবেই ভেবেছিল যে ওরা পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকবে। তাই সবাই পিছনের দরজা কাভার করে বসেছিল। সামনের দরজার পিছনে ছিল মাত্র ৩ জন। রায়ান এক ধাক্কায় দরজাটা ভেঙ্গে ফেলল আর জেসন গুলি করতেকরতে ভিতরে ঢুকল। জেসনের গুলিতে প্রান হারাল দরজার পাশের ২ জন। অপরজন নাকের উপর রায়ানের শক্ত হাতের বেমক্কা একটি ঘুসি খেয়ে জ্ঞান হারাল। এরপর ২ জনে একএক করে পিছনের ঘরে থাকা প্রত্যেকটা শত্রুর প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া করিয়ে ছাড়ল। এবার নিচতলা ভাল মতো সার্চ করল ২ জন। কিন্তু আর কাউকে পেলনা। তখন রায়ান বলল,
-তুমি নিচে থেকে বাহিরটা কাভার দাও। যদি কোন রকমে ওদের রিইনফোর্সমেন্ট এসে বাধাহীনভাবে ভিতরে ঢুকে যেতে পারে তাহলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।
ওকে আশ্বস্ত করল জেসন,
-আপনি নিশ্চিন্তে যান স্যার! আমার প্রান থাকতে ওদের কেউ এই দরজা অতিক্রম করতে পারবে না।
ওর কাঁধে মৃদু চাপড় দিয়ে সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে ২তলায় উঠতে শুরু করল রায়ান।
সিঁড়ির উপরের ধাপে ৫ জন শত্রু পাহারা দিচ্ছিল। রায়ানের মাথা সিঁড়িতে দেখা যাওয়ার সাথে সাথে ওরা গুলি শুরু করল। নিতান্ত ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়ে পিছিয়ে এল রায়ান। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যই সেই পিছিয়ে আশা। এরপর গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে আরেকটা গ্রেনেড ছুঁড়তেই পোড়া মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। সিঁড়িটা খালি হয়ে যেতেই ২ তলায় উঠে গেল রায়ান। দেখা গেল ২ তলা পুরো খালি। হঠাৎ এককোণ থেকে একটা ছায়া নড়ে উঠেই গুলি করল রায়ানের দিকে। গুলিটা রায়ানের বামকাঁধের মাংস ফুটো করে বেরিয়ে গেল। প্রচণ্ড ব্যাথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ৫ হাত দূরের একটা আলমারির পিছনের কাভারে পৌঁছানর জন্য লাফ দিল রায়ান। সেই মুহূর্তেই ২য় গুলিটা ছুঁড়ল অজ্ঞাত আততায়ী। গুলিটা এক মুহূর্ত আগে রায়ান যেখানে ছিল ঠিক সেখান দিয়ে গেল। বামহাতে কোন সাড়া পাচ্ছে না রায়ান। আর এক হাতে এম১৬এ২ চালানর কাজ সিনেমায় দেখা গেলেও বাস্তবে সম্ভব না। তাই এম১৬এ২ পাশে রেখে শোল্ডার হোলস্টার থেকে এফএন ফাইভসেভেনটা ডান হাতে নিল রায়ান। ধীরেসুস্থে হাতটা আলমারির আড়াল থেকে বের করে আততায়ীর উদ্দেশে গুলি ছুঁড়ল। কিন্তু আততায়ীর গুলির পাল্টা জবাব শুনে বুঝতে পারল যে সে ইতোমধ্যেই জায়গা পরিবর্তন করেছে। রায়ান বুঝল এভাবে কাজ হবে না। সে কিছু একটা জিনিসের জন্য আশেপাশে তাকাল। আলমারির ভিতর একটা পুতুল দেখতে পেয়ে তুলে নিল। বড় করে এবার একটা দম নিল। অ্যামুনিশন ব্যাগ থেকে নতুন একটি ম্যাগ বের করে রিলোড করল এফএন ফাইভসেভেন। এবার বামহাতের শেষ শক্তিটা ব্যবহার করে পুতুলটাকে ছুঁড়ে দিল ঘরের আরেক মাথায়। হাতের বাথায় তার মনে হল মাটি ফুঁড়ে ঢুকে যেতে, কিন্তু এক মুহূর্তও দেরি না করে আলমারির আড়াল থেকে লাফ দিয়ে পুতুলটাকে অনুসরণ করল। আততায়ী ওর টোপ গিলল। পুতুলটাকে রায়ান মনে করে গুলি করল, আর রায়ান বিন্দু