আল্লাহপাক বণী ইসরাঈলের জন্য নবী-রাসুল ছাড়া অন্য কোন আলাদা রাজা-বাদশার ব্যবস্হা করতেন না । এমনকি তারা মিশর, সিরিয়া, কেনান, ফিলিস্তিন, জর্দানের বিভিন্ন যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াতেন । তাদের জন্য নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের ব্যবস্হা হলেও আবার তাদেরই কর্মফলে তারা সেখান থেকে বিতাড়িত হতেন ।
হযরত শামভীল (আঃ) নবুয়ত পাবার পর তিনি তাদের ঈমান ও আমলকে সংশোধনের উদ্যোগ নিলেন ।তাদেরকে এক আল্লাহ , তার নবী ও পরকালে বিশ্বাসী করে তুললেন । কিন্তু আমলেকা সম্প্রদায় সুযোগ পেলেই লুটপাট করতো । বণী ইসরাঈলীরা নবীর নিকট আবেদন করল, তিনি যেন তাদের জন্য একজন আলাদা বাদশাহের ব্যাপারে আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করেন । আল্লাহপাকের পবিত্র কোরআনের ভাষায় ,"যখন তারা নবীকে বললো, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নিয়োগ করুন, যার সাথে থেকে আমরা আল্লাহপাকের পথে যুদ্ধ করতে পারি ।(হযরত শামভীল (আঃ) বলেন, তোমাদের সম্পর্কে এ ধারণা রয়েছে যে, যদি তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করে দেয়া হয়, তখন তোমরা যুদ্ধ করতে চাইবেনা । তারা এ কথা মানতে পারে নি ।) তারা বলেছেন,'আমাদের কি হলো যে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবনা অথচ আমাদের ঘর-বাড়ি থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে এবং আমাদের সন্তানাদি থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে ।" (সূরা বাকারা)
ওদের কাকুতি মিনতি ও ওয়াদার পর হযরত শামভীল (আঃ) আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে দোয়া করলেন । আল্লাহ দোয়া কবুল করলেন এবং নবীকে জানানো হল যে, তালুত নামে একজন গরীব আলেমকে তাদের বাদশাহ নিয়োগ করা হয়েছে । তালুত ছিলেন ইউসুফ (আঃ) এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা বনি ইয়ামিনের বংশধর । কুরআনে আছে, "তাদের নবী তাদেরকে বলেন যে, আল্লাহপাক তালুতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ নিযুক্ত করেছেন । তারা বললো, আমাদের উপর তার রাজত্ব করার অধিকার কিভাবে থাকতে পারে ? তার চেয়ে আমরাই রাজত্বের বেশী হকদার । তাকে তো আর্থিক স্বচ্ছলতাও প্রদান করা হয়নি ।" (সূরা-বাকারা)
এতদিন বাদশাহী-সর্দারী করতেন ইউসুফ (আঃ) এর ভাই ইয়াহুদার বংশের লোক । তারাই ধনবান ছিলেন । তারা মনে করে যার ধনসম্পদ আছে সেই সবাইকে সামলে রাখতে পারে । বণি ইয়ামিনের লোক বাদশাহ হবে এটা তারা কিছুতেই মানতে নারাজ ।প্রতিবাদের মুখে হযরত শামভীল (আঃ) বললেন, আল্লাহপাক তোমাদের মঙ্গলের জন্যই বাদশাহ নিয়োগ করেছেন ।আল্লাহর চেয়ে তোমাদের মঙ্গলের কথা আর কে ভাল জানে ? আল্লাহর নির্বাচিত ব্যাক্তিই উপযুক্ত । রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সুঠাম দেহ ও জ্ঞান । জ্ঞান ও বুদ্ধিতে তালুত ছিল সবার উপরে ।
বণী ইসরাঈলীদের স্বভাবজাত দোষ আছে । এবারও একই আচরণ করলো তারা । বললো, আপনি বললেই তো হবে না তালুত যে আল্লাহর নিয়োগপ্রাপ্ত, সেটা বোঝানোর জন্য আমারা নিদর্শন দেখতে চাই । হযরত শামভীল (আঃ) বললেন, ঠিক আছে । কুরআনে এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, "তাদের নবী তাদেরকে বলেন, তার বাদশাহ হবার নিদর্শন হলো যে, তোমাদের কাছে সিন্দুকটি আসবে, যাতে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সান্ত্বনার বস্তু রয়েছে এবং মুসা ও হারুণের বংশধররা পরিত্যাগ করে গিয়েছে এমন কিছু উদ্বৃত্ত বস্ত রয়েছে । এ সিন্দুকটি ফেরেশ্তারা বহন করে আনবে । এতে তোমাদের জন্য পূর্ণ নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও ।" (সূরা বাকারা -১৪৮)
এই সিন্দুক মূসা (আঃ) ও হারূণ (আঃ) এর । তারা বিজয়ের জন্য এটা সামনে রেখে যুদ্ধ করতেন । এটা বণী ইসরাঈলীদের হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছিলো । ফলে তারা মারের পর মার খাচ্ছিলো । জালেম বাদশাহ জালুত তাদের এই সিন্দুকটি নিয়ে গিয়ে ফিলিস্তিনে তার মন্দিরে মূর্তির সাথে রেখেছিলো । এই সিন্দুকে আছে মূসা (আঃ) এর লাঠি ও মূসা ও হারুণ (আঃ) এর পাগড়ী, জুতা ও পোষাক । তৌরাত গ্রন্হের লিখিত দুটি তখতি , কিছু টুকরা । আল্লাহপাক এই সিন্দুকের বরকতে সব সময় বণী ইসরাঈলীদের বিজয় দান করতেন ।
সকালে জালুতের পূজারীরা মন্দির খুলেই দেখতে পেলো তাদের সব প্রতিমা উল্টে আছে । তারা আবার ঠিক করে । কিন্তু প্রতিদিন প্রতিরাত এ ঘটনা ঘটতে থাকে । তখন এই সিন্দুক নিয়ে তাদের সন্দেহ হয় । এদিকে ফিলিস্তিনে হঠাৎ ইদুরের মহা উৎপাত শুরু হয় । ফিলিস্তিনের সব খাদ্য ইদুর শেষ করে দিতে থাকে । শরীরে দেখা দেয় বিষ ফোড়া । এ রোগ
মহামারী আকারে ফিলিস্তিনে ছড়িয়ে পড়ে । পাচটি শহরই জনশুন্য হয়ে যায় ।সবাই বলতে থাকে পূজা ঘরে সিন্দুক থাকায় এই অবস্হা । বাদশাহ জালুত গণকদের দরবারে ডাকলো । বললো , সমাধান কি ? জোতিষিরা বললো , এই সিন্দুক যত তাড়াতাড়ি শহর থেকে বের করে দিতে হবে । ৭টি স্বর্ণের ইদুর ও ফোড়া তৈরী করে সিন্দুকের উপর রেখে দুটো দুধেল গাভী দিয়ে টেনে এটা দেশের বাইরের দিকে পথে নামিয়ে দিতে হবে । এবার যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক, দেশ বিপদমুক্ত হবে ।
চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৪১