মাত্র দেরি না করে মাজল ফ্ল্যাশ লক্ষ করে বিরতিহীনভাবে ৩টে গুলি করল। আততায়ীর চিৎকার শুনে বুঝতে পারল ৩টে গুলিই লক্ষভেদ করেছে। এবার উদ্যত পিস্তল হাতে সতর্কভাবে লোকটার কাছে পৌঁছে গেল রায়ান। লোকটা আর কেউ নয়। সেই ভয়ংকর খুনি কাদান। ৩টে গুলির ২টো কাদানের হাতে ঢুকেছে আরেকটা কাঁধে। যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছে সে। রায়ান ঝামেলা খতম করার জন্য পিস্তল তুলল। কিন্তু প্রান ভিক্ষা করে বলল কাদান,
-দেখ আমাকে ছেড়ে দাও। আমার অনেক টাকা আছে। সব তোমায় দিয়ে দেব।
জবাবে পিস্তলের বোল্ট টানল রায়ান। আঁতকে উঠে দ্রুত বলল কাদান,
-আমার কাছে আন্ডারগ্রাউন্ডের ডনের ঠিকানা আছে। আমি তোমাকে সেটা দিয়ে দেব।
দ্বিধা করতে লাগলো রায়ান। তা দেখে দ্রুত বলল কাদান,
-আমার কাছে আরও খবর আছে। আমি জানি কে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি জানি কে তোমার আসার খবর ডনকে দিয়েছে, আমি এটাও জানি কে তোমাদের প্রতিটি মুভমেন্ট সম্পর্কে খবর দিয়েছে ডনকে।
গম্ভীর স্বরে জানতে চাইল রায়ান,
-কে ?
বোমাটা ফাটাল কাদান,
-লেফটেন্যান্ট শায়খ। তোমার নিজের আপন ভাই।
রায়ানের চেহারা দেখে মনে হল ও কিছুই শুনতে পায়নি কিন্তু ভেতরে সে পুরো দুমরেমুচড়ে যাচ্ছে। তারপরও বলল,
-কি প্রমান আছে তোমার কাছে ?
-প্রমান তোমার ভাইকে সার্চ করলেই পাবে। ওর সাথে একের অধিক হোমিং ডিভাইস আছে। এছাড়াও আছে একটা লং ডিস্টেনস কমুনিকেশন সিস্টেম। যার মাধ্যমে ও সরাসরি ডনের সাথে কথা বলতে পারে।
-কিন্তু কেন ও একাজ করল ?
-আমি অত কিছু জানি না। আমি শুধু জানি ওকে ডন মিয়ান অনেক টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্যাস সব কথা জানালাম আমি। এবার আমাকে ছেড়ে দাও।
আকুতি নিয়ে চাইল সে রায়ানের দিকে। কিন্তু রায়ান আর দেরি করল না। বলল,
-থ্যাংকস ফর দিস ইনফরমেশনস। নাউ ইউ ক্যান গো টু হেল।
একটা গুলি কাদানের ২ চোখের মাঝে স্থান করে নিল।
এরপর নিচে নেমে জেসনকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠল রায়ান। যাওয়ার পথে দরজার পাশে অজ্ঞান লোকটার জ্ঞান ফিরেছে দেখতে পেয়ে ওকেও একটা বুলেট উপহার দিয়ে গেল। কিছুক্ষন আগের শত্রুতে ভরা বিপজ্জনক বাড়িটাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে বের হয়ে গেল রায়ান-জেসন। ঝড়ের গতিতে কঠোর মুখে গাড়ি চালাল রায়ান। বসের এই চেহারা আগে কখনও দেখতে পায়নি জেসন। তাই ভয় পেয়ে সে নিজেও টুঁ শব্দ করল না। সেফ হাউজে পৌঁছে জেসন আর শায়খকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে এল। জেসনকে নির্দেশ দিল রায়ান শায়খকে সার্চ করার জন্য। শায়খ প্রতিবাদ করতে চাইল, কিন্তু শুনল না রায়ান। বরং এফএন ফাইভসেভেনটা হাতে নিয়ে নিল। বামহাতের ক্ষতের কথা ততক্ষনে সে ভুলেই গেছে। শায়খের কাছ থেকে ২টো হোমিং ডিভাইস আর লং রেঞ্জের ইয়ারপিস পাওয়া গেল। জেসন সরে আসতেই শায়খকে কাতর স্বরে শুধু একটা প্রশ্ন করল রায়ান,
-কেন শায়খ ? কেন ?
শায়খ তখন আর সেই ভাল মানুষ, রায়ানের আদরের ছোট ভাই শায়খ নেই। ওর চোখে ফুটে উঠেছে বন্যতা। গর্জে উঠল,
-কেন আবার। বাঁচতে হলে টাকা লাগে! তোর মতো এভাবে ছোটলোকের মতো বাঁচা আমার সাজে না। জীবনের ঝুঁকি নেওয়াও আমার পোষায় না।
-আমি কি তোকে কখনও বলেছিলাম ব্ল্যাক ফাইটারস এ ঢুকতে ? নাকি বলেছিলাম আর্মিতে ঢুকতে ? তুই যা করেছিস সম্পূর্ণ তোর নিজের ইচ্ছায় করেছিস। তাহলে কেন তুই আমার সাথে এভাবে বিশ্বাসঘাতকটা করলি ?
-টাকা! শুধু মাত্র টাকার জন্য। কম পরিশ্রমে বেশী টাকা উপার্জনের এরচেয়ে ভাল উপায় আর কি হতে পারে ? মিয়ান আমাকে প্রস্তাব দেয় আর আমি সেটা গ্রহন করি। সেটাই হল কথা। আর তুই না থাকলে কি হবে ? তোর ভাগের সম্পত্তিগুলোও আমি পেতাম। মানি ইজ এভ্রিথিং। অ্যান্ড ইউ ডোন্ট নো এ শিট এবাউট দিজ।
নিজেকে প্রস্তুত করে নিল রায়ান। অস্বাভাবিক শান্ত আর শীতল স্বরে বলল,
-লেফটেন্যান্ট শায়খ রায়ান। তুমি বিশ্বাসঘাতকতা, ৩০জন এজেন্টের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তোমার ভুলের কারনে নিষ্পাপ ৩০জন যোগ্য এজেন্ট মারা গিয়েছে। তোমার কোন অধিকার নেই বেঁচে থাকার।
এফএন ফাইভসেভেন তুলল রায়ান। কি ঘটতে যাচ্ছে টের পেয়ে ভয়ার্ত গলায় চেঁচিয়ে উঠল শায়খ!
-না ভাইয়া! না!
মুহূর্তের জন্য সৌরভের চোখে ভেসে উঠল তার কোলেপিঠে করে মানুষ করা ছোটভাই শায়খের চেহারা। কিন্তু পর মুহূর্তেই মনে পড়ল ছাই হয়ে যাওয়া লস এঞ্জেলেসের অফিস এবং ৩০জন এজেন্টের মৃত্যুর মর্মান্তিক মৃত্যু।
শীতল স্বরে বলল সে,
-আমি তোমার ভাই নই। আমি রায়ান, এজেন্ট রায়ান।
এফএন ফাইভসেভেনের ট্রিগারে চেপে বসল এজেন্ট রায়ানের আঙ্গুল। আর পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেল শায়খের নাম। মুছে গেল একটি বিশ্বাসঘাতকের প্রান। তবে সৌরভ রায়ানের মন থেকে তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম কেউ মুছে দিতে পারবে না।
বেশ কিছুদিন পরের কথা। আকাশে নিজের প্রাইভেট বিমান বোইং ৭৪৭এ চড়ে ম্যাকাও যাচ্ছে ডন মিয়ান। হঠাৎ তার সামনে রাখা ইয়ারপিস খড়খড় করে উঠল। একটু অবাক হল সে। ঐ ইয়ারপিসটা ওয়ান ওয়ে কমুনিকেশন সিস্টেম। আরেকটা ইয়ারপিস আছে লেফটেন্যান্ট শায়খ রায়ানের কাছে। কিন্তু তার লোকেরা তো জানিয়েছে যে শায়খ খুন হয়েছে! তাহলে কি খবর ভুল!!! ইয়ারপিসটা কানে লাগাল মিয়ান। শীতল একটা কণ্ঠ ভেসে এল...“এবার তোমার পালা।”
ভয় পেয়ে বাহিরের বডিগার্ডদের কামরায় গেল মিয়ান। সেখানে দেখল তার বডিগার্ডদের মৃতদেহ। ভয়ানক ঘাবড়ে গিয়ে তার নিজের কামরায় দৌড়ে ঢুকে দরজা লাগাল মিয়ান। এরপর তার চেয়ারের দিকে ঘুরেই জমে গেল। স্বশরীরে সেখানে বসে আছে এজেন্ট সৌরভ রায়ান। বলাই বাহুল্য, রায়ানের হাতে শোভা পাচ্ছে ওর প্রিয় এফএন ফাইভসেভেন। যদিও পরিচয় জানে তবুও মিয়ানের মুখ থেকে বেরিয়ে এল,
-কে তুমি ?
-রায়ান, এজেন্ট রায়ান।
গর্জে উঠল এফএন ফাইভসেভেন।
কিছুক্ষণ পর বোইং ৭৪৭ থেকে জাম্প করল একজন লোক। কিছুক্ষনের মধ্যেই মাটিতে তার প্রিয় ল্যাম্বরজিনি অ্যাভেন্টাডোর এল পি সেভেন হান্ড্রেডের পাশে নামল সে আর আকাশে বিধ্বস্ত হল একটি বোইং ৭৪৭। মুছে গেল পৃথিবীর ইতিহাস থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের একছত্রপতি ডন মিয়ানের নাম।
ধীরেসুস্থে ল্যাম্বরজিনি স্টার্ট দিল আগন্তুক। ছুটে চলল অজানার উদ্দেশে...

***...ছোটবেলায় প্রথম গল্প লেখা শুরু করি বলা যায় ডিটেকটিভ গল্প লিখেই। আজ আবার ফিরে এলাম সেই লাইনে, সেই ধাচে। গল্পটা উৎসর্গ করলাম আমার প্রিয় সৌরভ ভাইজানকে। যিনি সার্বিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন এটার ব্যাপারে। এই প্রথম আমার নিজের একটা গল্প ভাল লাগলো। আপনারাও প্লিজ জানাবেন কেমন লাগলো। ভুলভ্রান্তি হলে সেগুলোও দেখিয়ে দেবেন প্লিজ...***
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিদ্যা যদি অন্তরে ধারণ করা না যায় তবে সেটা কোনো কাজে আসে না।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৮


ঘটনাটি যেন দুঃস্বপ্নের চেয়েও নির্মম। ধর্মের পথপ্রদর্শক একজন ইমাম, যার কাজ মানুষকে সহনশীলতা, দয়া ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেওয়া — তিনি নিজেই স্ত্রীর সামান্য বাকবিতণ্ডায় মত্ত হয়ে উঠলেন হত্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কবি দাউদ হায়দার আর নেই

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৫






‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৩ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপার্থিব ইচ্ছেরা (তসলিমার “কারো কারো জন্য” থেকে অনুপ্রাণিত)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


কেন যে, কেন যে হঠাৎ
কোন নাম না জানা ভোরে
কারো মুখ খুব মনে পড়ে,
মনে পরে অকারণ স্পর্শের,
কাছে বসার এক তিব্র বাসনার।

কতটা পথ, কতটা জীবন বাকি,
তারপরও,
অচেনা হাসি মনে হয় বড্ড চেনা,
অচেনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

---প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৪৫---(কন্যার প্রথম বই এর প্রচ্ছেদ আঁকা)

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭







আব্বু আমার নতুন রং লাগবে ?


কেন ?

রং শেষ।

আর কিনে দিব না, তুমি শুধু শুধু নষ্ট করো।

আমি শুধু নষ্ট করি ..............। তাহলে এই দেখেন ? অফিস... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে নারীর মর্যাদা (পর্ব :৪)

লিখেছেন আরোগ্য, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩

বিবাহ



বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীকে কখনো পশুর পালের সাথে তুলনা করা হত আবার কখনো পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করা হত। যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×